বামুনের চাঁদে হাত
মনোজকুমার দ. গিরিশ
মণীশ পার্ক, কোলকাতা
মোট ৬টি পর্ব
৬টির
পর্ব-১
কে শোনে এ আত্মকাহিনি?
নিজের ‘গুণকথা’ প্রচার করতে কার না ভালো লাগে!
তবে এসব প্রচারের একটা কারণ আছে,‘কম্পিউটার-অশিক্ষিত’
একটা লোক কেমন করে
গুঁতিয়ে--গুঁতিয়ে--গুঁতিয়ে শেষ অবধি একটা
বাংলা ইউনিকোড ফন্ট বানিয়ে ফেলল,
নিজের ‘গুণকথা’ প্রচার করতে কার না ভালো লাগে!
তবে এসব প্রচারের একটা কারণ আছে,‘কম্পিউটার-অশিক্ষিত’
একটা লোক কেমন করে
গুঁতিয়ে--গুঁতিয়ে--গুঁতিয়ে শেষ অবধি একটা
বাংলা ইউনিকোড ফন্ট বানিয়ে ফেলল,
সে কথা শুনলে অন্যেরা উৎসাহ পাবেন,
বুঝবেন চেষ্টায় শেষ অবধি বেশ কিছু কাজ করা যায়
বুঝবেন চেষ্টায় শেষ অবধি বেশ কিছু কাজ করা যায়
তাই তাঁরাও তাঁদের শুভেচ্ছা পূরণের জন্য চেষ্টা করে যাবেন
নিষ্ঠা থাকলে শেষ অবধি হবে, হবেই
নিষ্ঠা থাকলে শেষ অবধি হবে, হবেই
আমার এক প্রয়াত বন্ধু, আমার চেয়ে অনেক বেশি বয়স ছিল তাঁর
(ডি আর দত্ত-- দেবকীরঞ্জন দত্ত),
তিনি একাধিক উদ্ভাবন করেছেন,
তিনি বলতেন, সাফল্যের কাহিনি নয়,
(ডি আর দত্ত-- দেবকীরঞ্জন দত্ত),
তিনি একাধিক উদ্ভাবন করেছেন,
তিনি বলতেন, সাফল্যের কাহিনি নয়,
ব্যর্থতার কাহিনিই হল পথ অনুসন্ধানের সঠিক দিশা
লেখাটি ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’AhanLipi-Bangla14 ফন্টে
পড়লে লেখাটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে ফন্ট ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip
সঙ্গে
দেওয়া ফাইল দেখে নিতে হবে
অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14
Default text font setting)
Default
text font setting ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
এবং
অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default Internet
setting)
(Default font setting ডিফল্ট ফন্ট সেটিং)
on
internet(Mozilla Firefox)
(top
left) Tools
Options--contents
Fonts and Colors
Default font:=AhanLipi-Bangla14
Advanced...
Fonts for:
=Bengali
Proportional
= Sans Serif, Size=20
Serif=AhanLipi-Bangla14
Sans
Serif=AhanLipi-Bangla14
Monospace=AhanLipi-Bangla14, Size=20
-- OK
Languages
Choose your preferred Language for
displaying pages
Choose
Languages in order of preference
Bengali[bn]
-- OK
-- OK
এবারে
ইন্টারনেট খুললে ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’ ফন্টে সকলকিছু দেখা যাবে নেটে এই ফন্টে সব কিছু লেখাও যাবে
বামুনের চাঁদে হাত৬টির পর্ব-১
ইউনিকোড
ফন্ট বানানোর আমার চেষ্টা প্রকৃত পক্ষে বামুনের চাঁদে হাত দেবার প্রয়াস যে-লোক
১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের আগে কখনো কম্পিউটারে হাত দেয়নি সে বাংলা ইউনিকোড ফন্ট, বানাবে কেমন করে? আর সে কম্পিউটার হল অফিসের
কাজের জন্য ব্যবহৃত সেখানে তো এসব কাজ করা চলতে পারে না কিন্তু কী করে কম্পিউটার
যন্ত্রটি চালাতে হয়, বলা যায় তার সূচনা অফিসে, কর্মক্ষেত্রে
বাংলা
ইউনিকোড ফন্ট হল কম্পিউটারে বাংলা লেখার জন্য বাংলা হরফসমূহের অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা
যখন শুরু করেছি, তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার কথা চিন্তাও করা যেত না কারণ এটা তো
‘ইংরেজি’ যন্ত্র! কম্পিউটারকে কাজ করার সব নির্দেশ দেওয়া হয় ইংরেজিতে এর আগা-পাশ-তলা
ইংরেজি, সেখানে বাংলা লিখতে পারার সম্ভাবনা কোথায়? অনেক পরে অবশ্য সেখানে বাংলা
লেখার ব্যবস্থা হয়েছে কিন্তু তবু এখনও বোধ হয় অনেকে জানেন না যে, কম্পিউটারেও
