Thursday, April 8, 2010

বাংলার মাটি বাংলার জল






লেখাটি ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’AhanLipi-Bangla14 ফন্টে পড়লে লেখাটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে৤




সবটা ঠিক ঠিক পড়তে হলে সংগে দেওয়া লিংক থেকে ফন্ট ফ্রি ডাউনলোড করে ‎নিতে




বিনামূল্যে সর্বান্তিক বাংলা ইউনিকোড ফন্ট সরাসরি ডাউনলোড করুন নিচের এই লিংকে ক্লিক করে৤
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip





ইউনিকোড ফন্ট ডাউনলোড করার লিংক উপরে দেওয়া হল৤
লিংকে ক্লিক করুন ফন্ট ডাউনলোড হবে৤ ‎

যুক্তবর্ণ সরল গঠনের৤ ‎
বুঝতে লিখতে পড়তে সহজ৤ ‎



========================
প্রকাশিত নিবন্ধ৤ নবমানব ফাল্গুন-চৈত্র১৪১৬, ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল২০১০
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষিতে বিশেষ রচনা


বাংলার মাটি বাংলার জল
মনোজকুমার দ. গিরিশ





বাঙালি কারা? যাদের মাতৃভাষা বাংলা৤ মাতৃভাষা কী? যে ভাষায় মানুষ চিন্তাভাবনা করে, এবং নিজের স্বাভাবিক মনোভাব প্রকাশ করে৤ ভাষা কী? অর্থপূর্ণ শব্দ বা ধ্বনি প্রবাহের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার উপায়৤
আমরা বাঙালি, কারণ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, আমরা বাংলা ভাষার মাধ্যমে আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করি৤ এক-এক ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ সাধারণত এক-একটি বিশেষ অঞ্চলে বাস করে৤ বাঙালিরা যেমন বঙ্গভূমিতে বাস করে৤ তবে তারা সে-অঞ্চল থেকে কিছু পরিমাণে উৎখাতও হয়েছে ১৯৪৭-এ, দেশ ভাগের সময়ে৤ ছড়িয়ে গেছে পুরাকাহিনির রামের বনবাস ভূমি সুদূর দণ্ডকারণ্য, কালাপানি দ্বীপান্তরের আন্দামান ও আরও নানা স্থানে৤ ইতিহাসেও উৎখাত হওয়ার এমন নজির আছে, যেমন ইহুদিরা তাদের মাতৃভূমি থেকে বহুকাল আগে উৎখাত হয়েছিল৤ তারও আগে কৃষ্ণসাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে পশুপালক বুভুক্ষু যাযাবর আর্যরা ছড়িয়ে পড়েছিল পুবে এশিয়ার ভারতে আর পশ্চিমে ইউরোপে৤ যুদ্ধ/মারামারি, মহামারি প্লাবন বা ভূমিকম্প কিংবা অন্যবিধ কারণে এমনটা হয়ে থাকে৤ বাঙালিরা উৎখাত হয়েছিল দেশভাগের কারণে৤ প্রধানত তারা ছিল হিন্দু, কিছু অবশ্য ছিল মুসলমানও৤ দেশভাগ__ বঙ্গভাগের সম্মুখস্থ বা উপস্থাপিত(প্রোজেকটেড) কারণ ছিল ধর্ম, যদিও প্রধান আঘাতটা এসে পড়ে বঙ্গের ভাষার উপরে৤ ইংরেজদের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ে দেশে তথা ভারতে বাংলাভাষীর সংখ্যা ছিল ভারতের মধ্যে সর্বাধিক, দেশ ভাগের পরে বাঙালিরা জনসংখ্যায় প্রায় সমানভাবে দুভাগ হয়ে যাওয়ায় তা ভারতে দ্বিতীয় হয়ে যায়৤ আর তার প্রত্যক্ষ ফল হয়__ বাংলা ভাষা ভারতে জনসংখ্যার নিরিখে অন্য ভাষার চেয়ে কম হওয়ায় তা ভারতবর্ষের ’রাষ্ট্রভাষা‘ তথা ভারতের সরকারি কাজের ভাষা হতে পারেনি৤ ভারতে রাষ্ট্রভাষা নির্বাচনে ভাষার নিজস্ব গুণমান কোনও বিবেচনায় আসেনি, কারণ ভাষার গুণমান তো একটা মেধাবৃত্তিগত মানস বিকাশের অবস্থা, তা তো আর সংখ্যা দিয়ে গণনা করা যায় না, ভারতীয় ভাষায় নোবেল প্রাপ্তি তো মোটে একটা, তা দিয়ে আর কী বিচার হবে!
