Monday, February 23, 2015

বামুনের চাঁদে হাত, পর্ব-৫






বামুনের চাঁদে হাত

মনোজকুমার দ. গিরিশ 






৬টির

পর্ব-৫








লেখাটি ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’AhanLipi-Bangla14 ফন্টে পড়লে লেখাটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে৤ ফন্ট ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip





সঙ্গে দেওয়া ফাইল দেখে নিতে হবে৤

অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default text font setting)
Default text font setting ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং

এবং



অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default Internet setting)

(Default font setting ডিফল্ট ফন্ট সেটিং)

on internet(Mozilla Firefox)
(top left) Tools  
              Options--contents
              Fonts and Colors
              Default font:=AhanLipi-Bangla14
                        Advanced...
                                    Fonts for: =Bengali
                                    Proportional = Sans Serif,   Size=20
                                    Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Sans Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Monospace=AhanLipi-Bangla14,  Size=20
                                    -- OK
            Languages
            Choose your preferred Language for displaying pages
            Choose
            Languages in order of preference
            Bengali[bn]
            -- OK
 -- OK

          এবারে ইন্টারনেট খুললে ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’ ফন্টে সকলকিছু দেখা যাবে৤ নেটে এই ফন্টে সব কিছু লেখাও যাবে৤





৬টির
পর্ব-৫




          সবাই নিজের দইকে মিষ্টি বলে৤ কেউ কি আর নিজের দই টক বলে বাজার ধরতে চায়? আমার দই টকও নয়, এবং মিষ্টিও নয়৤ খেয়ে দেখ বাবু, যদি ভালো লাগে খাও, নয়তো বিদেয় দাও৤ তবে বাংলা ভাষার অগ্রগতি যদি ভবিষ্যতে নিশ্চিত করতে হয় তবে এটা একটা পথ৤ আমার মতে ভালো পথ৤ ভাষাবিশেষজ্ঞ পণ্ডিতেরা জানিয়েছেন, কেবল কাজের জিনিস হলেই চলবে না, সুন্দর জিনিস হওয়াও চাই৤ ঠিকই বলেছেন তাঁরা, কিন্তু প্রাচীন দিনের সেই ব্যবস্থায় আটকে থাকার ফলে যে পিছিয়ে পড়তে হবে, সে কথা তাঁরা ভাবছেন না কেন? সেটা কি দরকার নেই? 


       বিদেশি পণ্ডিতেরা বাংলা হরফে ছাপার ব্যবস্থাপত্র প্রায় সবটাই করে দিয়েছেন, এই আধুনিক যুগের বাংলা ছাপার টাইপও তাঁদেরই হাতে তৈরি৤ আমরা আর কতটা কি করলাম? আমরা বরং ছাপা শুরুর প্রথম দিকে ছাপা বই থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলাম৤ ম্লেচ্ছদের যন্ত্রের ছোঁয়া লেগে তা অপবিত্র হয়ে গেছে, তাই ছাপা রামায়ণ মহাভারত বাজার-অচল ছিল৤ আসলে প্রগতি থেকে দূরেই সরে ছিলাম, প্রগতিকে আটকে দিচ্ছিলাম৤ প্রগতিকে আটকানো চলতে থাকলে আমরা কোন্‌ অন্ধ যুগে পড়ে থাকতাম কে জানে? শেষে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা ছাপার কালির সঙ্গে গঙ্গাজল মিশিয়ে ছাপা শুরু করায় ধর্মগ্রন্থের অপবিত্রতা ঘুচল! আজকে এই যে নতুন করে স্বচ্ছযুক্তবর্ণ লেখার পদ্ধতি, তা কোন্‌ গঙ্গাজল দিয়ে ধুলে পবিত্র হবে, তা বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা ভেবে বের করুন৤ 