বাংলা লেখা যায় সে অবশ্য তাঁদের দোষ নয়, কম্পিউটারের প্রচলন এ রাজ্যে তেমন
ব্যাপকভাবে হয়নি অন্তত প্রথম দিকে তো নিশ্চয়ই হয়নি, বরং বাধা এসেছে
কম্পিউটারে
বাংলা ফন্টে এখনও যে টেক্সট লেখালিখি হয় তা কিন্তু অনেকটাই নন-ইউনিকোড ফন্টে হয় নন-ইউনিকোড ফন্টের
চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগত হল ইউনিকোড ফন্ট ইউনিকোড ফন্টই হল সর্বান্তিক(Latest) ফন্ট হরফের চেহারা এখানেও সেই আগের মতো একই আছে কিন্তু ভিতরকার কারিগরি
কৃৎকৌশল অনেক অগ্রগত__ আন্তর্জাতিক মানের অবশ্য আমি ইউনিকোড ফন্ট বানাবো তেমন
উদ্দেশ্য আমার ছিল না উদ্দেশ্য ছিল কম্পিউটারে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করা যায় কিনা
তা দেখা সে উদ্দেশ্যের কারণ হল, সহজে যাতে বাংলা লেখা যায় তার ব্যবস্থা করা
অল্প
বয়স তখন(এখন ৭৪ চলছে-[২০১৮]) এক বন্ধু রেডিয়ো বানাবার জন্য একটা নক্সা করল, সেটি আমাকে
সুন্দর করে এঁকে দিতে বলল আমি সেই ড্রইংটি করার কালে সেই সাদা ড্রইং পেপারের উপরে
স্বচ্ছ আলোক রেখায় লেখা দেখতে পেলাম ‘রেডিও’ কথাটি, রেডিয়ো কথাটি তখন রেডিও লেখা হত চোখের
সামনে কাগজের উপরে লেখাটা বাংলায় ফুটে উঠছিল একবার নয়, বার বার হয়তো আমার মনে তেমন
লেখার ইচ্ছে ছিলই, তাই সেটাই কেমন দেখতে হবে তাই বার বার সাদা কাগজের উপরে সাদা
উজ্জ্বল আলোক রেখায় দেখতে পাচ্ছিলাম পরে রেডিয়োর নক্সা আঁকা হলে আমি সেখানে লিখে (অর্থাৎ
এঁকে) দিয়েছিলাম-- ‘রেডিও’ কথাটি লেখাটি ছিল লাইন ড্রইং, অনেকটা এমনি ধরনের
পরে
আমার মনে হল বাংলা সব হরফ এমনি করে লিখতে হবে তাই এর পরে সে চেষ্টায় লেগে গেলাম কারণ
ইংরেজিতে এভাবে লেখা যায়, বাংলায় লেখা যায় না তার দুটি কারণ, (১)বাংলায় হরফ অনেক
বেশি, (২)বাংলায় আছে অনেক অনেক যুক্তাক্ষর ফলে সেসব সামলে এমনি ধরনে বাংলা লেখা
ছিল খুবই কঠিন, প্রায় অসম্ভব বিশেষ করে যুক্তবর্ণ বা যুক্তাক্ষর সামলানো যাবে না
কারণ ঠিক কটা যে যুক্তাক্ষর আছে তা-ই তো জানা নেই কোথাও তার স্পষ্ট হিসেব নেই
তাছাড়া, যুক্তাক্ষরগুলোর অনেকগুলিই দলা পাকানো মণ্ডহরফ দুটো বা তিনটে হরফ মিলিয়ে এক
নতুন ধরনের দলা, যার সঙ্গে মূল বর্ণগুলির প্রায় কোনও মিলই নেই
হাতের ছাপাখানার কম্পোজিং শিক্ষার বইতেও টাইপের সঠিক হিসেব পুরোটা ঠিক ঠিক পাওয়া কঠিন ধরি লেখা হল-- ‘সঙ্গীত’ সেটি অনায়াসে ‘সংগীত’ লেখা যায় ছাপাখানায় ‘ঙ্গ’ এই দলা পাকানো যুক্তবর্ণটি হল একটিমাত্র টাইপ, আবার ‘সং’ কম্পোজ করা হয় দুটো টাইপ মিলিয়ে-- স, ং __পাশাপাশি জুড়ে এটাকে নাহয়, তর্ক ধরলাম, কিন্তু এমন কিছু যুক্তলিপি বাংলা ছাপাখানায় আছে, যা এখন আর চলেই না, যার সংখ্যা কম করে ৭টি, যেমন উদাহরণ হিসেবে অভ্র=অব্ভ্র ছাপাখানার টাইপ সেটিং বা কম্পোজিং কীভাবে করতে হয়, তা নিয়ে যে বই আছে, তা দেখলাম কিন্তু আঁকায় এতগুলি অমন বিচিত্র ধরনের দলা পাকানো হরফ তৈরি করা যাবে না করলেও সেটা হবে পণ্ডশ্রম
হাতের ছাপাখানার কম্পোজিং শিক্ষার বইতেও টাইপের সঠিক হিসেব পুরোটা ঠিক ঠিক পাওয়া কঠিন ধরি লেখা হল-- ‘সঙ্গীত’ সেটি অনায়াসে ‘সংগীত’ লেখা যায় ছাপাখানায় ‘ঙ্গ’ এই দলা পাকানো যুক্তবর্ণটি হল একটিমাত্র টাইপ, আবার ‘সং’ কম্পোজ করা হয় দুটো টাইপ মিলিয়ে-- স, ং __পাশাপাশি জুড়ে এটাকে নাহয়, তর্ক ধরলাম, কিন্তু এমন কিছু যুক্তলিপি বাংলা ছাপাখানায় আছে, যা এখন আর চলেই না, যার সংখ্যা কম করে ৭টি, যেমন উদাহরণ হিসেবে অভ্র=অব্ভ্র ছাপাখানার টাইপ সেটিং বা কম্পোজিং কীভাবে করতে হয়, তা নিয়ে যে বই আছে, তা দেখলাম কিন্তু আঁকায় এতগুলি অমন বিচিত্র ধরনের দলা পাকানো হরফ তৈরি করা যাবে না করলেও সেটা হবে পণ্ডশ্রম
আধুনিক
