Saturday, July 25, 2015

বাংলা বানানের নিজস্বতা নেই

বাংলা বানানের নিজস্বতা নেই


 বাংলা বানানের নিজস্বতা নেই




বাংলা বানানের নিজস্বতা নেই





 


লেখাটি ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’AhanLipi-Bangla14 ফন্টে পড়লে লেখাটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে৤ ফন্ট ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip





বাংলা বানানের নিজস্বতা নেই
মনোজকুমার দ. গিরিশ
মণীশ পার্ক, কোলকাতা, ভারত

        জল যেমন যে পাত্রে রাখা হয় তার আকৃতিও হয় তেমনি, বাংলা বানানও যেন ঠিক তাই৤ বাংলা শব্দ ‘আত্তিয়’, সংস্কৃত করে লেখা হয় ‘আত্মীয়’, আর ইংরেজিতে ‘বাংলা’ শব্দটিকেই লেখা হয়, বেংগলি Bengali, আর এখন শুরু হয়েছে হিন্দির অনুকরণে ‘গোয়ালিয়র’-কে গ্বালিয়র লেখা, কিংবা ইংরেজি শব্দের বানান Quiz ক্যুইজ় লেখা৤  
        ‘বাংলা’ একটি বিশেষ্য পদ, অর্থাৎ নামশব্দ, তারও কি অনুবাদ হবে? তাহলে ‘কালীপদ রায়’ নামটি কি লেখা হবে ‘ব্ল্যাকফুটেড জাজ্‌মেনট’ Blackfooted Judgement. অথবা কৃষ্ণধন মিত্র হবে ‘ব্ল্যাকমানি ফ্রেন্ড’  Blackmoney Friend.
        ‘বাংলা’ শব্দটি কেন ইংরেজিতেও “বাংলা” Bangla/BANGLA লেখা হবে না? এটাও ইংরেজি করে লিখতে হবে Bengali? এই আশ্চর্য ব্যাপার বাংলায় ছিল, আছে, এবং হয়তো  থাকবেও৤ এজন্যই বাংলা ‘আত্তিয়’ সংস্কৃতে লেখা হয় ‘আত্মীয়’৤ কোনও বাঙালি কি এই শব্দটিকে “আত্‌মীয়” বলে উচ্চারণ করে? করে না৤ কারণ তা বাংলা নয়৤ যে শব্দ যেমন করে বলা হয়, বা উচ্চারণ করা হয়, সে শব্দটি তো ঠিক তেমনটি করেই লেখা হবে, নাকি তা অন্যরকম করে লেখা হবে? মুখে ‘বিড়াল’ বলে তা “মার্জার” লিখব কি? নাকি তা ‘মেকুর’ লিখব? ‘মেকুর’ও তো বিড়ালের প্রতিশব্দ৤ তাহলে মুখে ‘বিড়াল’ বলে অন্য কিছু লিখতে নিশ্চয়ই অনুমোদন পাওয়া যাবে না, তাহলে “বাংলা” বলে ইংরেজিতে Bengali লেখা হবে কেন? তারা সায়েব বলে? আমাদের প্রভু বলে? হোক না তারা প্রাক্তন, তবুও তো এককালে তারা প্রভু ছিল! এই প্রভুত্ব ব্যাপারটা বাঙলির মাথায় খুব জোরালো কাজ করে৤ অতীত ইতিহাসও সে কথা বলে, আধুনিক ইতিহাস কেন আর অন্য কথা বলবে?
        ‘গোয়ালিয়র’-কে গ্বালিয়র লেখার একটা জোরালো যুক্তি হল সেখানকার মানুষ এমনি ভাবেই তা বলে৤ এটা অকাট্য যুক্তি৤ বেশ তো বাঙালিরা তো “আত্তিয়” বলে, সেটা কেন তবে “আত্তিয়” না লিখে “আত্মীয়” লেখা হবে? হবে এই জন্য যে, তা সংস্কৃত শব্দ৤ তাহলে সেই প্রভুত্বের ব্যাপারটা তো এসেই গেল৤ বাংলা ভাষাটা সংস্কৃত নয়, তা বাংলাই৤ আর “বাংলাটা” বাংলা করেই লিখতে হবে৤ সংস্কৃত আমাদের মা হোক, আর না-ই হোক, বাংলাটা বাংলাই৤ মায়ের লেজুড় হয়ে কি সন্তান চিরকাল তার কোলে চড়ে চলবে? প্রাচীন সংস্কৃতভাষা কি বাংলা ভাষার ‘বাংলা’ হবার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে? যদিও সংস্কৃতভাষা বাংলা ভাষার জননী নয়, বাংলার এই জননী ধারণাটা ভুল৤ ঠাকুরমাকে জননী বলা চলে না, ঠাকুরমার ঠাকুরমাকেও নিশ্চয়ই জননী বলা চলে না৤ আমরা সেটাই করে চলেছি৤ সংস্কৃত ভাষার মহাপণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় বলেছেন, “অনেকের সংস্কার বাংলাভাষা সংস্কৃতের কন্যা৤...আমি কিন্তু সংস্কৃতকে বাংলার অতি-অতি-অতি-অতি-অতি-অতিবৃদ্ধ প্রপিতামহী বলি৤ পাণিনির সময় সংস্কৃতকে ভাষা বলিত অর্থাৎ পাণিনি যে সময় ব্যাকরণ লেখেন তখন তাঁহার দেশে লোকে সংস্কৃতে কথাবার্তা কহিত৤ তাঁহার সময় আর-এক ভাষা ছিল তাহার নাম 'ছন্দস'__ অর্থাৎ বেদের ভাষা৤ বেদের ভাষাটা তখন পুরানো, প্রায় উঠিয়া গিয়াছে৤ সংস্কৃত ভাষা চলিতেছে৤ পাণিনি কত দিনের লোক তাহা জানি না, তবে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ, সপ্তম শতকের বোধ হয়৤ তাহার অল্প দিন পর হইতেই ভাষা ভাঙিতে আরম্ভ করে৤ বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পরই তাঁহার চুলার ছাই কুড়াইয়া এক পাথরের পাত্রে রাখা হয়৤ তাহার গায়ে যে ভাষায় লেখা আছে, সে ভাষা সংস্কৃত নহে;তাহার সকল শব্দই সংস্কৃত হইতে আসা, কিন্তু সে ভাষা সংস্কৃত হইতে অনেক তফাত হইয়া পড়িয়াছে৤ তাহার পরই অশোকের শিলালেখের ভাষা৤ তাহার পর মিশ্রভাষা, ইহার কতক সংস্কৃত ও কতক আর-একরকম৤ একটি বাক্যে দুরকমই পাওয়া যায়৤ এভাষার বইও আছে, শিলালেখও আছে৤ তাহার পর সুঙ্গ ও খারবেলদিগের শিলালেখের ভাষা৤ তাহার পর সাতকর্ণিদের শিলালেখের ভাষা৤ তাহার পর পালিভাষা৤ তাহার পর নাটকের প্রাকৃত৤ সকল প্রাকৃতের সহিত আমাদের সম্পর্ক নাই৤ মাগধীর ও ওঢ্র মাগধীর সহিত আমাদের কিছু সম্পর্ক আছে৤ তাহার পর অনেক দিন কোনো খবর পাওয়া যায় না৤ তাহার পর অষ্টম শতকের বাংলা৤ তাহার পর চণ্ডীদাসের বাংলা৤ তাহার পর বৈষ্ণব কবিদের বাংলা৤ সব শেষে আমাদের বাংলা৤” (পৃঃ- ৩৬৭,  অষ্টম বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মেলনের সাহিত্য-শাখার সভাপতির সম্বোধন, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ)৤ নানা বিবর্তনের মাধ্যমে, নানা আঞ্চলিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বাংলা ভাষার জন্ম৤ এই মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ই নেপালের রাজদরবার থেকে বাংলার আদি পুথি উদ্ধার করে প্রকাশ করেন ও তার নাম দেন “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধগান ও দোহা”৤ অর্থৎ বাংলা ভাষার আদি উৎস তিনিই উদ্ধার করেছেন৤ তাঁর কথাকে হেলা করার সাধ্য কারও নেই৤
        হরপ্রসাদ শাস্ত্রী(১৮৫১-১৯৩১, জীবনকাল ৮১ বছর) রচনা-সংগ্রহ, দ্বিতীয় খণ্ডের ভূমিকায় বলা হয়েছে-- “বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আজ আমরা যে পূর্ণতায় পাচ্ছি, তার তথ্যভিত্তিক মূল্যবান উপাদান বেশিরভাগ তাঁরই আবিষ্কার”৤ “...চর্যাগীতিতে প্রমাণ হল বাংলা সাহিত্যের জন্ম বৌদ্ধ সহজিয়াকবিদের হাতে”৤ “...তাঁর সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্ব এই যে, যতটা কাজ এগিয়ে নিতে পেরেছিলেন তা থেকে সংগঠিত ধারণায় বাঙালি সংস্কৃতির এবং বাংলা সাহিত্যের একটি কালানুক্রমিক পুরো ছবি চোখের সামনে দেখতে পেতেন”৤ “... বাংলায় “আর্যের মাত্রা বড়োই কম, দেশীয় মাত্রা অনেক বেশি”৤ “বাঙালি মূলত বর্ণসংকর৤ ব্রাহ্মণ্য উপাদান, বৌদ্ধ উপাদান, ইসলামের উপাদান-- যা-কিছু এখানে এসেছে কিছুই মূলের শুদ্ধতা বজায় রাখতে পারে নি৤ বরং এখানকার আদি জনবৃত্তের ধ্যান-ধারণার আনুগত্য মেনে নিয়েছে৤বাঙালির এই খাঁটিত্ব তাই শাস্ত্রীমশায়ের সব ভাবনার ভিত্তিতত্ত্ব৤ ... বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যে এই বাইরে থেকে পাওয়া উপাদান আত্মস্থ করে সমৃদ্ধ হয়েছে, স্মার্ত ব্রাহ্মণ ঘরের ছেলে হরপ্রসাদই অন্ধ বিরুদ্ধতার মুখে দাঁড়িয়ে একথা বার বার বলেন৤ কারণ তিনি মুক্তমনে এই সত্য মানেন যে, “গত ৭০০ সাত শত বৎসর ধরিয়া মুসলমান ছাড়িয়া বাংলার কোনো কাজই হইতেছে না” ...এমন-কি সাহিত্য পরিষদে প্রশ্ন তোলেন, “বাঙালি ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্য যে-সকল সংস্কৃত গ্রন্থ লিখিয়া গিয়াছেন, তাহার উপর বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের অধিকার বিস্তার করিতে যাইতেছেন, তবে বাংলায় বসিয়া যাঁহারা ফারসি, উর্দু ও মুসলমানি বাংলায় বহু-সংখ্যক পুস্তক লিখিয়াছেন, তাঁহাদিগকে বাদ দেন কী করিয়া? সেও তো বঙ্গীয় সাহিত্য!”(ভূমিকা, পৃঃ ৩১-৩২)৤
        বাংলাভাষায় লৌকিক প্রভাব তাই বেশি মনে হয়৤ বৌদ্ধ, মুসলিম প্রভাবও প্রবল৤ বৌদ্ধ সাহিত্যই প্রথম বাংলা ভাষার উপাদানের ধারক৤ তাই তাকে জোর করে সংস্কৃতমুখী করলে তার সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না৤ এযেন এক গাছের ছাল অন্য গাছে লাগানোর চেষ্টা,  কঠিন শুধু নয়, অসম্ভব বলাই ভালো৤ তাই বাংলার লৌকিক প্রভাবের দিকে নজর রেখে তাকে সেভাবে পুনর্গঠিত করতে হবে৤ বাংলা ভাষার যা স্বাভাবিক গতি তাকে সেভাবে চলতে দিতে হবে, তবেই তা সহজ, সুন্দর আনন্দদায়ক হবে৤