         তবে নতুন প্রজন্ম কিন্তু এটা প্রবলভাবে পছন্দ করছে৤ স্কুলের প্রশ্নপত্র এইভাবে ছাপা হয়েছে৤ তারা কিন্তু খুব খুশি, তাদের বিদঘুটে দলা পাকানো মণ্ডহরফ, বা মণ্ডলিপি শিখতে হবে না, হরফ পরিচয় হলেই সব স----ব যুক্তবর্ণ অনায়াসে পড়া যাচ্ছে৤ তারা তো এটাই চায়৤ প্রাচীন পন্থীরা তাদের পথ কেন আটকে দেবেন? শুধু শিশুরা নয়, অল্প বাংলা জানা অন্য বাঙালিরা যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়েছে, বাংলাটা কমই জানে, তারা এবং বিদেশিরা যাঁরা সহজে বাংলা শিখতে চান, তাঁরা সহজে বাংলা লিখতে পড়তে বুঝতে পারবেন৤ সেটা বাংলাভাষার প্রসার, প্রচার এবং বিকাশের পক্ষে ভালো৤ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা-- ওডিয়া শিখতে গিয়ে তাদের যুক্তবর্ণে আটকে গিয়ে শেখাই বন্ধ করতে হল! 


 
 কাজুও আজুমা৤ জাপানি ‘বাংলাভাষী’৤  বলেন, আমি পৃথিবীর কয়েকটি ভাষা শিখেছি৤ বাংলাভাষা সবচেয়ে সুন্দর ও মধুর মনে করি৤
       প্রয়াত এই পণ্ডিত প্রায় বাঙালির মতো উচ্চারণেই বাংলা বলতেন৤
 









 ফাদার দ্যতিয়েন৤ বেলজিয়ান ফরাসিভাষী৤ বাংলা ভাষার  
 খ্যাতকীর্তি লেখক৤
        বাংলাভাষায় অতি সাবলীল ঘরোয়া বাংলা লেখা লেখেন৤



















 দং ইউ চেন৤ চিনা ভাষী৤ বলেন, বাংলা ভাষাকে আমার গান মনে হয়৤ 
        রবীন্দ্র অনুবাদক৤

















          অবাক হয়ে ভাবি বাংলাভাষা অনুরাগী এই সব বিদেশি (এবং বিদেশিনিরাও) কেমন করে বাংলা ভাষার অন্দরমহলে এমন করে ঢুকতে পারলেন? বড় কঠিন সে কাজ৤ আর শুধু এই তিনজন নন, আরও অনেকে আছেন যাঁরা বাংলা ভাষায় দক্ষ৤ তার একটি উদাহরণ যেমন “রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়ে উল্লেখ করে জে.ডি. এন্ডারসন, ডি.লিট, আই সি এস, বঙ্গীয় তথা ঢাকা সাহিত্য-পরিষদের সদস্য, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাভাষার অধ্যাপক ১৯২০-তে বলেছেন-- সামগ্রিক বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি ও মাধুর্যের বিচারে এ এক বিলম্বিত ... স্বীকৃতি৤... মানবিকতা, কারুণ্য ও সরসতাগুণে এ-সাহিত্যের গরিমার কথা মানতেই হয়, মানতে হয় এর লক্ষণীয় বৈচিত্র, নম্য রীতিকলা এবং গদ্য-পদ্য নির্বিশেষে প্রকাশশৈলীর বহুমুখী ঐশ্বর্য ...৤ পাশ্চাত্য সাহিত্যর অনুবাদ-বাহন হিসেবেও সমস্ত ভারতীয় ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠতা অবশ্যস্বীকার্য৤” (উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে ফরাসিভাষা-ভাষী অতুলনীয় বাংলা লেখক ফাদার দ্যতিয়েনের বাংলায় লিখিত ‘ডায়েরির ছেঁড়াপাতা’ বই থেকে, পৃঃ-২৪)৤ এখানে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের অপার মাধুর্য লক্ষ করুন৤ ফাদার দ্যতিয়েন বলেছেন, “বাংলা ভাষার ধ্বনিমাধুর্য, সংগীত আমায় আকৃষ্ট করেছে৤ বাংলা গদ্যের সুরের মূর্ছনা আমার কানে বাজে৤” (বইয়ের দেশ, জানুয়ারি-মার্চ ২০১০,পৃঃ-১১৯)৤ আর জাপানি বাংলাভাষী কাজুও আজুমা? তিনি বলেছেন, "আমি পৃথিবীর কয়েকটি ভাষা শিখেছি৤ বাংলাভাষা সবচেয়ে সুন্দর ও মধুর মনে করি৤ বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি, বাংলাভাষা তার ভাবপ্রকাশের উপযুক্ত ভাষা৤"  