পৃথিবীতে সবচেয়ে সরল হরফ হল রোমান হরফ, যে হরফে ইংরেজি লেখা হয় আর এই অভাবিত
সারল্যের কারণে এই হরফ সারা বিশ্বেই সমাদৃত, এবং ক্রমে অন্যদের দ্বারা গৃহীত হয়ে
চলেছে আমি নতুন যে হরফের গঠন করতে চাইছি তার ধরন সরল, খুবই সরল অনেকটা অন্য রকম
যেমন --
ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ
ট ঠ ড ঢ ত থ দ ধ ন
প ফ ব ভ
ম র ল শ স হ ইত্যাদি
হরফসমূহ হল--
এখানে ঞ, ণ, য, অন্তস্থ-ব, ষ ইত্যাদি ৫টি হরফ রাখা হয়নি
যখন
ব্রাহ্মীলিপির যুগে পাথরের উপরে খোদাই করে লেখা হত, তখন সেই হরফগুলি ছিল খুবই সরল
গঠনের, কারণ পাথরে খোদাই করা তাতে সহজ হত সেসব লেখা হত ছেনি দিয়ে পাথর কেটে
কেটে
নতুন গঠনের এই যে হরফগুলি তাও তেমনি সহজে লেখা
যায়
ছেনি
তো আর কলম নয় যে, যেদিকে ইচ্ছে কলমের মতো ঘুরিয়ে অনায়াসে লেখা যায় তাই সে
হরফগুলিকে সরল হতেই হত পরে লেখার মাধ্যম যেমন চামড়া, গাছের বাকল, গাছের পাতা,
কাগজ ইত্যাদি এলো, এবং লেখার উপকরণও সেই অনুসারে পালটে গেল, তা হল লোহার কীলক,
খাগের কলম, সাধারণ কলম, তুলি, আর লেখা হতে লাগল নানা রং, কালি ইত্যাদি বানিয়ে ফলে
তখন যথেচ্ছ কলম ঘোরানো যেত
ফলে হরফের দফা রফা,
তাতে কত যে ভাঁজ আর কোণাখামচি ইত্যাদি তৈরি হল তার আর ঠিক নেই আবার দড়িতে গিঁট
দিয়েও লেখা চলত(দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা সভ্যতায় সংখ্যালিখন পদ্ধতি --নেটের সাইট
‘অনুশীলন’ থেকে একে বলে কুইপু), তুলি
দিয়ে ছবি এঁকেও লেখা চলত, সেটা প্রধানত চিন দেশে আসলে ছবি এঁকেই তো লেখার শুরু,
আর হরফগুলো তো সব ছবিই এখনও তাই-ই, যদিও সেগুলিকে আমরা এখন ছবি বলে মনে করি না
লেখার
মাধ্যম ও উপকরণ, পালটে যাওয়াতে লেখার প্রকরণও পালটে গেল বাংলা হরফ ‘ক’ ব্রাহ্মী লিপি +
থেকে নানা সময়ের বিবর্তনের ধারা বয়ে কেমন করে বাংলা ‘ক’ হল তার একটা আনুমানিক রূপ
দেখা যাক(ঠিক এভাবে যে হয়েছে তা হয়তো নয়)--
= ক
= ক
ইত্যাদি আঁকতে গিয়ে তাই তার প্রস্তুতি নিতেই বহু সময় গেল, দৌড়ঝাঁপ করতে হল
বেশ কেমন করে তা যে করা হবে, সেই পরিকল্পনা করতেই অনেক চিন্তাভাবনা করতে হল শেষে
ড্রইং বোর্ড নিয়ে বসলাম বাংলা সরল হরফ আঁকার জন্য হরফের এই নতুন রূপকে ‘লেখা’ ঠিক
বলা যাবে না, বরং বলতে হবে ‘আঁকা’, বাংলা হরফ আঁকা
এই
মূল গঠনের হরফের উপর ভিত্তি করে আরও একাধিক হরফ তৈরি করা হল সেসব প্রকৃতির হরফগঠন
আগে বাংলায় ছিল না ইংরেজিতে তেমন ধরনের হরফগঠন অনেক আছে বাংলায় ছিল না, তাই তৈরি
করা হল, তার দু-একটি দেখা যাক:--
ছবির উপরে ক্লিক করে ‘মূল আকার’-এ ক্লিক করুন, ছবি বড় হবে, দেখতে সুবিধে হবে
আরও কয়েকটি ধরনের হরফ গঠন করা হয়েছিল, সেগুলিকে আর নতুন করে ইউনিকোড ফর্মাটে গঠন করা হয়নি, পুরানো নন-ইউনিকোড গঠনই রয়ে গেছে
“বাংলা ইনজিনীয়ারিং বর্ণমালা” আঁকা হয়েছে ড্রইং বোর্ড পেতে মোটা ড্রইং শিটে বা কাগজে, আর বাকি সব হরফ পরে কম্পিউটারে গঠন করা হয়েছে সেজন্য ব্যাপক প্রস্তুতির দরকার ছিল, এবং সেটা রপ্ত করতে হয়েছে বহু দিনের প্রয়াসে এতদিন পরে তার প্রায় সব ভুলেই গেছি
এসব
কি জলের মতো সহজে হয়েছে? অবশ্যই না
১বারে
বারেই কারিগরি সহায়তা দিয়েছে আমার ছেলে-- অবনশিখর সে এখন নামী কোম্পনিতে সফ্টওয়্যারে কাজ
করে অবশ্য যখন শুরু করেছিলাম তখন সে ছিল কলেজে বিজ্ঞানের ছাত্র পরে সফ্টওয়্যার
বিদ্যা শিখেছে
২হাট-বাজার
বিয়েবাড়ি অন্নপ্রাশন আত্মীয়বাড়িতে সৌজন্য সফর এগুলো আমার দপ্তর ছিল না আমি মুক্ত
ছিলাম, এসবের সবটা আমার স্ত্রী মঞ্জুর এখ্তিয়ারে দেওয়া ছিল