জনসংখ্যা সরাসরি সংখ্যায় গণনাযোগ্য ব্যাপার, দু-ভাগ হয়ে গেলে তা আর কি করে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে? দু-ভাগ হয়েও তাই বাংলার গুণমান কমেনি বা কমতে পারেনা, বরং প্রকৃতপক্ষে দেশ বিভাজিত হবার পরে বাংলার বিকাশ দ্বিগুণিত হয়েছে দুটি দেশে পৃথকভাবে চর্চার ফলে৤ দেশভাগ না হলে অবশ্য বাংলাভাষার বিকাশ দ্বিগুণিত না হয়ে সাধারণই হত৤ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তুলনামূলকভাবে মুসলমানেরা বঞ্চিত থাকায় তাদের মনে একটা জেদ ছিলই৤ ফলটা বাংলাভাষার পক্ষে শুভই হয়েছে৤ তাই বলা যায় দেশ ভাগ হয়ে মানুষের দুঃখ দুর্দশার অন্ত ছিল না, রক্ত অনেক ঝরেছে, কান্নার রোল উঠেছে, কিন্তু সামাজিক সেই দুঃখের আগুনে পুড়ে বাংলাভাষা নতুন করে জেগে উঠেছে৤ ১৯৫২-র একুশের ভাষা আন্দোলন এবং তৎপরবর্তী ”আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস“ হবার গৌরব তারই সুফল৤ আর এটা ঠিক যে শুধুমাত্র সংখ্যার জোরে বাংলাভাষা অন্তত ভারতের ’রাষ্ট্রভাষা‘ হতে পারত না, পাকিস্তান আমলে সেদেশে বাংলা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও ’রাষ্ট্রভাষা‘ হতে পারেনি, বাংলা বঞ্চিতই থেকে গেছে, যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে শেষ অবধি পূর্বপাকিস্তান বাংলাভাষী রাষ্ট্র ’বাংলাদেশ‘ হয়েছে৤ নিজের কোলে ঝোল টানার ব্যাপারে বাঙালির যে স্বাভাবিক সৌজন্য সংকোচ তা অতিক্রম করে বাংলাভাষা সবার শিরে বসতে পারত না৤ হলে স্বাধীনতার আগেই সে প্রস্তাব পেশ হত৤ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তখনও জীবিত এবং নোবেল প্রাপ্তির রজত জয়ন্তী বর্ষে বাংলাকে এড়িয়ে গিয়ে অন্য ভাষাকে দেশের ”রাষ্ট্রভাষা“ বলে অ-সরকারি রাজনৈতিক ঘোষণা হতে পারত না৤
ভারতের সর্বাধিক প্রাচীন ভাষা নাকি দক্ষিণ ভারতের তামিল, বলা হয় তামিল ভাষা সংস্কৃতের চেয়েও প্রাচীন৤ আর গুণমানে পূর্বভারতের বাংলা হল ভারতের শ্রেষ্ঠ ভাষা৤ ১৯১৩ খ্রস্টাব্দে ভারতে বাংলাই সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পায়, যা এখন অবধি একমাত্র, আর সেটা ছিল ইউরোপের বাইরেও প্রথম পাওয়া সাহিত্যের নোবেল সম্মান(শুধু কৃষি, বা অন্য প্রাকৃতিক সম্পদ কিংবা হস্তশিল্পেই বাংলা শ্রেষ্ঠ নয়, মানবের শ্রেষ্ঠ মনন-সম্পদ যে ভাষা, তাতেও বাংলা শ্রেষ্ঠ!)৤ প্রায় শত বর্ষ (৯৫ বছর)আগে পাওয়া সেই মান আবারও বাংলায় আসার বেশ কিছু সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশে নাটক এক অত্যন্ত উঁচু মানে পৌঁছেছে৤ প্রসঙ্গত বলে রাখি নোবেল প্রাপ্তির শতবর্ষ সমাগত, সে উৎসব বিপুল সমারোহে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও বাংলাদেশ সরকার পালন করবে বলে আশা করা যায়৤ রাজ্যসরকারগুলিও তা নিশ্চয়ই পালন করবে৤
যদি প্রাকৃতিক মানচিত্র দেখা যায় তবে দেখা যাবে যে, সুদীর্ঘ গঙ্গার দুপাশ ধরে অতি ঘন বিপুল জনবসতি গড়ে উঠেছে, তার কারণ হল এসকল অঞ্চল পলি মাটিতে গড়া, আর পলি মাটি অত্যন্ত উর্বর৤ সহজে এখানে ফসল ফলে, খাদ্য তাই সহজে উৎপাদন করা যায়, জীবন ধারণ সেকারণে অনেক সহজ৤ ফলে পৃথিবীর অতি ঘন বসতির এটি একটি প্রধান অঞ্চল৤ বঙ্গভূমি অঞ্চলের প্রায় পুরোটাই গড়ে উঠেছে বাহিত পলি মাটিতে৤ বিশেষ করে বঙ্গের দক্ষিণ অঞ্চল৤ গঙ্গা নদীর মোহনায় এই অঞ্চলে যে ভাষারীতি গড়ে উঠেছে সেটাই বাংলাভাষা৤ লোকের ধারণা বাংলাভাষা সংস্কৃতকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে৤ পণ্ডিতেরা অবশ্য সে ধারণাকে নাকচ করে দিয়েছেন৤ সংস্কৃতের সঙ্গে বাংলাভাষার সম্পর্ক অতি ক্ষীণ৤ বলা যায়, এক জালা বাংলা দুধে মাত্র দু-একফোঁটা সংস্কৃত জল৤
সংস্কৃত হল পৃথিবীর চিরকালীন শ্রেষ্ঠভাষা৤ বলা হয়েছে, ”চিরকালীন ’নিখুঁত‘ ভাষা সংস্কৃতের গঠনকে অষ্টাধ্যায়ী নির্দিষ্ট করে দিয়েছে৤“(Astadhyai fixed the form of Sanskrit, the ‘Perfect’ language, for all time.—The New Caxton Encyclopedia – p91, vol.15, 1979 Edn.)৤ তাই সেভাষার সঙ্গে সম্পর্ক কল্পনা করে নিজেদের একটু উচ্চস্থ ভাববার চেষ্টা লোকে করতেই পারেন, তবে ঘটনা তা নয়৤ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় বলেন__ ”অনেকের সংস্কার বাংলাভাষা সংস্কৃতের কন্যা৤... আমি কিন্তু সংস্কৃতকে বাংলার অতি-অতি-অতি-অতি-অতি-অতিবৃদ্ধ প্রপিতামহী বলি৤“ প্রসঙ্গত বলি শাস্ত্রী মহাশয়ই বাংলাভাষার প্রাচীনতম উদাহরণ ’হাজার বছরের পুরান বাংলা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোঁহা‘ নেপাল থেকে উদ্ধার করে আনেন৤