        দু’একদিন আগে(২৩/০৮/২০১৪) একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল টিভিতে বাংলায় মহাভারত প্রচার নিয়ে৤ তার কথা বাংলায় মহাভারত বুঝতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে, হিন্দিতে সহজে বুঝতে পারা যাচ্ছে৤ কারণ বাংলাটা খুব কঠিন ভাষা৤ আমি তাকে বললাম, মহাভারতের যে বাংলা অনুবাদ হয়েছে সেটা ভালো হয়নি৤ তাই তা ভালো বুঝতে পারা যায় না৤ বাংলাটা যে খুব কঠিন ভাষা এটা নানাজনের মুখে নানা সময়ে শুনেছি, এক সময়ে শিক্ষকতা করার কালে স্কুল ছাত্রীদের মুখেও তা শুনেছি, অথচ বাংলা তাদের মাতৃভাষা৤ আসল কারণটা হল সরল লৌকিক বাংলাকে চাপা দিয়ে রেখেছে সংস্কৃতমুখীনতা, বিশেষ করে বাংলা বানান৤ বাংলা শব্দ বাঙালি যেভাবে উচ্চারণ করে শব্দের বানান প্রায়ই তেমন করে লেখা হয় না৤ ফলে তার বানান যে কী, তা মনে রাখা কঠিন, এবং শব্দ বুঝতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়৤ আত্তিয়, পরিখ্খা মুখে বলে লিখতে হচ্ছে আত্মীয়, পরীক্ষা৤ বাংলাকে সংস্কৃতমুখী করার এই চেষ্টায় আসলে বাংলার মৌলিকতা হারিয়ে যাচ্ছে৤ বাংলা সংস্কৃতের চেয়ে খারাপ (নিম্নমানের) ভাষা হতে পারে, কিন্তু তাকে তারই মৌলিকতায় ফেরানো দরকার৤ আমার ফল টক বলে, অন্যের ফল মিশিয়ে তাকে টকমিষ্টি করা কেন?  এতে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে “বাংলাটা খুব কঠিন ভাষা”৤ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতো মহাপণ্ডিত দুএকজন মাত্র সাহস করে বাংলাকে ‘বাংলা’ করার কথা বলেছেন, কিন্তু শেষ অবধি তাতে ফল তেমন কিছু হয়নি৤ দশচক্রে ভগবান ভূত হয়েছে৤
        এবার বোধহয় কিছুটা উদ্যোগ নিয়ে বাংলাভাষাকে তার নিজস্ব স্থানে বসানো দরকার৤ তাতে বাংলা লেখা পড়া কিছুটা সহজ হবে, বাংলা বানান নিয়ে মানুষ স্বস্তি পাবেন৤ সংস্কৃত খুবই উন্নতভাষা সন্দেহ নেই, কিন্তু বাংলাভাষা তো বাংলাই সংস্কৃতের জুতোয় পা গলালে বাংলা হাঁটতে পারবে না৤ আর বাস্তবে হয়েছেও তাই৤ বাংলাভাষা চর্চাকারী পণ্ডিত অরুণ সেন বলেছেন, “বাংলা ভাষায় লেখালেখি, পড়া ও পড়ানো, বই বা পত্রপত্রিকার সম্পাদনা ও প্রকাশনার কিংবা প্রুফ-দেখার কাজ, ইত্যাদিতে যাদের জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে, তাদের বহু মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি অন্তত এই: বাংলা বানান নিয়ে যথেচ্ছাচার কত রকমের এবং কত গভীর হতে পারে তা চাক্ষুষ করা৤”(বানানের অভিধান, পৃঃ-১৭)৤
        বাংলা বানান নিয়ে যথেচ্ছাচার আগেও ছিল৤ বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া বলেছেন, “অনেকের বিশ্বাস:বাংলাভাষায় বানানসমস্যা বোধ হয় আধুনিক সৃষ্টি প্রাচীনকালে এমনটি ছিল না; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়৤ বর্তমানের তুলনায় প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ভাষায় এই সমস্যা সকল প্রকারেই জটিল ছিল৤” ['বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা', বাংলা একাডেমী:ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি-১৯৮৪, পৃঃ৮৭]। বাংলা বানানের এই জটিল সমস্যা বাংলাভাষাকে সামনে রেখে সমাধানের চেষ্টা করা হয়নি, বাংলা বানান সমস্যা মেটাবার ধ্রুবতারা ছিল এবং এখনও আছে সংস্কৃত৤ যদি লক্ষ্য ঠিক করা না হয়, যদি এমনিভাবে ভুল লক্ষ্য অনুসরণ করে বাংলা ভাষা ও বানানের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয় তবে তা কখনোই মিটবে না৤ বাংলাভাষার গন্তব্য যদি হয় পুবে তো তাকে চালানো হচ্ছে উত্তরে৤ তাহলে তা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাবে কেমন করে?
        অবশ্য সঠিক লক্ষ্যে সঠিক দিকে তার গতি পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন, পূর্ববঙ্গ সরকারী ভাষা কমিটি(১৯৪৯), এবং পরে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে জগন্নাথ চক্রবর্তী [বাংলা বানান সংস্কার, দেশ, ১১মার্চ, ১৯৭৮]৤ লক্ষ্য স্থির করলেও সংস্কারের সবকিছু একত্রে প্রয়োগ করার পরিমাণ বা মাত্রা তথা ডোজ ছিল খুবই ভুল৤ দুটি ক্ষেত্রেই তাই একই ব্যাপার ঘটেছে, তাই তা শেষ অবধি বাস্তবে কার্যকর হয়নি৤   
        বাংলা বানানের সবটা একত্রে সংস্কার করতে গিয়ে সংস্কার-করা বাংলা এমন হয়ে দাঁড়াবে যে প্রাথমিক দৃষ্টিতে তা আর আমাদের চেনা বাংলা থাকবে না, প্রাথমিক দর্শনেই মানুষ ভয় পাবেন, তাই একটু একটু করে তার বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে৤ যদি কাউকে খেতে দিয়ে সমস্তটা খাবার একত্রে মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তবে সেটা খাওয়া থাকে না, সেটা অত্যাচার হয়ে দাঁড়ায়৤ দুটি ক্ষেত্রেই বাংলা বানান সংস্কার নিয়ে সেই একই কাণ্ড ঘটেছে৤ সব খাবারটা একত্রে মুখে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টায় তা ব্যর্থ হয়েছে৤ প্রথমে উচ্ছে ভাজা দিয়ে ভাত মেখে খাবে, তার পরে ডাল বা তরকারি, তারপরে মাছ, শেষে মিষ্টান্ন বা পায়েস ইত্যাদি যা থাকবে তা খেতে হবে৤ সেটা না করে সব খাবারটা একত্রে মুখে ঢোকালে তার আর খাওয়া থাকে না, শাস্তি হয়ে দাঁড়ায়৤ সেভাবে বাংলা ভাষা বা বানান সংস্কার করা যাবে না৤ মানুষ তা কখনোই গ্রহণ করবেন না৤
        দেখতে হবে সবচেয়ে বেশি ভুল কোথায় হয়, সবচেয়ে সহজ ভুল কোন্‌টা হয়? সেই সর্বাধিক ভুলের একটি মাত্র বিষয় নিয়ে বানান সংস্কারের কাজটি শুরু করতে হবে৤ সবটা একত্রে নিয়ে ল্যাজেগোবরে হবার দরকার নেই৤ তাড়াহুড়ো করলে একাজ করা মুশকিল হবে৤ ধীরে ধৈর্য ধরে একটু একটু করে এগোতে হবে৤ হোক না ধীরে, অসুবিধে কীসের? কতকালই তো গেছে বয়ে, আরও কিছু কাল যাবে, কিন্তু ধীরে ধীরে আরোগ্য হবে৤ লাফাঝাঁপি করলে তাতে সোরগোলই হবে, কাজ কিছু হবে না৤
        দেখা যায় বাংলা বানানে মোট ভুলের আশংকা প্রায় ৩১.৭৬%শতাংশ৤ এর মধ্যে সবচেয় বেশি ভুলদায়ী ব্যাপারটি ই/ঈ, ি/ী-এর দখলে৤ এদুটির গোড়া তুলে ফেলতে পারলে মোট ভুলের প্রায় ২৫%শতাংশ ভুল ঘুচে যাবে৤ তাহলেই মানুষ বিরাট স্বস্তি পাবেন৤ তখন মানুষের মনে হবে আরও একটু এগোনো যাক৤ এর পরে দেখতে হবে কোন্‌ ভুলটি এর পরে সর্বাধিক, সেটিকে উচ্ছেদ করতে হবে৤ এভাবে একটি একটি করে বিষবৃক্ষ ছেদন করলে, প্রকল্প শেষে বাংলা বানানে আর ভুল হবে না৤ ভুলের সুলুক খুলে রেখে আমরা ভুল ঠেকাতে চাইছি৤ এভাবে ভুল ঘুচবে না৤
        বাড়ী, গাড়ী, শাড়ী বানান এখন শুধরে করা হয়েছে বাড়ি, গাড়ি, শাড়ি৤ এমনি করে শব্দ ধরে ধরে বানান সংশোধন করলে তা ভুলের গোলে আটকে থাকবে, কোনও দিনই তা নিরঙ্কুশ হবে না৤ বানান সংস্কার করতে হবে মূল এবং মৌলিক বর্ণ ধরে৤ তা হলেই বিষবৃক্ষ ছেদন করা যাবে, অন্যথায় তা কিছুতেই সম্ভব হবে না৤ এ ব্যাপারে আমার একটি লেখা দেখা যাবে, 'পুঁথি ও পত্র' ষাণ্মাসিক৤ ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, ২৫বৈশাখ ১৪২১ সংখ্যায়(বাংলা বানান বিভ্রাট-- বিভ্রাট বানানে?)
        বাংলায় আছে প্রায় দেড় লক্ষ শব্দ, তার কটা সংশোধন করা হবে? আর তার কটাই-বা সংস্কারের পরে সঠিকভাবে মনে রাখা যাবে৤ বৃক্ষের শাখা ছেদন করে বাংলা বানানের রোদন রোধ করা যাবে না, ভুলের গোড়া উচ্ছেদ করতে হবে৤
        সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে মনে হয় ২৫ বছর পরে বাংলায় বানান ভুল আর একদম থাকবে না৤ সেই লক্ষ্যে পণ্ডিতেরা একত্র হয়ে কাজ করলে বাংলায় বানান ভুল সত্যিই ঘুচবে৤ মানুষের বানান-দুঃখ ঘুচবে৤ বাংলা ভাষার প্রসার প্রচার উন্নয়ন ঘটবে, অন্য ভাষার মানুষও বাংলা ভাষার প্রতি বেশি আগ্রহী হবেন৤
        ধরি বাংলা থেকে ঈ/ী বাতিল করা হল, রইল কেবল ই/ি বর্ণ এবং চিহ্ন৤ আর  ব্যবহারিক সুবিধার জন্য ি-চিহ্নের বদলে ী-চিহ্ন কাজে লাগানো হল, অর্থাৎ ‘ই’ বর্ণ এবং ‘ী’ চিহ্ন বজায় রইল৤ তখন নীতি, রীতি, গীতি ইত্যাদির বানান আর ভুল করা যাবে না, কারণ তখন তা লেখা হবে-- নীতী, রীতী, গীতী৤ ভুল করবে কে, ভুল করবে কেমন করে? ভুল হবে কোথায়? “নীতি/রীতি/গীতি” লেখাই তো যাবে না৤ তখন ভুল করতে হলে অনেক ভেবে চিন্তে চেষ্টা করে ভুল করতে হবে, কারণ ভুলের সুলুকই তো বন্ধ হয়ে গেছে৤ যে হরফ নেই, যে চিহ্ন নেই তা কেমন করে লেখা হবে? এখন কি আমরা ঌচু(লিচু) লিখতে পারি৤ লি(ঌ) তো বাংলায় নেইই, তা আর কেমন করে লেখা যাবে? বাংলায় ঈ বর্ণ, এবং ‘ি’ চিহ্ন না থাকলে তেমনি তখন তা আর লেখা যাবে না৤ তখন নীতী, রীতী, গীতী ছাড়া লেখাই তো যাবে না, কোনও প্রকার ব্যতিক্রম থাকবে না, অর্থাৎ লেখা আর বানান সহজ হবে, বানান সম্পূর্ণ নিশ্চিত হবে৤