          কাকে বাদ দিয়ে কার কথা বলি? 
          'প্রগতি প্রকাশন' মস্কো-এর বাংলা বিভাগের প্রধান রাইসা ভালুয়েভা বলেছেন(১৯৭৫)__ "আমার ধারণা যে বাংলাভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও সুরেলা ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম৤" 
          বাংলাভাষার জাপানি শিক্ষক কিওকা নিয়োয়া বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন উপলক্ষে বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে(৩০-১২-১৯৯৯) বলেছেন__'একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি হিন্দি এবং বাংলা পড়াই৤... রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রম নন'(অর্থাৎ এমন কবি সাহিত্যিক বাংলায় আরও আছেন)৤ 

          "আমি বাংলাভাষার প্রেমে পড়েছি৤ ভাষাটি কী সুন্দর কী মিষ্টি৤... বাংলা ভাষার সুর, উচ্চারণ, ছন্দ, তাল আমার কাছে খাঁটি মজা, ফুর্তি, আনন্দ"__ হানা টম্পসন৤[ইংরেজ মহিলা] ‘এরই মাঝে বাংলার প্রাণ’ দেশ, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬৤ বই সংখ্যা, পৃঃ ১২৯৤  





ড. হানা টম্পসন-- ছবি তাঁর ব্যক্তিগত সাইট থেকে






          চারুচন্দ্র ত্রিপাঠি (হিন্দি বিশ্বকোষের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৤ বাংলা বিশ্বকোষ তৈরির সেমিনারে[৩১-১০-১৯৮৭] হিন্দিতে ভাষণ দেন৤ হিন্দিভাষী কিন্তু বাংলা বোঝেন), বলেন__ "এই দেশের সমৃদ্ধতম ভাষা বাংলা৤"


          কিন্তু বাংলার প্রবেশদ্বারে যদি বড় বড় প্রহরী রাখি, গম্ভীর মুখে যারা কঠিন কৃপাণ হাতে, কটমট চোখে তাকায়, তবে আর সেখানে ঢুকবার সাহস পাবে কে? আসলে ঢুকতে যাতে না-পারে তার কড়া বন্দোবস্ত করা আছে৤ ঢুকুক দেখি সাধ্য কার? আছে কোন্‌ দুরাচার! দারুণ সিকিউরিটি! বাংলাভাষায় প্রবেশে আমন্ত্রণ তো নেইই, উলটে তা ‘ধমক দিয়ে ঠাসা’! এখানে যে রামগড়ুড়ের বাসা৤ রামগড়ুড়ের বাংলা বাসা৤ রামগড়ুড়ের বাংলা ভাষা৤

          সে অন-আপ্যায়ন ঘুচিয়ে দিয়ে আজ বাংলাভাষার দ্বার করতে হবে উদার, উন্মুক্ত, অবাধ৤ বাংলা শেখা হবে জলের মতো সোজা৤ সহজ, সুন্দর এবং অতি আরামদায়ক৤ সে জন্য লেখার ব্যবস্থা করতে হবে সহজ, যা মানুষকে বাংলাভাষায় ঢুকতে বাধা দেবে না৤ বরং হরফ পরিচয় হলেই পড়া যাবে, বোঝা যাবে, লেখা যাবে৤ সেটা কেবল কল্পজালে বাস করে নয়, কাজে লাগিয়ে, কাজ করে৤ কাজে লাগানোর সেই ব্যাপার হল দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলা ফন্ট, যেখানে সহজে বাংলা লেখা-পড়া করা যাবে৤ বাংলা কম জানলেও তাতে বাধা হবে না৤ কম বাংলা জানাদের কথা মাথায় রেখেই সেটি প্রকল্পিত, আর বাংলা জানাদের তো তা জলভাত, সেকথা অবশ্য না বললেও চলবে৤ তবে জানা পুরানো ব্যবস্থা নিয়ে গোঁ ধরে থাকলে চলবে না৤ শিক্ষিতদের সেটাই প্রধান গুমোর৤ শিক্ষার গুমোর! তাঁদেরও বিষয়টা বা ব্যবস্থাটা সহজ মনে নিতে হবে৤ আর না-নিলে ক্ষতি তাঁদেরই, অন্যেরা এগিয়ে যাবে, তাঁকে বরং পরে অন্যদের পিছু পিছু দৌড়তে হবে তাদের নাগাল পাবার জন্য৤
         