এখানে একটি কথা বলা দরকার যে, সংস্কৃত ভাষা পৃথিবী শ্রেষ্ঠ ভাষা হলেও তা বর্তমানে অপ্রচলিত মৃত ভাষা৤ কেবল সাহিত্য চর্চা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মন্ত্রোচ্চারণ করার কাজেই এর ব্যবহার সীমিত হয়ে গেছে, তার মূল করণটি এই যে, দৈনন্দিন ব্যবহারের পক্ষে তা আর উপযুক্ত নেই, এবং তারও চেয়ে বড় কথা সংস্কৃত ভাষা এযুগে আর কোনও প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করা হয় না বলে সে ভাষা শিখে রুজির পথ প্রায় অবরুদ্ধই থেকে যায়৤ তাই রুজিহীন হবার ভয়ে কেউ আর কেবলমাত্র সংস্কৃত ভাষার উপরে নির্ভর করে চলেন না৤ উদাহরণ হিসেবে বলি আফ্রিকার কোনও উপজাতীয় ভাষা শিখে এখানে এই বাংলায় বসে তার কোনও উপযোগিতা লাভ করা যাবে না৤ কারণ সে ভাষা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়৤ ঠিক একইভাবে কোনও বর্তমানের চালু ভাষাও যদি এখানে প্রাসঙ্গিকতা হারায়, তবে তার রুজি অর্জনের ক্ষমতাও লুপ্ত হবে৤ বাংলাভাষা যদি আমাদের জীবনে কোনও কারণে গুরুত্বহীন ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে তবে বাংলাভাষাও জীবিকা অর্জনের ক্ষমতা হারাবে, এ__বং ক্রমে তা বিলুপ্তির পথে চলে যাবে৤
এটা কেবল কল্প কথা, গল্প কথা নয়৤ এক ব্রিটিশ সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, ”বাংলা বিপুল সংখ্যক মানুষের ভাষা হলেও, এবং ভাষার দাবিতে বাংলাভাষীরা একটি রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক সংগ্রাম করলেও বাংলাভাষার প্রভাব বিস্ময়কর রকমের কম...৤ বাংলাভাষীরা বেশিরভাগই দ্বি অথবা ত্রিভাষী৤ এবং সর্বদাই নিজের ভাষাকে অগ্রাধিকারের তালিকায় দুই বা তিন নম্বরে রাখে৤ তাছাড়া বাংলায় সার্বজনীন জনপ্রিয় আধুনিক সংস্কৃতির অভাব লক্ষ করা গেছে৤ যার ফলে বিপুল জমি খেয়ে যাচ্ছে হিন্দি৤ কাজের ভাষা হয়ে ওঠার তাগিদ বাংলার কমই চিরকাল৤ ইংরেজি নির্ভরতা বেশি৤ এখন নতুন করে আর তো সম্ভব নয়৤ ফলে বাড়বে তো নাই, বাংলা ক্ষইবে৤“__প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়৤ ’বিশ্বের ভাষাচিত্র : একটি পর্যবেক্ষণ‘__তবু বাংলার মুখ৤ চতুর্থ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, ত্রৈমাসিক,মাঘ ১৪১১,জানুয়ারি ২০০৫,পৃঃ ১৫৤
আবার ’এক জার্মান সমীক্ষায় বলা হয়েছে এই শতকের শেষে বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হতে চলেছে৤‘ [চিঠি, কল-২৯ থেকে রমা মুখার্জি, দৈনিক স্টেটসম্যান, ৪ আগস্ট, ২০০৬ শুক্রবার, পৃঃ-৪]
বাংলাদেশের ইত্তেফাক দৈনিকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ রফিকুল ইসলাম যে নিবন্ধ লিখেছেন তার সুরও অতি নেতিবাচক৤ ”ভাষার প্রশ্নে আশরাফ-আতরাফ, সবাই বিভ্রান্ত৤ বাংলাদেশে এখন আমরা কোনো ভাষাই যথার্থভাবে শিখছি না, মাতৃভাষা বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় অর্থাৎ বাংলা বা ইংরেজি বা আরবি কোনো ভাষাই নয়, কারণ আমরা মাতৃভাষা ভালোভাবে না শিখে অন্য ভাষা শিখতে চেষ্টা করছি৤ বাংলাদেশের ভাষা পরিস্থিতি এখন চরম নৈরাজ্য ও বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে, যা থেকে আমাদের পরিত্রাণ নেই সহজে, যদি না আমরা মাতৃভাষা নিয়ে হীনমন্যতা পরিত্যাগ করতে পারি৤“ বাংলাভাষা নিয়ে আমাদের যে এত আশা আনন্দ গর্ব, এসব পড়ে, শুনে, সবই কেমন যেন ম্রিয়মাণ হয়ে যায়, মনে পড়ে সেই প্রবাদ বচন__ এত সুখ যদি কপালে তবে কেন তোর কাঁথা বগলে৤