আমি আনসোস্যাল বলে চিহ্নিত ছিলাম নয়তো শত শত ঘণ্টা সময় কোথায় পাওয়া যেত এসব ফালতু বাজে কাজে? কী মহাভারত যে উদ্ধার করছে তা কারও মাথায় ঢুকত না অবশ্য মহাভারত উদ্ধারও হয়নি কেবল নিজের মনের উদ্বায়ী বাষ্প নিজেকে হাওয়ায় ভাসিয়ে রেখেছে, নিজেকে নিজে বাহাবা দিয়ে! লোকে তো তাস জুয়া খেলেও জীবন কাটায়, সেটাই সান্ত্বনা নিজের অঢেল সময় অপচয়ের যদিও বিড়ি সিগারেট পান, ছোটো বড় কোনও নেশাই নেই, সে অভ্যাস ছিল না বরং সঠিক পরিচর্যা পেয়ে দাঁতগুলো এখনও টিঁকে আছে সুস্থ সবল হয়ে
আমি আনসোস্যাল বলে চিহ্নিত ছিলাম নয়তো শত শত ঘণ্টা সময় কোথায় পাওয়া যেত এসব ফালতু বাজে কাজে? কী মহাভারত যে উদ্ধার করছে তা কারও মাথায় ঢুকত না অবশ্য মহাভারত উদ্ধারও হয়নি কেবল নিজের মনের উদ্বায়ী বাষ্প নিজেকে হাওয়ায় ভাসিয়ে রেখেছে, নিজেকে নিজে বাহাবা দিয়ে! লোকে তো তাস জুয়া খেলেও জীবন কাটায়, সেটাই সান্ত্বনা নিজের অঢেল সময় অপচয়ের যদিও বিড়ি সিগারেট পান, ছোটো বড় কোনও নেশাই নেই, সে অভ্যাস ছিল না বরং সঠিক পরিচর্যা পেয়ে দাঁতগুলো এখনও টিঁকে আছে সুস্থ সবল হয়ে
৩শরীর
স্বাস্থ্য? এক সময়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলাম চোখের অপারেশন হয়েছে গুরুতর অসুস্থ হয়ে চার বার
হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম নাকে অক্সিজেন, আর নল দিয়ে খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে সাংঘাতিক
রোগ ভোগ করতে হয়েছে আর সঙ্গে আছে অতি দীর্ঘকালীন সুগার, প্রেসার হাসপাতালে ভালো
দুজন বড় ডাক্তার পেয়েছিলাম, এখনও তাঁদের কাছে চিকিৎসা করাই তাঁদের একজন
ডাঃ তপনকুমার দাশ
অন্যজন
ডাঃ প্রোসেনজিৎ চক্রবর্তী
আর সেখানে হাসপাতালে পেয়েছিলাম দুজন সেবাপরায়ণা নার্স, তাদের একজন সরস্বতী দাস, অন্যজন সুজাতা চক্রবর্তী তাঁদের চিকিৎসা ও সেবায় অনেক দ্রুত সেরে বাড়ি ফিরেছি কয়েক দিন পরে সরস্বতীর বিয়ে হয়, সে তার বিয়েতে আমাকে নিমন্ত্রণও করেছিল এক সময়ে হেঁটেছি অনেক, এখন বসে-বসে-বসে আর হাঁটার ক্ষমতাটাই নেই দীর্ঘ সময় না বসলে একটা শব্দও অবধি তো লেখা যায় না যে আমার ডাক্তার এই বসে থাকার ঘোর বিরোধী
ডাঃ তপনকুমার দাশ
অন্যজন
ডাঃ প্রোসেনজিৎ চক্রবর্তী
আর সেখানে হাসপাতালে পেয়েছিলাম দুজন সেবাপরায়ণা নার্স, তাদের একজন সরস্বতী দাস, অন্যজন সুজাতা চক্রবর্তী তাঁদের চিকিৎসা ও সেবায় অনেক দ্রুত সেরে বাড়ি ফিরেছি কয়েক দিন পরে সরস্বতীর বিয়ে হয়, সে তার বিয়েতে আমাকে নিমন্ত্রণও করেছিল এক সময়ে হেঁটেছি অনেক, এখন বসে-বসে-বসে আর হাঁটার ক্ষমতাটাই নেই দীর্ঘ সময় না বসলে একটা শব্দও অবধি তো লেখা যায় না যে আমার ডাক্তার এই বসে থাকার ঘোর বিরোধী
৪অন্য
সমস্যা? বৈষয়িক সমস্যায় জর্জরিত ছিলাম বসতবাটি থেকে উচ্ছেদের আশংকাও তৈরি হয়েছিল
কোনও রকমে ঠেকানো গেছে
৫অফিস?
কোলকাতার বাইরে মুম্বইতে প্রমোশন হয়েছিল, আর একবার গুজরাটে প্রমোশনে পাঠিয়েছিল
যাইনি কোথাও গেলে মাইনে বাড়ত ঠিকই, খরচ বাড়ত তার দ্বিগুণ সেটা বড় কারণ নয়, অন্য
কারণ ছিল যা অতিক্রম করা যায়নি কোলকাতার বাইরে যেতেও চাইনি বহু বহু পরে কোলকাতাতেই
প্রোমোশন হয়
৬আর
কিছু? পিতার যখন মৃত্যু হয় তখন তার রিটায়ারমেন্ট হয়নি খুবই অসুস্থ ছিলেন
দীর্ঘকাল তাঁর মৃত্যুকালে আমার উপযুক্ত আয় নেই অতীব সামান্য আয় চারিদিক সংকটে
ঘেরা তা বলে মৃত্যু তো শুনবে না পড়লাম অথৈ জলে
৭পরিশ্রম,
আনন্দ, প্রফিট? এসবের পিছনে পরিশ্রম করাটাই ছিল আমার আনন্দ এটাই ছিল বিশ্রামের
উপকরণ অফিস থেকে ফিরে জামাটা খুলে ঘাম মুছবার আগে বসে যেতাম কাজে এটাই যে আমার
বিশ্রাম, আনন্দ, সুখ ছিল প্রফিট? কেউ যদি আমাকে এসব কাজের জন্য টাকা দিত, তবে আমি
অবশ্যই কাজটা করতাম না অর্থ উপার্জনের জন্য তো এসব করিনি, বরং ব্যয় হয়েছে অনেক তবে?