        বাংলায় এতদিন হাতে লেখা, এবং প্রেসে ছাপা হয়েছে যে গঠনের হরফে, পরে যখন কম্পিউটার ফন্ট(কম্পিউটারে লেখার জন্য হরফসমূহ) তৈরি হল কম্পিউটারে বাংলা লেখার জন্য, সেখানেও বাংলা লেখার হরফের মূল গঠনের কোনও পরিবর্তন হয়নি৤ প্রথম দিকের সে কম্পিউটার ফন্টগুলি হল কারিগরিভাবে নন-ইউনিকোড ফন্ট৤ পরে এলো কারিগরিভাবে অনেক উন্নত ইউনিকোড ফন্ট৤ ইউনিকোড ফন্ট হল আন্তর্জাতিক মানের ফন্ট৤ কিন্তু এবারেও বাংলা হরফের মূল গঠনের কোনও মৌলিক পরিবর্তন হয়নি৤ হরফের বাইরের গঠন দেখে এটি কোন্‌ ধরনের ফন্ট তা বোঝার উপায় নেই৤ বোঝাবার দরকারও অবশ্য তেমন নেই৤ কিন্তু বাংলা ফন্ট কারিগরিভাবে এগোলেও গঠনগত দিক দিয়ে এগোয়নি৤ যেমন একটি শব্দ ‘উষ৏ ’ বাংলা ইউনিকোড ফন্টেও লেখায় একইরকম রইল, লেখা হল ‘উষ৏ ’৤ অর্থাৎ সেই পুরানো কায়দায় দলাপাকানো মণ্ডহরফ বা যুক্তবর্ণ৤ অগ্রগত পদ্ধতিতে “উষ্ণ” লেখা হল না৤ এই যুক্তবর্ণ/যুক্তলিপি/লিপ্তলিপি/মণ্ডহরফ বাংলা লিখনের পক্ষে অগ্রগমনের সহায়ক নয়৤ এজন্য গঠন করা হয়েছে সেকেন্ড জেনারেশন  বাংলা ফন্ট(Second Generation Bangla Font), যেখানে যুক্তবর্ণ আর দলা পাকানো হবে না৤ যুক্তবর্ণের সম্পর্কিত অক্ষর/লিপি/হরফ/বর্ণগুলি পাশাপাশি বসবে৤ প্রথম হরফটি হবে ছোটো মাপের আর পরের হরফটি হবে যথাযথ৤ যেমন-- “শক্ত” লিখতে হলে, শ এবং ছোটো ক+ত=শ ত=শক্ত৤ এই একই নিয়মে সব সময়েই লেখা চলবে, ছাপা হবে৤ তবে এই মুহূর্তে হাতের লেখায় হঠাৎ করে এই পরিবর্তন আনা না গেলেও ধীরে ধীরে তা আসবে৤
        বাংলায় আছে প্রায় ৩৯৫টি যুক্তবর্ণ, এর অনেকগুলিই যুক্তবর্ণ/ যুক্তলিপি/ লিপ্তলিপি/ মণ্ডহরফ৤ কিন্তু সেরকম যুক্তবর্ণ/যুক্তলিপি/লিপ্তলিপি/মণ্ডহরফ করে আর তা লেখা তথা ছাপা হবে না৤ প্রচলিত কায়দা বর্জন করা হবে, অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে, যুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে৤
       