বাংলা সেখানে রাষ্ট্রভাষা তবু দিনে দিনে বাংলা ভাষা সেখানে যেন গুরুত্ব হারাচ্ছে৤ যেখানকার বাংলাভাষা আন্দোলনের ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বের মুকুটে ”আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস“ হিসেবে স্বীকৃত সেখানেই বাংলা ক্রমে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছে৤ পড়ছে তার কারণ হল, বাংলাভাষা জীবিকার ক্ষেত্রে, এবং প্রশাসনিক স্তরে তার যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না৤ প্রায় বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশের এই ইত্তেফাক দৈনিকেই দেখেছি বাংলা আধুনিক গান রচনার নামে সেখানে যে বিকার দেখা দিয়েছে তা যে-কোনও মানুষকে ভীষণ আহত করবে৤ অথচ সেখানকার বাংলা নাটক বিশ্বের গৌরব৤ দুর্মুখেরা বলে পাকিস্তানি আমলে নিরক্ষর থাকার কারণে সেখানে তাঁদের চাপেই একুশের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়েছে৤ এখন তা হতে পারত না, অর্ধ শতবছরেরও বেশি পেরিয়ে এখন সেখানে শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে মানুষ আর নিরক্ষর নেই৤ এ কারণেই পঃবঙ্গে একুশে হতে পারে না, সেযুগেও হতে পারত না৤ বাঙালি যত লেখাপড়া শেখে ততোই তারা সুদাস হয়ে ওঠে, যতই লেখাপড়া শেখে ততোই মা-বাংলা তাদের মাসি হয়ে ওঠে৤ এখানে মানুষ শিক্ষিত শতদল৤ এখানে সভামাঝে বাংলার নেই স্থান৤ চোখ ফুটলেই তারা নিজের নিজের পথ খুঁজে নেয়, কী দরকার তার বাংলায়? ’মাই সারভেন্ট‘ বলে সহপাঠী কলেজ-বন্ধুর কাছে হয় নিরক্ষর পিতার পরিচয়!
ভাষা কেবল কোনও আবেগের ব্যাপার নয়, ভাষা হল জীবন-জীবিকার মূল হাতিয়ার৤ সেই হাতিয়ারকে যদি আমরা ঠিক ঠিক ভাবে কাজে না লাগাই, বা অযোগ্যতার জন্য কাজে লাগাতে না-পারি, তবে তা আমাদের জীবিকাকে সংকুচিত করবে, ভাষাকে করবে প্রতিহত৤ আমাদের চির-বামন মূর্তি তাতে ম্লানই হবে, উজ্জ্বল হবে না৤
বাংলার সকলেই কবি, কারণ বঙ্গভাষীরা সকলেই কবিতা লিখতে পারেন৤ যাঁরা লেখাপড়া জানেন তাঁরা তো কবিতা লেখেনই, যাঁরা এমনকি নিরক্ষর তাঁরাও মুখে মুখে কবিতা রচনা করতে পারেন৤ সকল বাঙালিরই কবি প্রতিভা আছে৤ এটা বাঙালির নিজস্ব প্রতিভা যতটা, তার চেয়েও বেশি হল প্রকৃতির অবদান৤ উষ্ণ জলহাওয়া এবং আর্দ্র পরিবেশ, অনায়াস পেলব পলির পরম উর্বর নম্র নরম ভূমি মানুষকে করেছে আলস্যে শিথিল, নিদ্রাতুর কবি৤ মানুষ এখানে ভাবের আবেগে উচ্ছ্বসিত, জাল বুনে চলে কেবল কল্পনার পাখায় ভর করে৤ এটা এখানকার সরস ভূমির কোমল মানুষের প্রকৃতি৤ আম্মো এর বাইরে নয় রে ভাই!