খ্যাতি? সেটা তো সকলেই চায় আমি তো মানুষের ঊর্ধ্বে নই তবে খ্যাতিটাও আসল নয়, খ্যাতি হয়ওনি
তাহলে কি? বাংলা ভাষার প্রসার প্রচার বিকাশ মানোন্নয়ন চেয়েছিলাম সেটাই ছিল-- “আমার
প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি” এর চেয়ে বড় কিছু ছিল না আমার গভীরে অবচেতন
মনে ব্যাপারটা যে কোন্ স্তরে অবস্থান করছে তা বুঝেছিলাম এক অতি বিপর্যয়ের কালে
তা
এতে কি সফল? সফল কিনা, তার চেয়েও বড় কথা আমি চেষ্টা করে গেছি সেটাই বড় কথা চেষ্টা করে যাবও এখনও
ইউনিকোড
ফন্ট যখন এলো তখন পুরানো ফন্টের নাম হয়েছে, ‘নন-ইউনিকোড’, নয়তো আগে তো অন্য কিছু আর ছিল না বলে শুধু ‘কম্পিউটার ফন্ট’ বলা
হত --কম্পিউটার ফন্ট(কম্পিউটারে লেখালিখির হরফসমূহ) ‘ইউনিকোড’ ফন্ট হওয়াতে তখনকার চলতি
ফন্টের নাম করতে হয়েছে ‘নন-ইউনিকোড’ ফন্ট শিক্ষার প্রসার হওয়ার পরে তবেই তো ‘অ-শিক্ষিত’
কথাটা চালু হয়েছে, নয়তো সকলেই তো ছিল একই রকম!
যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালয়ে আশির দশকে ‘বর্ণচর্চা’ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়েছিল, বাংলা ভাষা
চর্চার জন্য সেখানে বড় বড় পণ্ডিত ব্যক্তিরা ছিলেন পবিত্র সরকার(পরে উপাচার্য), অশোক
মুখোপাধ্যায়(সমার্থ শব্দকোষ প্রণেতা), তপন ঘোষাল(যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি
বিদ্যায় প্রথম ডক্টরেট), সমর ভট্টাচার্য (কম্পিউটারে প্রথম বাংলা ফন্ট নির্মাতা),
জগন্নাথ চক্রবর্তী(কবি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান, এশিয়াটিক
সোসাইটির সম্পাদক), দীপঙ্কর সেন(যাদবপুরের মুদ্রণ কলেজের অধ্যক্ষ), প্রসূন দত্ত (সরকারি মুদ্রণালয়ের আধিকারিক)
প্রমুখ, আরও অনেক অধ্যাপক ও গুণীজন(তাঁদের মধ্যে একজন পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
হয়েছিলেন)
আমিও সেখানে স্থান পেয়েছিলাম, তবে আমার মতো এলেবেলে কেউ ছিলেন না বাংলা হরফের নানা নতুন গঠন তৈরি করার আমার এই চেষ্টা দেখে তাঁরা আমাকে বলতেন, বর্ণকার সে সংগঠন আর নেই, কয়েক বছর চলার পরে তাঁরা সময় দিতে না পারায় সেটি আপনিই বন্ধ হয়ে যায়
আমিও সেখানে স্থান পেয়েছিলাম, তবে আমার মতো এলেবেলে কেউ ছিলেন না বাংলা হরফের নানা নতুন গঠন তৈরি করার আমার এই চেষ্টা দেখে তাঁরা আমাকে বলতেন, বর্ণকার সে সংগঠন আর নেই, কয়েক বছর চলার পরে তাঁরা সময় দিতে না পারায় সেটি আপনিই বন্ধ হয়ে যায়
কখগঘঙচছজঝটঠডঢতথদধনপফবভমরলশসহ --এই ধরনের হরফ গঠন প্রথমে ড্রইং শিটে আঁকা হল (একটা মজার কথা বলি, আমাদের ড্রইং ক্লাসের অধ্যাপক একদিন ব্যক্তিগতভাবে এক-একজনকে ডেকে তার ড্রইং শিট দেখতে চাইলেন, দেখলেন একে একে সবারটা খুব রাগী মানুষ, চোখে কালো চশমা আমরা খুব ভয় পেতাম আমার ড্রইংটাও মন দিয়ে দেখলেন আর ঘ্যাঁচ করে শিটের উপরে কেটে দিলেন কী অপরাধ? এত পরিচ্ছন্ন শিট কি করে রইলো? একটু দাগও নেই আঁকা যে হয়েছে তার কালশিটে দাগ কই? নিশ্চয়ই অন্য লোককে দিয়ে বাইরে থেকে করানো! বন্ধুরা আমার হয়ে এগিয়ে এলো-- না, না স্যার, ওর শিট খুব ঝকঝকে থাকে তিনি তবুও ঠিক খুশি হতে পারলেন বলে মনে হল না খুব শক্তধরনের H2 পেনসিলের দেওয়া সে দাগ মোছা খুবই কঠিন ছিল, সাদা কাগজের মোটা শিটে গভীর দাগ পড়ে গেল!) তখনও এদেশের বাজারে কম্পিউটারের ডেস্কটপ সংস্করণ আসেনি সেটা এসেছে আশির দশকে আর ড্রইং শিটে এবং গ্রাফ পেপারে আমার হরফ গঠন আঁকা, শেষ হয়েছে ১৯৭০ নাগাদ তখন নকশাল আমল শুরু হয়েছে, চারিদিকে বিভীষিকাময় পরিবেশ তবু আমার কাজ থেমে ছিল না
বাংলা
হরফ আঁকার আমার প্রচেষ্টার কারণ হল আমার সামান্য(সত্যিই সামান্য) কারিগরি বিদ্যা