        সেকেন্ড জেনারেশন ফন্ট আরও উন্নত করে গঠন করা হয়েছে, নতুন একটি রূপ৤  সেটি ব্যবহার করে কিছু লিখন দেখা যাক-- 










ধারক বাক্য[প্যানগ্রাম](Pangram="every letter")৤ বাংলা ইউনিকোড ওপেন টাইপ ইউ.আই. ফন্টে একটি বাক্য লিখে দেখানো যাক, যেখানে বাংলা সকল বর্ণ-- স্বরবর্ণ(১১), ব্যঞ্জনবর্ণ(৩৯), সকল স্বরচিহ্ন (১০), সকল ব্যঞ্জনচিহ্ন তথা ফলা(৮) ইত্যাদি আছে৤ 
 
        বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের নিখুঁত গল্পটির ডালপালা অর্ধেক ছড়াতেই ঋতু ভুঁইঞা আর ঐন্দ্রিলা ধড়ফড়িয়ে দারুণ হৈ-হৈ করে উঠল__ ওঃ, ব্যাস্ এবার থামো তো, বুঝেছি বড্ডো পুরানো ঢঙের কেমন এক গল্প যার নীতিবাক্য হল,“মূঢ় আড়ম্বর ও আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ ক্ষতি”-- তাই না, এ্যাঁ? ০১২৩৪৫৬৭৮৯   ৳৫৬/-   ৉৫৬/-   


       