জীবনের লড়াই এখানে এত কম যে মানুষ সত্যিকারের জীবিকার লড়াই প্রায় জানেই না৤ কঠিন পাথুরে জমিতে গ্রাসাচ্ছদনের যে কঠিন লড়াই তা এখানে প্রায় অজানা৤ নদীর বালি খুঁড়ে বা পাথুরে মাটির কৃপণ হাত থেকে চামচি ভরে জল সংগ্রহ করে কলস ভরে দূর দূরান্ত থেকে এনে পান করার অভিজ্ঞতা এখানে কোথায়? জীবন এখানে কঠিন নয়, বরং তুলনায় ফুলের পাপড়ি বিছানো বলা যায়৤ প্রকৃতি তার বৈভব নিয়ে হাজির হওয়াতেও এখানকার মানুষ তা তুলে নিতে পারছে না৤ তাই তারা চাষির দারিদ্র্য থেকে বণিকের সম্পদে বৃত হতে পারল না৤ প্রকৃতির তুলতুলে নধর পুতুল হয়েই রয়ে গেল৤
যদি বলি__’কবিতা পাঠের চেয়ে শেয়ারের দাম পাঠ বেশি জরুরি৤‘ যেমন এক চিঠিতে লিখেছি ’আমার সময়‘ সাময়িকে(টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশন)__ এপ্রিল ২০০৮ সংখ্যায়, তবে কবিরা গোঁসা করবেন৤ কবিরা রাগ করবেন মানে সকলেই রাগ করবেন, কারণ কবি তো সকলেই৤ কোলকাতার চায়ের ভাঁড়ে অনেক ক্রুদ্ধ সিগারেট ও বিড়ি পুড়বে৤ কিন্তু তবু কোনও কোনও বোকা তো বলেই ফেলে __রাজা তোর কাপড় কই?
যারা বোকা তারা দাম্ভিক হয়, নিজেদের তারা নিজেরাই তোল্লাই দেয়, সেদিন(২৬ এপ্রিল-২০০৮) একজন মুখফোড় তেমন কথাই বলে দিলেন দৈনিক স্টেটসম্যানে৤ বললেন, ’বাঙালিরা অল্পেতেই আত্মঅহংকারে মত্ত হয়৤ ... তাঁরা চায়ের দোকানে বীরত্বের তুফান তোলে আবার বাড়িতে ফিরে অলস জীবন যাপন করেন৤ বাঙালি নিজেকে ভাবে মহাজ্ঞানী... নিজের কর্ম ছেড়ে অন্যের মন বিশ্লেষণে অমূল্য সময় অতিবাহিত করে৤... ভারতবর্ষে বাঙালিই একমাত্র জাতি যে নাকি নিজের মাতৃভাষাকে অবহেলা করে৤ যে জাতি ইতিবাচক ছেড়ে নেতিবাচক নিয়ে মাথা ঘামায় তাদের উন্নতি সুদূরপরাহত৤‘__শ্যামসুন্দর, শিলিগুড়ি-৬৤
বাঙালিরা যে চরম নির্বোধ তার এক স্পষ্ট প্রমাণ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি৤ তারা বাংলাকে দখল করে সারা ভারত দখল করল, শুধু তা-ই নয়, বাংলা ও ভারতের সম্পদ সংগ্রহ করে সারা বিশ্বেই তারা নিজেদের প্রভাব দারুণভাবে বাড়িয়ে ফেলল, শুধু অর্থনৈতিক প্রভাবই নয় রাজনৈতিক প্রভাবও৤ সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব বাড়ালো ইংরেজদের, ইংরেজ রাজের৤ এদেশে ইংরেজ এসেছিল বণিক হিসেবে, সম্পদ না থাকলে বণিকের নজর কেন পড়বে বাংলার উপরে? শুধু কি ইংরেজ? অন্য অনেক জাতিই যেমন__ ফরাসি, নেদার ল্যান্ড(হল্যান্ড বাসী, ওলন্দাজ, ডাচ), পর্তুগাল, স্পেন ইত্যাদি