ছিল শুরুতে তখন ড্রইং শিটে ইংরেজি হরফ আঁকতে হত তখনই আমার মনে হয়েছে, বাংলাতে তেমন করে
আঁকা যায় কিনা? কিন্তু আঁকতে গিয়ে কত যে সমস্যায় পড়তে হয়েছে তার আর ঠিক নেই, কোথায়
আঁকব, কেমন করে আঁকব, তা নির্ধারণ করতেই গেল বহু দিন বাংলা হরফ আঁকার কোনও পূর্ব
নজির ছিল না, তাই বিভিন্ন আকৃতি ও গঠনের(ত্রিভুজ, অর্ধবৃত্ত, আয়তাকার, অসম
ইত্যাদি) হরফকে একই নির্দিষ্ট ফর্মাটে এনে তাকে বশ করা যেন বুনো ঘোড়াকে বশ করার
মতো কঠিন ব্যাপার ছিল প্রথমে তার নক্সা আঁকা শুরু হল দোকান থেকে ছোটো গ্রাফশিটের
খাতা এনে বাংলা হরফগুলির আয়তন নানা রকম, সেগুলিকে একই মাপ তথা একই নির্দিষ্ট
উচ্চতা, এবং পাশের দিকে চওড়া একরকম করার চেষ্টা হল সে বড় কঠিন কাজ শেষ অবধি সবার
উচ্চতা সমান করা গেল, এবং বেশিরভাগ হরফের প্রস্থ তথা পাশের দিকের চওড়াটা বা প্রস্থ একই করা গেল
ব্যতিক্রম হল--আ, ঋ, ক,ঝ,ঞ ইত্যাদি কয়েকটি মাত্র হরফে এগুলির অতিরিক্ত বা
সম্প্রসারিত বাহুগুলিকে আর একই নির্দিষ্ট প্রস্থে আনা গেল না, তাহলে সেগুলির আকৃতি
অনেকটাই বিকৃত হয়ে যেত এমন কঠিনতম নিগড় না করে দু-একটি ক্ষেত্রে ছাড় তো দিতেই হবে
এই
হরফ গঠন নিয়ে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিনার করা হল (যেখানে আমি পড়তাম, সেই তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব
বিভাগে, এখন তার নাম হয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব লিঙ্গুইস্টিকস), অবশ্য এই হরফ গঠন দেখে
একজন তরুণ অধ্যাপক হতাশাজনক বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন, আর অন্য একজন মনে করেন আমার
মাথায় ‘ক্যারা’(কেন্নো পোকা, অর্থাৎ খ্যাপামি) আছে তা অবশ্য ঠিকই, ঘরের খেয়ে বনের
মোষ তাড়াবার এই আদাজল খাওয়া চেষ্টাকে আর কীইবা বলা যাবে? নন-প্রফিট এবং ‘নিন্দনীয়’ কাজের জন্য প্রাণপাত!
আমার সেই ক্যারা কিন্তু এখনও বের হয়নি, আর বের যে হবে এমন মনে হয়ও না(এখন বয়স ৭৪ চলছে) এসব করতে গিয়ে অনেক শ্রম গিয়েছে, অর্থ গিয়েছে, শরীর গিয়েছে, এবং সামাজিক মেলামেশা গিয়েছে তা হয়তো অন্যদের মতে জলে যাওয়া! কারণ অনেক ব্যয়ে এর মাইক্রোফিল্মও করিয়েছিলাম (কোথায় যে তা করা সম্ভব তা-ই তো বুঝে উঠতে পারছিলাম না) লেখা বা ছবি সংরক্ষণের জন্য, আর তা ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরি চারটিতে পাঠিয়েছি তবে এতে লাভের যে গুড় হবে, সে আশা ছিল না, পিঁপড়ে আর কী খাবে? কারণ কিছু (মানসিক/পারমার্থিক)লাভ হলেও তাতে গুড় তৈরি হবে না, একথা নিশ্চিত
আমার সেই ক্যারা কিন্তু এখনও বের হয়নি, আর বের যে হবে এমন মনে হয়ও না(এখন বয়স ৭৪ চলছে) এসব করতে গিয়ে অনেক শ্রম গিয়েছে, অর্থ গিয়েছে, শরীর গিয়েছে, এবং সামাজিক মেলামেশা গিয়েছে তা হয়তো অন্যদের মতে জলে যাওয়া! কারণ অনেক ব্যয়ে এর মাইক্রোফিল্মও করিয়েছিলাম (কোথায় যে তা করা সম্ভব তা-ই তো বুঝে উঠতে পারছিলাম না) লেখা বা ছবি সংরক্ষণের জন্য, আর তা ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরি চারটিতে পাঠিয়েছি তবে এতে লাভের যে গুড় হবে, সে আশা ছিল না, পিঁপড়ে আর কী খাবে? কারণ কিছু (মানসিক/পারমার্থিক)লাভ হলেও তাতে গুড় তৈরি হবে না, একথা নিশ্চিত
অবশ্য
সবটাই যে ব্যর্থ তা বলা যাবে না দৈনিক সংবাদপত্র ‘আজকাল’-এ এটি নিয়ে লেখা
প্রকাশিত হয়েছে(১৯৮৪), এবং দুজন গবেষক তাঁদের থিসিস পেপারে রেফারেন্স হিসেবে তা উল্লেখ
করেছেন সেটা তাঁরা নিজেরা আমাকে জানিয়েছেন একবার অফিসের বার্ষিক সুভ্যেনির(পত্রিকা)
ছাপার ব্যাপারে অন্যদের সঙ্গে প্রেসে গিয়েছিলাম, সেখানে কথা প্রসঙ্গে শুনলাম সেই লেখা