ইংরেজির মতো একই কায়দা অনুসরণ করে যদি বাংলায় নতুন প্রবর্তিত ‘যুক্তবর্ণ ব্যবস্থায়’ লেখা হয়, তবে কিন্তু ইংরেজি হরফ-ব্যবস্থার চেয়ে তা আরও ভালোভাবে লেখা যাবে৤ যেমন, যদি ইংরেজিতে stop, school, club লিখি তবে বাংলাতে সেটাই অনেক বেশি ভালোভাবে লেখা যাবে-- স্টপ, স্কুল, ক্লাব৤ এতে ভালোটা কী হল? স্টপ লিখতে ‘স্ট’-এর ছোটো -এর উচ্চারণ হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়৤ লেখার হরফে সেটা প্রতিফলিত (ছোটো হরফ তাই উচ্চারণও লঘু বা অল্পমাত্রার)৤ আবার স্কুল-এ ‘স্ক’-এ -এর উচ্চারণ এবারও হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়, লেখার হরফে এবারও সেটা প্রতিফলিত, ক্লাব লেখায় তেমনি ‘ক্ল’-তে -এর উচ্চারণ হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়, লেখার হরফে সেটাও প্রতিফলিত৤ ইংরেজিতে কিন্তু সেটা হয় না৤ ইংরেজিতে সকল হরফ সকল সময়েই পূর্ণ অবয়বে লেখা হয়৤ তাই ইংরেজিতে যুক্তবর্ণ তথা যুক্তধ্বনির উচ্চারণের সঙ্গে লিখনের সাযুজ্য কম থাকে৤ ইংরেজিতে কোনও বর্ণের উচ্চারণ লঘু হলেও হরফ কিন্তু সেই পূর্ণ অবয়বেরই থাকে৤ বাংলায় সেটা না হয়ে, লঘু উচ্চারিত ধ্বনির বর্ণ/হরফ-- লঘু তথা ছোটো হয়, তাই বাংলা যুক্তবর্ণের নতুন লিখন পদ্ধতি ইংরেজির চেয়ে যুক্তধ্বনি লেখার ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য হয়েছে৤

        বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ সহজ, কারণ প্রতিটি ব্যঞ্জনের সঙ্গে ‘অ’ ধ্বনির বর্ণটি অদৃশ্যভাবে লিপ্ত থাকে (inherent), নয়তো ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ কঠিন৤ বাংলায় এই লিপ্তি অপসারিত হয় যখন তা যুক্তবর্ণে একীভূত হয়, যেমন-- স্ট, স্ক, ক্ল৤ অর্থাৎ বাংলা বর্ণমালা সেমি এ্যালফাবেটিক চরিত্রের  হয়েও তা নতুন উপায়ে যুক্তবর্ণ গঠনে-- লিপ্ত ‘অ’ বিয়োজন ব্যাপারটি স্পষ্ট করে তোলে৤ কিন্তু ইংরেজিতে তা ঘটে না৤ ইংরেজি হরফ সেখানেও যথাযথ পূর্ণ অবয়বের থাকে, কারণ ইংরেজি হল পূর্ণ এ্যালফাবেটিক চরিত্রের বর্ণমালা, তাই ইংরেজিতে বর্ণের সঙ্গে ‘অ’ ধ্বনি যোজনা তথা ‘অ’-লিপ্তি (inherence) ব্যাপারটি নেই৤ ইংরেজির মতো পূর্ণ এ্যালফাবেটিক চরিত্রের বর্ণমালাই কিন্তু উন্নত বর্ণমালা৤

        আরও উন্নত সেকেন্ড জেনারেশন ফন্ট ‘নীরবিন্দু-বাংলা১৪’ ব্যবহার করে লেখা--
  








বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের
নিখুঁত গল্পটির ডালপালা অর্ধেক ছড়াতেই ঋতু ভুঁইঞা
আর ঐন্দ্রিলা ধড়ফড়িয়ে দারুণ হৈ-হৈ করে উঠল
__ ওঃ, ব্যাস্ এবার থামো তো, বুঝেছি বড্ডো পুরানো ঢঙের
কেমন এক গল্প যার নীতিবাক্য হল, “মূঢ় আড়ম্বর ও
আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ ক্ষতি”--
তাই না, এ্যাঁ? ০১২৩৪৫৬৭৮৯   ৳৫৬/-   ৉৫৬/-       


 

            পরবর্তী পর্যায়ের ফন্ট হল থার্ড জেনারেশন বাংলা ফন্ট(Third Generation Bangla Font)৤ এই ফন্টে সব কিছু সহজে লেখা যাবে৤ তখন বাংলা বানান সহজ অনায়াস হবে৤ তার কিছু উদাহরণ--


 



থার্ড জেনারেশন ফন্টগুলি ব্যবহার করে লিখতে হলে আগে ‘বাংলা নতুন-বানান’ প্রকল্পটি পড়ে নিতে হবে৤ তখন থার্ড জেনারেশন ফন্টগুলি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হবে, এবং তা বোঝা সহজ হবে, আর লেখায় তা অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে৤




        সেদিন নিঃসন্দেহে বাংলা লেখার সত্যিকারের মুক্তি ঘটবে৤ আজ অবশ্য এমনি করে লেখা আমাদের অবাক করে দেবে, কিন্তু ভবিষ্যতের মানুষ সেই ধরনের লেখায় লিখেই পড়াশুনা, লেখাপড়া করবে, তাদের কাছে এটা কোনও অবাক কাণ্ড তো হবেই না, বরং তা অতি স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হবে৤ তেমন সুখের দিন কবে আসবে, যেদিন দলা পাকনো, জোড়া লাগানো, একের ঘাড়ে অন্য হরফ চাপানো হরফমণ্ড দিয়ে আর বাংলা লিখতে হবে না? সেই সুখের বাংলা লেখার দিনের অপেক্ষায় আছি৤

        তিনটি অংশে ভাগ করে দেখানো “বাংলা নতুন-বানান” প্রকল্পটি দেখা যাবে নিচের লিংকে:

১)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-প্রথম অংশ

 

২)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-দ্বিতীয় অংশ

 

৩)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-তৃতীয় অংশ




৪)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-চতুর্থ অংশ


http://banglamagna.blogspot.in/2014/08/blog-post.html






সেকেন্ড জেনারেশন ফন্ট অহনলিপি-বাংলা১৪ ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:--


সেকেন্ড জেনারেশন ফন্টের উন্নত সংস্করণ নীরবিন্দু-বাংলা১৪ ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:-





থার্ড জেনারেশন বাংলা ফন্টসমূহ আলয়-ফন্টগ্রুপ২০১৪ ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:--






        ফোর্থ জেনারেশন ফন্ট কথাটির অর্থ হবে, রোমান হরফের মতো বাংলা হরফ পরপর বসিয়ে লেখা৤ সেখানে কোনও যুক্তবর্ণ থাকবে না, কোনও স্বরচিহ্ন থাকবে না, ফলা থাকার তো কোনও ব্যাপারই নেই৤ রোমান লিপি ব্যবহার করে যখন আমরা লিখি তখন তো হরফ পরপর বসিয়ে গেলেই হল, বাংলা লেখাও একদিন তেমন হবে৤
        যেমন, আমরা যদি লিখি-- “বসন, ভবন, তপন, সকল” ইত্যাদি৤ এখানে সরল হরফ বসিয়ে লেখা গেছে, কিন্তু সকল ক্ষেত্রে তো তা করা যাবে না, ‘বাসন’ লিখতে হলে একটা আ-কার চাই “বা”-এর সঙ্গে৤ তেমনি ‘ভুবন’ লিখতে একটা উ-কার চাই “ভু”-এর সঙ্গে৤ কিন্তু ভবিষ্যতে বাংলা লেখার ব্যবস্থা এমন হবে যে তাতে আর এসব চিহ্ন ইত্যাদি লাগবে না৤ যদি লেখা হয়--

আমআদএর দএশএ হবএ শএই ছএলএ কবএ,
কথআয় নআ বড় হয়এ কাজএ বড় হবএ” 