জাতিগুলি আগেই ’ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি‘ তৈরি করেছিল৤ খেয়াল করুন যে পঃবঙ্গের চন্দন নগরে ফরাসি উপনিবেশ ছিল৤ চুঁচুড়ায় ছিল ওলন্দাজ উপনিবেশ৤বাংলার সম্পদে আকৃষ্ট হয়ে, লুব্ধ হয়ে তারা সকলেই গঠন করেছিল নিজ নিজ জাতীয় ’ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি‘৤ বাগদাদ রোম চিনে যাওয়া বাংলার মসলিন শুধু বিদেশি লুঠেরাদেরই নয়, দেশি লুঠেরাদেরও বাংলার উপরে লুব্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, আর তারাও কম হামলে পড়েনি এখানে৤ জল জঙ্গল জলৌকার (জোঁক) বঙ্গের এই ’হীন ব্রাত্য দেশের‘ মানুষ বাঙালি(শাস্ত্রে নাকি বলা হয়েছে ”বঙ্গে যেও না, কারণ সেটা হল ব্রাত্যদের দেশ“), নির্বিকার, নিশ্চেষ্ট৤ ”বাঙালি“ শব্দটির মানেও নাকি পতিত, হীন৤ অসংগঠিত অবোধ জাতি তাই সবার পায়ের তলায়৤ কয়েক হাজার ক্রোশ দূর থেকে লুঠেরারা কত শক্তি নিয়ে আসতে পারে? শুধু হেঁটে গেলে যারা পায়ের চাপে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তারা নাকি মাত্রই ১৮ অশ্বারোহী নিয়ে বাংলা দখল করে নেয়! (আশি বছরের বেশি বয়সী)বৃদ্ধ রাজা রাজধানী নবদ্বীপ থেকে পূর্ববঙ্গে নিজরাজ্যের অন্য অংশে পালান পিছনের দোর দিয়ে প্রাণ নিয়ে৤ অবশ্য রাজা ছিলেন খুবই গুণী জ্ঞানী এবং দানী৤ বাংলার গ্রামে দেখেছি মগ(’মঙ‘ আরাকান বাসী/বর্মী) এসেছে বলে সাড়া পড়ে যেত, তাদের অত্যাচারের ভয়ে৤ অথচ তারা আসত এক-দুজন গ্রামের বাড়ির আনাচকানাচ থেকে গোসাপ ধরে নিয়ে যেতে৤ এই ভয় অত্যাচারের প্রাচীন স্মৃতি বহন করে৤
অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও বলি, বিশ্বের বর্তমান এই যে শিল্প বিপ্লব, শিল্প বিকাশ, আধুনিক সভ্যতার বিকাশ তার পিছনে এই নিতান্ত ভেতো বাংলারই লুণ্ঠিত সম্পদের বিপুল অবদান আছে, যদি না সে অবদান পুরোটাই হয়! আধুনিক সভ্যতার বিকাশের মূল পুঁজিটা এসেছে হয়তো এখান থেকেই৤ তাকে চক্রবৃদ্ধি আকারে বাড়িয়ে বাড়িয়ে সভ্যতা ফুলে ফলে বিকশিত হয়েছে৤ বাংলার চাষির লাল রক্ত অনেক ঝরেছে জাহাজভরা রপ্তানির নীল চাষে৤ নীল কেবল গাছের নির্যাস নয়, সে তো মনুষ্য-দেহ নির্যাসই৤ বাংলায় (নদিয়াতে) নীল বিদ্রোহ হয় ১৮৫৮-এ(সিপাহি বিদ্রোহের এক বছর পরে)৤ ইন্ডিগোফেরা (নীলগাছ)উদ্ভিদ থেকে নীল নিষ্কাষণের বাণিজ্য হয়তো পুষ্ট করেছে রাসায়নিক নীল-উদ্ভাবনের গবেষণা৤ অন্তত যতদিন না রাসায়নিক-নীল উদ্ভাবিত(জুলাই ১৮৯৭) হয়ে নীলচাষ রহিত হয়, ততোদিন পরোক্ষ পোষণ তো হয়েছেই৤