    আরও একটা কথা৤ বাংলা লিপি হল কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্ট-- জটিল বর্ণ৤ সম্ভবত ভারতীয় সকল লিপিই কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্ট৤ বিশ্বের শত শত ভাষার লিপিই কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্ট৤ আমার ধারণা বাংলা যুক্তবর্ণের এই সূত্র দুটি যেকোনও কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্টের ক্ষেত্রেই কাজে লাগতে পারে৤

সূত্র দুটি --

(১)


   এবং   

(২)

    

 দুটি বর্ণই মাত্রা ঘেঁষে বসবে তা বোঝাতে, উপরের দিকে মাত্রা ঘেঁষে হরফ বসানো হয়েছে,






কারণ বাংলা লেখা তো ইংরেজির মতো লাইনের উপরে দাঁড়ানো হয় না, বরং তা মাত্রা সংলগ্ন হয়৤ অন্যত্র এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে৤

          রবীন্দ্রনাথ একটা কথা বলেছেন, “একবার যেটা অভ্যাস হইয়া যায় সেটাতে আর নাড়া দিতে ইচ্ছা হয় না৤ কেননা স্বভাবের চেয়ে অভ্যাসের জোর বেশি৤...অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে একটা অহংকারের যোগ আছে৤ যেটা বরাবর করিয়া আসিয়াছি সেটার যে অন্যথা হইতে পারে এমন কথা শুনিলে রাগ হয়৤ মতের অনৈক্যে রাগারাগি হইবার প্রধান কারণই এই অহংকার৤... ”  আগেই একথা একবার বলেছি৤ সুতরাং দেখতে খারাপ লাগছে, এটা কোনও কারণ হতে পারে না৤ বরং এটা দেখা গেছে যে, ডিজাইন ঠিক রাখতে তৎপর এযুগে, মূল ব্যাপারটিই লঘু হয়ে পড়ে৤ তখন মাত্র দেখনদারিই বজায় থাকে, ভিতরে কাজের জিনিসের অভাব দেখা দেয়৤ কাজের ব্যাপারটি সর্বাধিক গুরুত্বপাক, তার পরে দেখতে হবে তা কতটা সুন্দর করা যাবে৤ সুন্দরে তো বাধা নেই, কিন্তু যে সুন্দর দিয়ে কাজ হবে না, সে-সুন্দর নিয়ে অকারণ মাথা ঘামিয়ে কী হবে? মাকাল ফলের মনোরম ত্বকবর্ণ দেখে অবাক হতে হয়, কিন্তু সে ফল অকাজের৤

          যে জটিল ব্যবস্থা লোককে তার ভিতরের মধুর স্বাদ গ্রহণে বাধা দেয়, সে ব্যবস্থা বেশ গুরু গম্ভীর হতে পারে, কিন্তু মানুষকে তা কতটা কী দিতে পারে বা পারবে৤ রাশ ‘ভারী’ করে কাজ নেই, কাজ ভারী হোক৤

          কিছু প্রায় অপ্রাসঙ্গিক কথা এবারে বলা দরকার৤ যেভাবে লিখতে চাইছিলাম তার পিছনে ভাষিক সমর্থন বা তত্ত্ব কতটা আছে, বা কতটা সমর্থন তাতে থাকবে, তা জানা জরুরি৤ সে ব্যাপারে হাত শক্ত করার জন্য দরকার ভাষাবিজ্ঞান বা ভাষাতত্ত্বের জ্ঞান৤ এ জন্য চাকুরি করতে করতে নাইট কলেজে ভর্তি হলাম বাংলায় জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য৤ বিদ্যে ছিল অন্য দিকে, এবং অল্প৤ টেকনিক্যাল কলেজের এঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা৤ তাই বাংলা ভাষা নিয়ে পড়তে দক্ষিণ কোলকাতার এক কলেজে রাতে ভর্তি হলাম৤ তখন ৭০ দশকের ডামাডোলের বাজার৤ পরীক্ষা পড়াশুনা প্রায় ডকে উঠেছে, তাই খুব আশাবাদী ছিলাম না৤ ইচ্ছে ছিল না পরীক্ষা দেবারও৤ কিন্তু সহপাঠী বন্ধু অমূল্য মাহাতো উৎসাহ দিল, ভরসা দিল৤ তাই জোরজার করে পড়তে লাগলাম৤ বাংলায় ভাষাজ্ঞান যে একদম ছিল না, তা নয়, তবে একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার দরকার ছিল৤ তাই পরীক্ষায় উতরে গেলাম ভালোই৤

          এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ৤ কলেজ স্ট্রিটে যখন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যেতাম তখন মনে মনে খুব কষ্ট হত৤ গোপনে বলি, চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যেত৤ তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কলেজ স্কোয়ারের পুকুরের পুব দিকে দিয়ে ঘুরে ওপাশে যেতাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে সোজাসুজি যেতাম না৤ ভাবতাম এখানে কি আর আমার পড়া হবে? মনে মনে খুব কষ্টে ভুগতাম৤ এবার সেখানে ভর্তি হবার সুযোগ এলো৤ তাই বাংলা এবং তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব এই দুটি বিভাগেই একই সঙ্গে আবেদন করলাম৤ দেখা গেল যে দুটিতেই নাম উঠেছে৤ বি.এ. পরীক্ষায় মার্কস ভালোই ছিল৤ আমি নির্বাচন করলাম তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিভাগ, কারণ এতে ভাষার তত্ত্বে আমার ভিত শক্ত হবে৤ তাই ভর্তি হয়ে গেলাম৤ 


        অফিসে মর্নিং ডিউটি শেষ করে তারপরে ক্লাস করতে যেতাম৤ সব ক্লাস করা হতও না৤ তা হলেও অসুবিধে হয়নি৤ ছাত্রছাত্রী অল্প, শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো পরিচয় হয়ে গেল৤ একদিন আমার তৈরি “বাংলা ইনজিনীয়ারিং বর্ণমালা” নিয়ে আলোচনা করতে বিভাগীয় প্রধানের বাড়ি গেলাম হাওড়াতে৤ সেখানে অনেক কথা হল৤ একজন গবেষক তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনিও খুঁটিয়ে দেখলেন হরফ ড্রইং-এর ব্যাপারটা৤ বাংলা বর্ণমালার এই বিধিবদ্ধ রূপ দেখে তিনি খুব খুশি, আর এতে যে অতি সূক্ষ্ম মাপজোক, তা তাঁকে আরও বিস্মিত করল৤ আসলে তিনি তো কারিগরি বিদ্যার লোক নন, তাই এসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মাপজোক তাঁকে অবাক করেছে৤ 



       তাঁদের জানিয়েছিলাম, বাংলা লেখা হল ত্রিস্তর(3-Tier), তা এক স্তর(Monotier) করা সম্ভব, এবং তা বাংলায় কীভাবে কার্যকর করা যায়, হিসেব কষে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, এতে অন্তত ৪০%শতাংশ মুদ্রণস্থান সাশ্রয় হবে৤ ফল হবে বাংলা বইয়ের দাম অতটাই কমবে৤ তবে সে জন্য “বাংলা ইনজিনীয়ারিং বর্ণমালা” ব্যবহার করতে হবে৤ সে ভাবেই ফন্ট গঠন করা হয়েছে৤


     ঠিক হল এটি নিয়ে বিভাগে একদিন সেমিনার হবে, আমিই প্রস্তাব দিলাম৤ বিভাগীয় প্রধান রাজি হলেন৤ তার আগে পাড়ায় “বাংলাভাষা সমিতি”-র উদ্যোগে একাধিক সেমিনার করেছি৤ বিশ্ববিদ্যালয়ের
সেই সেমিনারে বিভাগের সকল অধ্যাপক এবং ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন৤ তবে সকলে এটা নিয়ে খুশি হতে পারেননি, কারণ এর উদ্দেশ্য এবং মূল্য সম্পর্কে তাঁদের ধারণা ছিল না৤ অল্প বয়সী একজন অধ্যাপক তো হাতের ভঙ্গী করে ব্যঙ্গই করলেন৤ সেরকম যে হতে পারে তা আমার অজানা ছিল না৤ যাঁর এ নিয়ে কোনও ধারণাই নেই, তিনি এটা নিয়ে কেন সময় এবং মনোযগ ব্যয় করবেন? তাই তিনি এছাড়া আর কীইবা করবেন? যাদবপুরের পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রদের সামনে এটা নিয়ে সেমিনার করার সময়ে তারা কিন্তু খুবই আগ্রহ দেখিয়েছিল৤ একজন হিন্দিভাষী ছাত্র তাঁর ভাষায় এরকম করার জন্য খুবই আগ্রহ বোধ করেছে৤ তাঁর অভিপ্রায় আমাকে জানাতে তাঁকে আমি জোরালো উৎসাহ দিলাম, এরকম হরফ তার ভাষায় করার জন্য৤

          বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ সমাপনের কালে শেষ পরীক্ষাটা আর দেওয়া হয়নি৤ অসুবিধা থাকার জন্য পরের বছর পরীক্ষা দেব ভেবে ড্রপ দিলাম৤ তারপরে আর পরীক্ষায় বসা হয়নি৤ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ফলে ভাষার ব্যাপার নিয়ে আমার যুক্তির ধার খানিকটা বেড়েছে, নইলে ঠেকে যেতে হত হয়তো৤ আমার করা বাংলা ইনজিনীয়ারিং বর্ণমালা গঠন একেবারে কিন্তু ব্যর্থ হয়নি৤ এটি সংবাদপত্রে(আজকাল) প্রকাশের পরে তা দুজন গবেষকের রেফারেন্স হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে৤ আর ১৯৮৫-তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি তৈরির উদ্যোগ নিয়ে একটি বড় সেমিনার করে সেখানে আমাকে আমার পেপার পড়তে ডাকে৤ আর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি তৈরি হবার কালে প্রথম যে বইটি প্রকাশিত হয়(প্রসঙ্গ:বাংলাভাষা, ২০ মে, ১৯৮৬৤ প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রকাশিত), সেখানে এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৤ 











বাংলা 
(ছায়াপাত করে ত্রিমাত্রিক করে আঁকা)




      উপরের চিত্রের একদম নিচে, একেবারে ডানদিকে লেখা হয়েছে, “বাংলা” কথাটি৤ বুঝতে অসুবিধে হয় অনেকেরই, কারণ এটি কেবলমাত্র শেড দিয়ে ত্রি-মাত্রিক করে লেখা/আঁকা হয়েছে৤ চর্চা না থাকলে এটি বুঝতে সত্যিই অসুবিধে হবে৤






    


 বাংলা 
(ছায়াপাত করে ত্রিমাত্রিক করে আঁকা৤ একই লেখার দ্বিতীয়রকম রূপ)



          কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়ছি, তখন সেখান থেকে গবেষকেরা একটি ভাষা বিষয়ক পত্রিকা বের করতেন,সেটির নাম ছিল “ভাষা”, সম্পাদক ছিলেন, গবেষক মৃণাল নাথ(পরে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক)৤ 

 ডঃ মৃণাল নাথ


সেখানে আমার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়৤ তখন একদিন তাঁদের একজন গবেষক কথা প্রসঙ্গে আমাকে বললেন, ‘আপনার এম.এ. ডিগ্রির আদৌ দরকার আছে কী?’ যেন আমি বিরাট পণ্ডিত হয়ে গেছি, তার কথায় এমনি ভাব! আমি হেসে বললাম, ডিগ্রিরও দরকার আছে৤ যদিও এম.এ. ডিগ্রিটা শেষ অবধি জোটেনি, পরীক্ষা দেওয়া হয়নি৤ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে, এটাই ছিল আমার লক্ষ্য, তাই সেখানে পড়াশুনা করতে পেরে তাতেই আমি খুব খুশি ছিলাম, ডিগ্রির প্রতি আগ্রহ বেশ কমেই গিয়েছিল৤ 


         বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার একটা মজা আছে, সবাই ম্যাচিওর্‌ড, ছেলে এবং মেয়ে, তাই মেলামেশায় কোনও অসুবিধে ছিল না৤ আড্ডা দেওয়া রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া ইত্যাদিতে সবাই যোগ দিত, আর ক্লাসে তো একগাদা পড়ুয়া নয়, সবাই সবাইকে বেশ ভালোই চিনত৤  আমি ছিলাম সবার চেয়ে বয়সে অনেকটাই বড়৤ তবে ছেলেমেয়েদের মেলামেশার ব্যাপারে কোনও অশুভ চিন্তা কারও মাথায় ছিল না৤ খুব সহজ বন্ধুত্ব ছিল৤ স্কুলের দিনের মতো, অথচ সকলেই দায়িত্বশীল৤ বোধ হয় আমি একাই চাকুরিজীবী ছিলাম৤ বাকি সবাই পিতার হোটেলের অতিথি৤ ক্লাসে মেয়েরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ৤ দু’একটি ফাজিল ছোকরাও ছিল তাদের বিব্রত করতে!  মেয়েরা বিব্রত হত ঠিকই, তবে তার জবাবও দিত ঠিক মতো ফিরিয়ে৤