সেদিন বাংলা লেখার সত্যিকারের মুক্তি ঘটবে৤



এখনও এব্যাপারে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আছে৤ তাছাড়া, নেটে যদি পিএনজি ফাইল করে দেখাতে হয় তবে তা সেই সফ্‌টওয়্যারে সাপোর্ট দেয় না৤ ফলে তা টেক্সটে লেখা গেলেও নেটে দেখানো যাচ্ছে না৤ চতুর্থ প্রজন্মের সেই ফন্ট তো কোন্‌ সুদূরে তাই তা কব্‌জা করতে সময় লাগবে৤ তখন মূল ফন্টের গঠনই আলাদা হবে, কিবোর্ড আলাদা হবে৤ আর একটা কথা হল, টেক্সটে এবং নেটে ফন্ট সাপোর্ট একইরকম নয়, কিছুটা আলাদা হয়৤ তবে এখানে ব্যাপারটার কিছুটা ধারণাটা দেওয়া গেল৤



এখানকার সকল ফন্টই সর্বান্তিক ইউনিকোড ফন্ট, আর তা ব্যবহার করতে হবে অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট প্যাকেজভুক্ত কিবোর্ড দিয়ে৤ অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট এবং নীরবিন্দু-বাংলা১৪ ফন্ট দিয়ে চালু এবং নতুন-বানান সবই লেখা যাবে৤ আলয় ফন্টগ্রুপ২০১৪ দিয়ে কেবল নতুন-বানান লেখা যাবে৤ বিস্তারিত ব্যবহারবিধি দেখা যাবে “বিবরণ” BIBARAN ফাইল ও অন্যান্য নানা সহায়ক ফাইলে৤ কোনও অসুবিধা দেখা দিলে লেখকের সঙ্গে ইমেলে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানাই৤  




        এবিষয়ে পাঠকদের সুচিন্তিত পরামর্শ আহ্বান করি৤ অন্য কোনও কিছু বলার থাকলে তাও জানাতে আহ্বান জানাই৤ সকলের সহযোগে বাংলা ভাষা ও বানান প্রসারিত, প্রচারিত, বিকশিত হোক৤

মনোজকুমার দ. গিরিশ
manojkumardgirish@yahoo.com

২৭/০৮/২০১৪ বুধবার৤ মণীশ পার্ক, কোলকাতা৤

------
ঋণ:
বিভিন্ন আকর গ্রন্থ, সাধারণ গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট ও ব্লগ থেকে নানাভাবে প্রভূত সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে৤ তাঁদের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই৤




Tuesday, February 24, 2015

বামুনের চাঁদে হাত, পর্ব-৬






বামুনের চাঁদে হাত

মনোজকুমার দ. গিরিশ
মণীশ পার্ক, কোলকাতা






৬টির
পর্ব-৬


শেষ পর্ব





লেখাটি ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’AhanLipi-Bangla14 ফন্টে পড়লে লেখাটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে৤ ফন্ট ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক: 
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip






সঙ্গে দেওয়া ফাইল দেখে নিতে হবে৤

অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default text font setting)
Default text font setting ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং

এবং


অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default Internet setting)

(Default font setting ডিফল্ট ফন্ট সেটিং)

on internet(Mozilla Firefox)
(top left) Tools  
              Options--contents
              Fonts and Colors
              Default font:=AhanLipi-Bangla14
                        Advanced...
                                    Fonts for: =Bengali
                                    Proportional = Sans Serif,   Size=20
                                    Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Sans Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Monospace=AhanLipi-Bangla14,  Size=20
                                    -- OK
            Languages
            Choose your preferred Language for displaying pages
            Choose
            Languages in order of preference
            Bengali[bn]
            -- OK
 -- OK

          এবারে ইন্টারনেট খুললে ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’ ফন্টে সকলকিছু দেখা যাবে৤ নেটে এই ফন্টে সব কিছু লেখাও যাবে৤




৬টির
পর্ব-৬




                 আমার এক কনিষ্ঠ আত্মীয়া প্রস্তাব দিল টিভিতে এটা প্রচার করতে৤ 



পাড়াতেই থাকে সেই আত্মীয়াটি(লিলি হালদার, খ্যাত আধুনিক কবি) বললাম আমার আপত্তি নেই, ব্যবস্থা করতে পারো৤ 

সে তখন নিজেই কথা বলল বাংলা চ্যানেল তারা নিউজ চ্যানেলের


   


একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে, যারা সে যুগে এধরনের প্রচারে নেমেছিল৤ তারা এলো, সক্ষাৎকার তুলে নিয়ে গেল৤ দুদিন পরে তা টিভিতে প্রচারিত হল৤ 



          এছাড়া, আমিও দু-একটি চ্যানেলকে চিঠি দিয়েছিলাম তাদের একদল এলো৤ তারাও আমার সাক্ষাৎকার তুলে নিয়ে গেল৤ 



      পর পর সাক্ষাৎকার নেওয়াতে আমার বরং মনে হল এতসব উৎপাত আমার সহ্য হবে না৤ রোজ যদি সাক্ষাৎকার দিতে হয়, কাজ হবে কখন? এসবের কিছু প্রস্তুতিও আছে৤ কারণ, তারা ওই একই সময়ে এক দিন মাত্র পরে পরে এসেছিল৤ তারাও প্রচার করল৤ 



এটা ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে৤ সেই জনপ্রিয় চ্যানেলটি(বাংলা এখন) আর অবশ্য চালু নেই৤
  


          বাংলা ‘যুক্তবর্ণ’ লেখা নিয়ে যখন একটা তত্ত্ব খাড়া করে ফেললাম, তখন একদিন তা লিখে নিয়ে গেলাম ”দেশ” পত্রিকায় জমা দিতে৤ কিন্তু জমা দেব কি দেব না, তা নিয়ে মনে দ্বন্দ্ব দেখা দিল৤ এসব লেখা কি ওখানে ছাপা হবে? ‘দেশ’ সবার উপরে, সেখানে আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর  অপরিচিত লোকের লেখা কি বের হবে? ধর্মতলায় ট্রাম গুমটিতে বাড়ি ফেরার ট্রামে উঠে বসে রইলাম৤ নাঃ, যাব না৤ কাছেই ‘দেশ’-এর অফিস৤


      পরে মনে হল, আমার এ লেখা যদি ‘দেশ’ বের না করে, তবে আমার আর অন্য কোনও লেখা দেশ-এ বের করার মতো নয়৤ তাই যা থাকে কপালে ভেবে, গেলাম জমা দিতে৤ কাছেই দেশ-এর অফিস৤ জমা দিয়ে এলাম৤ একটা বিরাট ভার নেমে গেল মন থেকে৤ লেখা বের হোক না হোক, তা নিয়ে আর ভেবে লাভ নেই৤ তার পরে সত্যিই ভুলে গেলাম৤ কারণ দেশ-এ আমার লেখা বের হবে সেটা আমার আশা করা বাতুলতা৤ 

        বছরখানেক পরে একদিন অফিসের একজন বন্ধু বলল আপনি কোনও লেখা দিয়েছিলেন দেশ-এ? মনে পড়ল, ছ্যাঁৎ করে উঠল বুকটা, হ্যাঁ দিয়েছিলাম৤ বললাম, হ্যাঁ কেন? আপনার লেখা বেরিয়েছে৤ লেখার শিরোনাম ছিল “বাংলা যুক্তবর্ণের প্রকৃতি নির্ধারণ”, সে ১৯৮৭-র ঘটনা(০১/০৮/১৯৮৭)৤ 