[ Botanical name: Indigofera tinctoria গুল্ম জাতীয় ছোট ছোট গাছ৤ উষ্ণ আবহাওয়ায় জন্মায়, প্রায় পেয়ারা পাতার মতো দেখতে সবুজ কিন্তু নরম পাতা, দুই থেকে চার ফুট লম্বা গাছে নানা শাখার শিসের আগায় গোলাপি বা পিংক রঙের থোকা থোকা ফুল৤ Natural indigo was the only source of the dye until July 1897
....part in the Bengali indigo revolt of 1858 called Nilbidraha.
...The name indigo comes from the Roman term indicum, which means a product of India.This is somewhat of a misnomer since the plant is grown in many areas of the world, including Asia, Java, Japan, and Central America.]

কোনও বাণিজ্যের সম্ভাবনা যদি একটাকা বিনিয়োগ করে ৳.৫০০০/-(পাঁচ হাজার টাকা) মুনাফা হয়, তবে কে না ঝাঁপাবে নীল সাগরের জলে জাহাজ নিয়ে, দূর দেশে নির্দায় নীল চাষের জন্য৤ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি হল ৩১ ডিসেম্বর, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে(আর তাদের প্রতিনিধি জোব চার্নক ১৬৯০-এর ২৪আগস্ট কোলকাতায় পা দেয়)৤ রানি প্রথম এলিজাবেথ তাদের বাণিজ্য সনদ বা বাণিজ্যের অনুমোদন দিলেন৤ (Thanks to the naval route that explorer Vasco da Gama discovered, riches from the Orient were pouring into Europe. With other nations importing fortunes in goods and plunder[লুঠ], Queen Elizabeth decided England should get some, too. So she granted the charter for the East India Company.) আর সেটা কেবল অনুমোদনই নয়, সক্রিয় সহযোগিতায়ও নেমে পড়লেন তিনি৤ কারণ এর আগেই তিনি তার স্বাদ পেয়ে গেছেন কী পরিমাণ মুনাফা সেখান থেকে পাওয়া যাবে৤ একজন সহযোগী ব্যবসায়ী আগেই ৫০০০(পাঁচ হাজার) গুণ মুনাফা করেছেন দেখে৤
যার বে‘ তার মন নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই৤ যদিও বাঙালির ঘুম আর ভাঙে না৤ ইংরেজদের ”কুসঙ্গে“ পড়ে এযুগে কিছুটা বাণিজ্য তারা করেছে বটে, কিন্তু বাণিজ্য প্রয়াস বঙ্গীয় সামাজিক সমর্থন তেমন পায়নি, তাই তা শেষ অবধি সামাজিক প্রক্রিয়া হয়েও ওঠেনি৤ দ্বারকানাথ আদির তা ব্যক্তিগত উদ্যোগ হয়েই থেকে গেছে (ম্লেচ্ছ সঙ্গ করার জন্য পারিবারিকভাবেও দ্বারকানাথ বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হন)৤ বাঙালি বণিক জাতি হয়ে ওঠেনি৤ হয়তো হতে পারত ইংরেজদের ’কুসঙ্গে‘ পড়েই, কিন্তু ইংরেজই তো করনিকের চহিদা মেটাতে বাঙালি ’বাবু‘ ধরে ফেলল৤ বাঙালি যেটুকু নড়ে বসেছিল তার চেয়ে বেশি গর্তে বোধ হয় তারা সেঁধিয়ে গেল৤ বাঙালির মানসিকতাই হয়ে গেল করনিক বৃত্তিপৃক্ত৤
বাঙালিকে সরকারি করনিক নেওয়া যতদিন না বন্ধ হবে ততোদিন বাঙালি আধুনিক হতে পারবে না৤ সাজ পোশাক তার প্যান্ট শার্টে পৌঁছেছে অনেক দিন আগেই, কিন্তু মন থেকে যায়নি তার কেরানির বীণ৤ কেরানি মানে কেবল কলম পেশা আপিসবাবু নয়, কেরানি মানে একটা মানসিকতা, সেখানে ইঞ্জিনিয়ারও আসলে কেরানি, বিজ্ঞানীও তাই, ডাক্তারও ব্যতিক্রম নয়__ যারা নড়ে বসে না, যারা নতুন কোনও উদ্যোগ নেয় না, যারা বাণিজ্যে যায় না৤ মন রয়ে যায় ঊষর হয়ে, ভূমি পড়ে থাকে অহল্যাভূমি হয়ে, সাগর কলকল ছল ছল করে, সেখানে বাণিজ্যপোত অকূল মহাসমুদ্রের তরঙ্গে আঘাত করে না৤
তবে এখন মেয়েরা পোশাকের খোলস ছাড়ছে, শাড়ি থেকে শালোয়ার ধরছে ক্রমে৤ যদিও সে পরিবর্তন কেবল শখ হয়ে থাকছে, কেবলই যেন তা পোশাকের শাক দিয়ে...৤ যদি তা সত্যি কোনও দিন প্যান্ট শার্টে পৌঁছায়, বলা যায় না বাঙালি হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে, আবার প্রাচীন দিনের মতো, মসলিন পণ্যের সম্ভার কিংবা পণ্য কম্পিউটার নিয়ে পৌঁছে যাবে বাগদাদ রোম চিন৤ আসুক, আসুক সে দিন৤