          ‘বাংলা ইনজিনীয়ারিং বর্ণমালা’ ব্যাপারটা লোকের একটু চোখে পড়া দরকার৤ তাই নেটে যাতে এটি আপলোড করা যায় সেজন্য যোগাযোগ করলাম “সৃষ্টিসন্ধান” নামক ওয়েব সাইটের সঙ্গে৤ আসলে তাঁদের একটি পত্রিকা আছে, বই মেলায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে৤ তাঁদের দিলাম বাংলা ফন্টে আমার লেখা প্রবন্ধ৤ তাঁরা ছাপলেন৤ তাঁরা আমার একাধিক লেখা নেটে প্রকাশ করেছেন৤ একদিন কথা প্রসঙ্গে তাঁদের সম্পাদক ভাস্কর মুখার্জি বললেন, আপনার লেখাগুলি সত্যিই অসাধারণ৤ যাঁরা দেখেছেন তাঁরাও বলেছেন৤ আপনার লেখাগুলো নিয়ে বই বের করছেন না কেন?


          আমার লেখাগুলো নিয়ে বই প্রকাশ করা হয়তো যায়, তবে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বই বের করতে চাই না৤ সে জন্য নেটে নিজের ব্লগে লেখাগুলি প্রকাশ করা যায় কিনা তার চেষ্টা করলাম৤ অবশেষে পারা গেল৤ ব্লগ তৈরি করে লেখা প্রকাশ করতে পারলাম৤ ইন্টারনেটে প্রকাশযোগ্য প্রায় ওয়েবসাইটের মতোই ব্যবস্থা হল ব্লগ৤ আমার নিজের একাধিক ব্লগ আছে নেটে(প্রায় ২০/ ২২টা)৤ আর তাতে কয়েক শত পৃষ্ঠা লিখেছি৤ কারণ এখানে পত্রিকা সম্পাদকের মতো আমার উপরে ছড়ি ঘোরাবার কেউ নেই, ছাপাতে/প্রকাশ করতে খরচ লাগে না, পৃষ্ঠা সংখ্যার কোনও সীমা বাঁধা নেই৤ সবচেয়ে বড় কথা হল পৃথিবীর সবাই সেটা পড়তে পারবে৤ এখানে স্বাধীনতা(আসলে স্বেচ্ছাচার) অবাধ, সেই স্বাধীনতা আমি কাজে লাগিয়েছে৤ অনেক দিন ধরেই নেটে লেখালিখি করছি নিজের বিষয় নিয়ে৤ আর দেখতে পাচ্ছি, অন্যদের একাধিক ব্লগে আমার লেখার প্রায় হুবহু কপি করে নিজের লেখা বলে চালিয়ে দিচ্ছে, কেউ কেউ অবশ্য ঋণ স্বীকারও করছেন৤ বুঝতে পারছি এগুলি লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে৤ ভালো না লাগলে,(সোজা কথায় ঈর্ষার বস্তু না হলে) কেউ অপরের জিনিস নিজের বলে চালায় না৤ কেউ কি মনে করে আমি অন্যের চেয়ে কম!  

        আমিও তো মনে করি আমি সবার চেয়ে বেশি বুঝি, আমার মতো পণ্ডিত আর হয়না৻ বামুনের এটাই তো লক্ষণ!





পরবর্তী ৬ষ্ঠ অংশ দেখুন:

http://banglamagna.blogspot.in/2015/02/blog-post_24.html







সংশোধন, সম্পাদন, সংযোজন চলছে
সর্বশেষ পরিমার্জন ৩০/০৪/২০১৬




1 comment:

  1. Slot Machines in Vegas to Be Fun for Kids | DrmCD
    Slot Machines for Kids: Free Slot 익산 출장안마 Machine Games 거제 출장샵 in the City · Slots: Top 5, with video slots; 3D, audio 광주 출장안마 slots; Free Slots 세종특별자치 출장마사지 for Kids: 양산 출장마사지 Top 5, with video slots;

    ReplyDelete