(লিংক দেখুন: http://banglainternational.blogspot.in/2015/05/blog-post.html)


       আমি যেভাবে বাংলা যুক্তবর্ণগুলিকে লিখতে চাইছিলাম দেখলাম দেশ সেটা করতে পেরেছে৤






তখনকার দিনের ছাপায় এভাবে করাটা অভাবিত ছিল৤ আমি অবাক হলাম৤ অবশ্য এখনকার দিনেও আমার অভীষ্ট পদ্ধতিতে বাংলা যুক্তবর্ণ লেখা অন্যদের পক্ষে কঠিনই৤ কারণ তাদের কাছে তো এই ফন্টটিই নেই৤ স্ক্যান করে বা কৌশল করে কিছুটা করা যেতে পারে৤ যদি আমার তৈরি ফন্টটি কেউ ডাউনলোড করে নেন তবে এভাবে লিখতে অসুবিধে নেই৤ আর ফন্টটি তো ডাউনলোড করে নেবার জন্য নেটে দেওয়াই আছে৤

লিক:  https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip


         কোলকাতার “নন্দন” সাময়িকে একটা লেখা দিয়েছিলাম৤ আর তা একইভাবে ভুলেও গিয়েছিলাম৤ অনেক লেখাই বিভিন্ন সাময়িক পত্রে দিতাম তার বেশ কিছু প্রকাশিত হয়েছে, দু-একটি বের হয়নি৤ ক্ষুদে লেখকদের তা নিয়ে মনে কিছু করার নেই৤ সম্পাদক লেখার মান-এ সন্তুষ্ট না হতে পারেন, আর সেখানে জায়গার অভাব একটা বড় কারণ৤ অনেক পরে একদিন ডাক পেলাম নন্দনের  লেখাটির প্রুফ দেখার৤ জটিল টাইপে এসব লেখা অন্যের পক্ষে প্রুফ দেখা কঠিন৤ গেলাম তাদের অফিসে৤ এবারও অবাক৤ তারা কেমন করে বেশ সামলে সেসব ঠিক কম্পোজ করে ফেলেছেন৤ তাঁদের কম্পোজিটারের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম যে তারা স্ক্যান করে তা দিয়ে কাজটি সারছেন৤ দেখালেনও উদাহরণ৤ বেশ ভালো কথা৤ লেখাটি যখন প্রকাশিত হল তখন দেখলাম যে তাঁদের সম্পাদকীয় মহল লেখার শেষে নোট দিয়ে লেখাটির প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত নন বলে জানিয়েছেন৤ তবু তাঁরা লেখাটি প্রকাশ করলেন দেখে আশ্চর্য হয়েছি৤ বুঝলাম যে সম্পাদকীয় দপ্তরে মতভেদ হয়ে থাকবে লেখাটি প্রকাশ করা নিয়ে(গিরিশ মনোজকুমার দ.-- বাংলা বানান :  সংস্কার-কাজ শুরু হোক-- সম্পাদক, বিপ্লব দাশগুপ্ত-- নন্দন-- ৩৯ বর্ষ, অষ্টম সংখ্যা, আগস্ট-২০০৩, পৃঃ ৩৬-৪৮, কোলকাতা)৤

          বেশ আগে একদিন একজন অফিসের বন্ধু এসে বলল, এশিয়াটিক সোসাইটির একটা সেমিনার হবে কোলকাতায় সেখানে আপনার লেখা জমা দিন৤ আমি বললাম ওসব জায়গায় আমি কী করে যাব? তিনি একটা বুলেটিন এনে দিলেন৤ সেটা দেখে সাহসে ভর করে একদিন লেখা নিয়ে গেলাম এশিয়াটিক সোসাইটিতে জমা দেব বলে৤ সেখানে যে অধ্যাপক ছিলেন তিনি সেটা সোসাইটির সেমিনারে যাতে পড়া যায় তার ব্যবস্থা করে দিলেন৤ আমার তো কোনও রেফারেন্স ছিল না, তিনি সেটা জোগাড় করে দিলেন৤ সেই লেখাই দেশ-এ জমা দিয়েছিলাম৤

          কোলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে(যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে) এশিয়াটিক সোসাইটির সেই সেমিনার হয়েছিল৤ তখন এশিয়াটিক সোসাইটির সম্পাদক ছিলেন জগন্নাথ চক্রবর্তী৤ সেমিনারে বাংলার জন্য একটা আলাদা বিভাগ ছিল৤ পর পর এক-একজন তার পেপার পড়তে লাগলেন৤ আমিও আমার টার্মে আমার পেপার পড়লাম৤ উপস্থিত একজন তরুণ অধ্যাপকের(ডাঃ সুহৃদকুমার ভৌমিক) ভূয়সী প্রশংসা পেলাম৤ অনেকেই চিন্তাটাকে সমর্থন করলেন৤ সেই একই কথা অর্থাৎ বাংলায় যুক্তবর্ণের জন্য হওয়া উচিত


  

 এবং  



সূত্র৤ 


         এশিয়াটিক সোসাইটির সেমিনারের সেদিন আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম, কারণ নামকরা অধ্যাপকেরা সেখানে ছিলেন৤ আমি তো এক অচেনা এলেবেলে মানুষ, আমার লেখা লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথাই নয়৤ বুঝলাম আমার চিন্তাটা খুব বাজে নয়৤ কিছু মূল্য থাকতেও পারে৤

          কাছেই আমার এক বন্ধুর বাড়ি ছিল, তাঁকে আগেই জানিয়েছিলাম সেমিনারের খবর৤ তিনি পরে এসেছিলেন, আমার পুলক দেখে নিজেও খুশি হলেন৤ পণ্ডিত মহলের এই সার্বিক সমর্থন আমার কাছে ছিল সত্যিই অভাবিত৤ অচেনা এলেবেলে আমাকে সমর্থন করার তাঁদের কোনও দায় ছিল না৤ এসব জায়গায় পরিচিত পণ্ডিত না হলে কলকে পাওয়া যায় না৤


          বাংলা ইউনিকোড ফন্ট বানাবার জন্য সকল রকম উদ্যোগ নিয়ে যখন তা সফল হল, তখন বুঝলাম যে, সবটা সার্থক হতে হলে বাংলা কিবোর্ড সবার ক্ষেত্রে এক হতে হবে, অর্থাৎ বাংলার জন্য একটিই মাত্র কিবোর্ড হলে তবে বাংলা ইউনিকোড পূর্ণ সফল হবে৤ এজন্য বাংলাদেশের ওয়েবসাইট-- ‘বিজ্ঞানী.কম’(Biggani.com পরে http://biggani.org/) এ লিখতে লাগলাম৤ তাঁরা আমার লেখা পেয়ে খুশি, আমাদের যোগাযোগ বাড়ল অনেকটাই৤ শেষে তাঁরা আমাকে তাঁদের সাইটের একটা বিভাগের অতিথি সম্পাদক করে নিলেন৤