তাঁরা সংগ্রহ করে রেখে দিয়েছেন, বাংলাভাষায় যে এমন গভীর উদ্যোগ এবং গবেষণা হচ্ছে
তা দেখে তাঁরা উজ্জীবিত
যাদবপুরের প্রিন্টিং টেকনোলজি কলেজে(প্রিন্টিং টেকনোলজির অধ্যক্ষ দীপঙ্কর সেনের উদ্যোগে) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রদের নিয়ে করা একটি সেমিনারে একটি হিন্দিভাষী ছাত্র তাঁর নিজের ভাষায় এমনি নতুন ধরনের হরফ আঁকার জন্য খুবই উৎসাহিত হয়েছিলেন আমিও তাঁকে সানন্দে উৎসাহ দিয়েছিলাম নাগরি হরফ এমনি রীতিতে আঁকার জন্য
যাদবপুরের প্রিন্টিং টেকনোলজি কলেজে(প্রিন্টিং টেকনোলজির অধ্যক্ষ দীপঙ্কর সেনের উদ্যোগে) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রদের নিয়ে করা একটি সেমিনারে একটি হিন্দিভাষী ছাত্র তাঁর নিজের ভাষায় এমনি নতুন ধরনের হরফ আঁকার জন্য খুবই উৎসাহিত হয়েছিলেন আমিও তাঁকে সানন্দে উৎসাহ দিয়েছিলাম নাগরি হরফ এমনি রীতিতে আঁকার জন্য
বাংলাদেশের
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাকে চিঠি লিখে খুবই উৎসাহ দেখিয়েছিলেন, এবং
বলেছিলেন, এটা তাঁদেরই করা উচিত ছিল সন্দেহ কি, তাঁরা করলেই বোধহয় সঠিক হত
খ্যাত ভাষাবিদ পবিত্র
সরকার অভাবিত প্রশংসা করে একটি চিঠি লিখে আমাকে উৎসাহিত করেন [বাংলা ইনজিনিয়ারিং
বর্ণমালার ব্লু-প্রিন্ট বিভিন্ন জনকে পাঠিয়েছিলাম, তখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধানকেও আমি আমার লিখন-নমুনা পাঠিয়েছিলাম সেই বিভাগের তখন প্রধান ছিলেন ডঃ পবিত্র সরকার আমি তাঁকে চিনতাম না, জানতামও না লিখন পেয়ে ডঃ সরকার মন্তব্য
করলেন--
“আপনার ‘এঞ্জিনিয়ারিং বর্ণমালা’ চমৎকার হয়েছে বাংলা বর্ণমালার 3-tier চেহারাকে
এড়িয়ে, সেগুলোকে linear করে আপনি যেভাবে বর্ণগুলোকে সাজিয়েছেন তা আমার কাছে অভাবনীয় ছিল সবচেয়ে
যেটা ভালো লেগেছে, তা এই যে, আপনি এ বর্ণমালার প্রচলিত চেহারাকেই স্বীকার ও গ্রহণ
করেছেন, ইংরেজি alphabet-এর মডেল ধরে তার কোনো শৌখিন সংস্কারের চেষ্টা করেননি যুক্তব্যঞ্জনকে
ভেঙেছেন, কিন্তু লাইনোটাইপের ধরনে প্রথম ব্যঞ্জনটিকে ক্ষুদ্রকায় রেখেছেন alphabet-এর
ধরনে প্রতিটি ব্যঞ্জনকে সমান status
দেননি -- এতে বাংলা বর্ণমালারই চরিত্র রক্ষিত হয়েছে পূর্ণ অক্ষর,
হসন্ত, কার(স্বরচিহ্ন) এবং রেফ ও র-ফলা জাতীয় চিহ্ন এবং যুক্তব্যঞ্জনের প্রথম
সদস্যের ক্ষুদ্রাকৃতি -- এই তিন ধরনের entity
নিয়ে তৈরি সম্ভবত আপনার বর্ণমালা এটা খুব বড়ো কৃতিত্ব, এর জন্যে
আপনাকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন জানাই ... আরেকবার অভিনন্দন জানাই আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে
আলাপ করতে পেলে সুখী হব”
]
]
সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে
আলাপ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বর্ণচর্চা সংগঠনে আমার অন্তর্ভুক্তি
তিনি এই হরফের যে-দিকগুলি নিয়ে আমাকে আলোকিত করেন, সে কথার বেশকিছু আমি আগে সত্যিই
ভাবিনি
পশ্চিমবঙ্গ
বাংলা আকাদেমি গঠন করার প্রাক্-প্রস্তুতি হিসেবে ১৯৮৫-তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি
বিশাল সেমিনার করে সেখানে আমারও ডাক পড়েছিল আমার পেপার পড়ার জন্য আমি পড়েছিলাম
আমার বিষয়টি পরে শুনেছি সেখানেও কয়েকজন
আমার লেখা পছন্দ করেননি তাঁদের বেশিরভাগেরই এই বিষয়ে কোনও প্রাথমিক ধারণা বা জ্ঞানই
তো নেই, ফলে এটা তাঁদের বিরক্তিকরই লাগার কথা তাছাড়া আমি, বাংলা যুক্তবর্ণ গঠনের
দুটি নির্দিষ্ট সূত্র (formula) দিয়েছিলাম, তা প্রায় অঙ্কের সূত্রের মতোই, ফলে তা তাঁদের বিরক্ত করেছে
মাত্র দুটি সূত্র দিয়ে বাংলা যুক্তবর্ণের বিশাল এবং জটিল জগতকে ধরার প্রয়াস হয়তো