বাঙালি যে মেধা সম্পন্ন জাতি সেটা মানতেই হবে৤ ইতিহাসের গতিপথ ধরেই সেটা ঘটেছে৤ নৃবৈজ্ঞানিক ব্যাখাটা এই রকম যে, বহু জাতির সংমিশ্রণে মানুষের মেধার বিকাশ ঘটে৤ বাঙালি একটি নিবিড় মিশ্র জাতি৤ শক হুন পাঠান মোগল দ্রাবিড় অস্ট্রিক আর্য, কে নেই এই চিত্র পটে? সারা বিশ্বে এমন মিশ্র জাতি দ্বিতীয়টি পাওয়া ভার৤ জীবিকার এবং জীবন ধারণের এমন সহজ দেশের প্রতি সকলেই আকৃষ্ট হয়েছে, এসেছে__ সহজ জীবনের ভাগীদার হয়ে থেকে গেছে চির স্থায়ী হয়ে৤ ফলে বাঙালির মেধার উদ্বোধ ঘটেছে৤
চার জন বাঙালি এযাবৎ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন৤ (১)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, (২)অমর্ত্য সেন (৩)মুহাম্মদ ইউনুস, আর চতুর্থ ব্যক্তি হলেন সত্যজিৎ রায়, তিনি পান নোবেলের সমান চলচ্চিত্রের স্পেশাল অস্কার পুরস্কার, এছাড়া ফরাসি রাষ্ট্রপতি এদেশে এসে তাঁকে সে-দেশের সেরা সম্মান ’লিজিয়ন অব অনার‘ জানিয়ে যান৤
আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, বিশ্বের ১০০ শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদের যে তালিকা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সেখানে আছেন চারজন বাঙালি৤ (১)অমর্ত্য সেন, (২)মুহাম্মদ ইউনুস, (৩)রামচন্দ্র গুহ, (৪)আশিস নন্দী [উল্লেখ্য সমগ্র চিন থেকেও চারজনই এই তালিকায় আছেন৤ জনসংখ্যায় বাঙালি ২৩ কোটি, চিনা ১৩৩ কোটি]৤
অনেক বাঙালি-মেধা সঠিক প্রচার ও পৃষ্ঠপোষণের অভাবে বিশ্বপটে বন্দিত হননি৤ আর এরকম মানুষদের তালিকা খুব ছোট হবে না৤
একটা মানসিক প্রবণতাও বাঙালির মেধার কিছু অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ, তা হল আসলে বাঙালির একটি দোষ__ বাঙালি ভিতু৤ দোষটাও যে সব সময়েই দোষ, তা নাও হতে পারে, যেমন বাঙালি ঘরকুনো(কারণ এত আরামদায়ক আর সহজ জীবনধারণের সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যাবে হে!), আর তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি-র ক্ষেত্রে এই ঘরকুনো হওয়াটাই বাঙালির এক প্লাস পয়েন্ট, অন্যদের চেয়ে তারা চাকরির পরিবর্তন করে কম, ফলে (বেঁটে খাটো হলেও)তারা আইটি(পাত্রীর) ক্ষেত্রে বেশি চাহিদার পাত্র! (কোলকাতা আইটি-র ক্ষেত্রে একটি প্রধান শহর বলে সাম্প্রতিক তালিকায় দেখা গেছে)৤
এখন বাঙালিকে বিজ্ঞান, বাণিজ্য, শিল্প ও প্রযুক্তির দিকে চোখ ফেরাতে হবে৤ চোখ ফেরাতে হবে অতি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি এবং ন্যানো টেকনোলজি ও বায়োটেকনোলজির দিকে৤ আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এই তিনটি শাখা যেভাবে এগোচ্ছে যে আর দেরি নয়৤ ক্যাচ ‘এম ইয়ং৤
সংকট যা, সম্ভাবনাও তা-ই৤ সরকারি চাকুরি কমছে, বাঙালি খুবই ভাবিত৤ হায় হায় কি হবে? চাকরি কোথায় পাওয়া যাবে? অন্যেরা তো চাকরি করে না, তারা ব্যবসায়ে ব্যস্ত৤ সরকারি চাকরি[চাক(র গি)রি] খোয়া গেলে বাঙালির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে৤ আর সেই আকাশটা ঠেকাতে তাকে ময়দানে নেমে পড়তে হবে৤ অন্যদের যে কী হবে তা বলা যায় সহজে, তাদের কোনও হেলদোল নেই এব্যাপারে, আসল তেতোটা গিলতে হবে বাঙালিকেই৤ গিলুক সেটাই তার কাছে বড় আশীর্বাদ৤ বাঙালি জাগবে৤ বাঙালি আর ভিখিরি থাকবে না৤ সরকার যত তার সরকারি ভৃত্য কমাবে ততোই বাঙালির বাণিজ্যতরী একটু একটু করে পালে হাওয়া পাবে৤ ধাক্কা মেরে জলে ঠেলে না ফেললে তার, এই পিপুফিশু-র দল নোনা জল না-গিললে কখনও শিখবে না সাঁতার৤ হয়তো একদিন বাগদাদ রোম চিন থেকে আহৃত অচেনা সম্পদে বাঙালির ঘর ভরে যাবে৤ সপ্তডিঙা মধুকর আর প্রাচীন কল্পনার বস্তু হয়ে থাকবে না৤ পূর্বমেদিনীপুরের রূপনারায়ণ নদীর পশ্চিম তীরের তাম্রলিপ্ত, মুর্শিদাবাদের চিরুতির কর্ণসুবর্ণ, আর উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার জামালপুরের কাছে যমুনা নদীর তীরে পাহাড়পুর আবার আবার জনকলকল্লোলে ভারি প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে৤ বদর বদর করে চলো যাই ধরি হাল, তুলি পাল৤
মেধার সাথে উদ্যোগের সহযোগ, বাঙালিকে করে তুলবে বাণিজ্যপারগ৤

সাগরে ভাসিয়ে পোত কম্বু কণ্ঠে ওরে তোরা সুর ধর--বদর বদর৤ বদর বদর৤




-------------------------__ ০০ __


No comments:

Post a Comment