তাঁদের পছন্দ হয়নি যদিও সেই সূত্র ধরেই আমার এসব হরফ আঁকা, এবং কম্পিউটারে বাংলা
ফন্ট তৈরি করা, এবং সর্বান্তিক(Latest) ইউনিকোড ফন্টও তৈরি করা
দীর্ঘদিনের
অনুসন্ধানে বাংলায় আমি খুঁজে পেয়েছি প্রায় ৩৯৫টি যুক্তবর্ণ(consonant cluster), যেরকম তালিকা আমি কোথাও খুঁজে পাইনি বলে এটা আমাকে করে নিতে হয়েছে আর
সঠিকভাবে বলতে গেলে সব যুক্তবর্ণ সুনির্দিষ্টও নয় উদাহরণ হিসেবে যেমন,‘সঙ্গীত’
এবং ‘সংগীত’ সংগীত লিখলেও ‘সং’ যুক্তবর্ণ, কিন্তু মন তা মানতে চায় না যেন! আর
সঙ্গীত না লিখে সংগীত লিখলে অন্তত একটি দলা-পাকানো যুক্তবর্ণ এড়ানো যায়
হাতে কম্পোজ করার বাংলা মু্দ্রণশালায় যে চারটি ডালা থাকে তার ২নং ডালা থাকে সামনে উপরে, সেখানে আছে
যদি বাংলা সকল(৩৯৫) যুক্তবর্ণকে ছবি করেই আঁকতে হয়, তবে বাংলা পূর্ণ বর্ণমালার ‘সেট’ কখনোই করা আদৌ হবে কিনা বলা কঠিন এজন্য এসব পথ পদ্ধতি তথা যুক্তবর্ণের আঙ্কিক সূত্র তৈরি করে নিতে হয়েছে পরীক্ষা করে দেখতে হয়েছে যে বাংলা “সকল” যুক্তবর্ণই সূত্র-অনুসারে লেখা যায় কিনা? অবশেষে দুটি মাত্র দলাপাকানো মণ্ড হরফ বাদে, আর বাকি সবই সূত্র মেনে গঠন করা গেছে ব্যতিক্রম দুটি হল-- ক্ষ, জ্ঞ এদুটিকেও সরল করা সম্ভব, তবে তা বাংলা উচ্চারণকে ধারণ করবে না
হাতে কম্পোজ করার বাংলা মু্দ্রণশালায় যে চারটি ডালা থাকে তার ২নং ডালা থাকে সামনে উপরে, সেখানে আছে
যদি বাংলা সকল(৩৯৫) যুক্তবর্ণকে ছবি করেই আঁকতে হয়, তবে বাংলা পূর্ণ বর্ণমালার ‘সেট’ কখনোই করা আদৌ হবে কিনা বলা কঠিন এজন্য এসব পথ পদ্ধতি তথা যুক্তবর্ণের আঙ্কিক সূত্র তৈরি করে নিতে হয়েছে পরীক্ষা করে দেখতে হয়েছে যে বাংলা “সকল” যুক্তবর্ণই সূত্র-অনুসারে লেখা যায় কিনা? অবশেষে দুটি মাত্র দলাপাকানো মণ্ড হরফ বাদে, আর বাকি সবই সূত্র মেনে গঠন করা গেছে ব্যতিক্রম দুটি হল-- ক্ষ, জ্ঞ এদুটিকেও সরল করা সম্ভব, তবে তা বাংলা উচ্চারণকে ধারণ করবে না
যেমন-- ক + ষ=ক্ষ, ক + ষ=ক্ষ, ক + ষ=
ক্ষ
এবং জ + ঞ=জ্ঞ, জ + ঞ=জ্ঞ, জ + ঞ=জ্ঞ
এবং জ + ঞ=জ্ঞ, জ + ঞ=জ্ঞ, জ + ঞ=জ্ঞ
আসলে
বাংলা যুক্তবর্ণের অনেকগুলিই আমরা যথাযথ উচ্চারণ করি না অবশ্য সে ব্যত্যয় সাধারণ
মূল বর্ণেও কম নেই ণ, ষ কিংবা ঈ, ঊ, ঋ উচ্চারণ বাঙালি করে না তবে যুক্তবর্ণের এই
সূত্রে যে কোনওই ত্রুটি নেই তা নয়, তবে তা কোটি টাকার ব্যবসায়ে ৫০টাকার সমস্যা
মাত্র! সেই সমস্যা নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো মানে হল, ব্যবসায়ে বিপুল লাভের চেয়ে সামান্য
সমস্যা নিয়ে উদ্ব্যস্ত হওয়া বাস্তবে তার সত্যিই একদম প্রয়োজন নেই অবশ্য লাভের বিপুল
গুড়ের চেয়ে, ক্ষুদ্র সমস্যার জট নিয়ে বাঙালি সব সময়েই বেশি উদ্ব্যস্ত হয় আর এটাই
বাঙালির বৈশিষ্ট্য!
খুবই
মজার কথা যে এই ধরনের নতুন লেখাই স্কুলের অল্প বয়সী ছাত্ররা খুব পছন্দ করছে তাদের
পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও সেইভাবে লিখে তৈরি করা হয়েছে চালু জটিল যুক্তবর্ণ বরং তারা
অপছন্দ করছে সে জটিলতা তাদের নানা সমস্যায় ফেলে যে! যুক্তবর্ণের জটিলতায় যে তাদের মেধা ও শ্রমের
অকারণ ব্যয় হয় সেটা আমরা ভাবতে চাই না এসবের সত্যিই দরকার আছ কি? খোলাখুলি তাদের
মতামত নেওয়া হয়েছিল কোন্টা তাদের পছন্দ তারা সকলে একবাক্যে নতুন ব্যবস্থার দিকে
সায় দিয়েছে এই পরীক্ষাটি করেছেন স্কুলশিক্ষার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত একব্যক্তি তিনিই আমাকে তাঁর পরীক্ষার ফলাফলটি জানিয়েছেন একাধিক স্কুলের প্রশ্নপত্র এই ফন্টে লিখে করা হয়েছ
সংশোধন, সম্পাদন, সংযোজন চলছে
সর্বশেষ পরিমার্জন ১২/১০/২০১৮
No comments:
Post a Comment