          আমি সেখানে একটা নির্দিষ্ট বাংলা কিবোর্ড করা নিয়ে প্রস্তাব দিলাম৤ বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, এবং এক কোণায় পড়ে থাকা আন্দামান, দণ্ডকারণ্য, কর্ণাটকের উদ্বাস্তুগণ(যাদের কেউ মনে রাখেনি), ঝাড়খণ্ড, আসামে শিলচর অঞ্চল, এবং অন্য সকল বাংলা অঞ্চলের প্রতিনিধি নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম৤ তার অবশ্য কে, বা কারা যে ব্যবস্থা করবেন তা নির্দিষ্ট নয়৤ তবে এটা বাংলাদেশের প্রাথমিক দায়িত্ব, সঙ্গে থাকবে পশ্চিমবঙ্গ, এবং ত্রিপুরা৤ কারণ, বাংলাদেশ একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ রাষ্ট্র, তার রাষ্ট্রভাষা বাংলা, আর পশ্চিমবঙ্গ, এবং ত্রিপুরা ভারতের অঙ্গরাজ্য, এদুটির রাজ্যের সরকারি কাজের ভাষা হল বাংলা৤ 
          বাংলাদেশে একজনের করা কিবোর্ড অন্যে কেন ব্যবহার করবে তা নিয়ে প্রবল বিতণ্ডা হয়ে গেছে, তার আলোচনা এখানে বসেও বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলে শুনেছি৤ আশ্চর্য যে পৃথিবীতে ইংরেজির একটাই মাত্র কিবোর্ড, বিশ্বের ২৭টি রাষ্ট্রের ভাষা ইংরেজি, তাহলে বাংলায় একটামাত্র কিবোর্ড হবে না কেন? আর যত দিন তা না-করা যাবে ততোদিন বাংলা ইউনিকোডের মতো অতি আধুনিক ব্যবস্থাও বাংলায় পূর্ণ সফল হয়ে উঠবে না৤ তাই সকলকে এনিয়ে ভাবতে হবে৤ এটা বাংলাভাষীদের সকলের করণীয় কাজ, চুপ করে বসে থাকার দিন নেই, সবাই এগিয়ে যাচ্ছে, আর আমরা সম্পূর্ণ পিছিয়ে না থাকলেও, খুব ধীরে ধীরে এগোচ্ছি৤ কচ্ছপের গতিতে৤ অর্থাৎ পিছিয়ে পড়ছি৤


       বাংলা ইউনিকোড ফন্ট বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি গ্রহণ করেছে, পশ্চিমবঙ্গ সে তুলনায় বহু বহু পিছিয়ে আছে৤ এখানকার বড় বড় সংবাদপত্রগুলিও অবধি এখনও পুরোদমে বাংলা ইউনিকোড ফন্ট গ্রহণ করতে পারেনি৤ ছাপাখানায় অগ্রগতি তো আরও ধীর৤ আর কত জেগে ঘুমোনো? ঘুমিয়ে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত৤ সাধু সাবধান৤


          আমার চিন্তাভাবনা প্রধানত তিনটি বিষয় নিয়ে, (১)পরিবেশ, (২)সমাজ, (৩)ভাষা৤ এসব নিয়ে উন্নত ভাবনাচিন্তার যোগ্যতা বা দক্ষতা আমার আছে কিনা সেটা কথা নয়, আমি এগুলো নিয়ে কিছুটা ভাবি৤ 


         পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একটি প্রকল্প হাজির করেছি তাতে বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করা যাবে৤ মূল বিষয়টি আমাদের সামাজিক ব্যবহারে ছিলই৤ সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমার সে প্রকল্প৤ সেটি ড্রইং সহ জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে(জ্ঞান ও বিজ্ঞান৤ মে-জুন ১৯৮৪, ৩৭বর্ষ, ৫ম-৬ষ্ঠ সংখ্যা)৤ যদি সেটি ঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তবে শহরের দূষিত বায়ুকে দূষণহীন করা যাবে৤ তার বিশুদ্ধির পরিমাণ ধরি প্রায় ৯০ শতাংশ হবে, অর্থাৎ শহরের বায়ুও বিশুদ্ধ বাতাসে পরিণত হবে৤ তবে প্রকল্প খুব সহজ হলেও এজন্য প্রবল উদ্যোগ নেওয়া দরকার, ব্যয়ও অনেক, আয়োজনও করতে হবে অনেক, মূল ব্যবস্থাটি কিন্তু খুবই সহজ৤ জটিল যন্ত্র লাগবে না৤ কেউ যদি নিজের ঘরের বাতাসকে সমুদ্র বায়ুর মতো নির্মল করতে চান তবে তিনি উদ্যোগ নিলে তা করতে পারবেন৤ প্রকল্পটি দেখা যাবে এই ওয়েব লিংকে:

          দ্বিতীয় বিষয়টি হল সমাজ৤ এই ভাবনার একটি প্রকাশ আছে আমার নামে৤ আমার নামটি হল ‘মনোজকুমার দ. গিরিশ’৤ এর প্রথম অংশ ‘মনোজকুমার’ পিতৃদত্ত আমার মূল নাম, দ্বিতীয় অংশ ‘দ.’ হল “দীনেশচন্দ্র” আমার পিতার নামের সংক্ষেপকরণ,  আর তৃতীয় অংশ হল ‘গিরিশ’, আমার ঠাকুরদা বা পিতামহের নাম “গিরিশচন্দ্র” থেকে নেওয়া৤ তিন প্রজন্মের নাম জুড়ে আমার এই নামটি আমি “সৃষ্টি” করে নিয়েছি৤ একজন উচ্চ শিক্ষিত তরুণীকে দেখেছি সে তার নিজের পিতামহের নাম জানে না৤ আমার এই নামকরণ ব্যবস্থায় নিজের নামের সঙ্গে পিতামহের নাম সব সময়ে উচ্চারিত হবে৤ আর পিতার নামের সঙ্গে তো পূর্বপুরুষেরা উপস্থিত থাকবেন!

       এটাই আমার সমাজকর্ম৤ এসব নিয়ে অনেক আলোচনা করা হয়েছে নানা সময়ে, প্রধানত ‘পথ সংকেত’ পত্রিকায়৤ আমার একটি ব্লগে এই ব্যাপারটি নিয়ে বিস্তারিত লেখা আছে৤ দেখার লিংক: 

 http://bachanbayan.blogspot.in/2010/05/blog-post.html 
 


          আর তৃতীয় বিষয়টি হল ভাষা৤ সেটাই আমার প্রধান বিষয়৤ তাই এই বাংলা ইউনিকোড ফন্ট নিয়ে আলোচনা করা৤ বাংলাভাষা নিয়ে আমার সর্বশেষ যে বক্তব্যটি, তা হল ইংরেজি যুক্তবর্ণ(তথা যুক্তধ্বনি) লেখা এবং বাংলা যুক্তবর্ণ লেখা নিয়ে করা একটি আলোচনা৤ “বাংলা লেখা ছাপিয়ে গেল ইংরেজিকে” এটি নেটে দেখা যাবে, লিংক:

          এই আলোচনা করার সাহস জুগিয়েছে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে অতি অল্প কিছুটা জানার ফলে৤ সেটা ভুল কি ঠিক, তা নির্ধারণ করবেন বিশেষজ্ঞ পন্ডিতেরা৤ তাঁরা আমার এই মূর্খ লাফালাফি দেখে মুচকি হাসবেন, নাকি প্রবল ক্রুদ্ধ হবেন, অথবা চুপ করে থাকবেন, তা বোঝা যাবে পরে৤ তবে মনে হয়, তাঁরা এই বাতুল বাচন নিয়ে আলোচনা করে সময় এবং শক্তির অপচয় করতে রাজি হবেন না৤ 

       যাহোক আমার কথা তো আমি বলেই দিয়েছি, কোনও ঘোরপ্যাঁচ করে বলিনি৤ এবার বিশ্বদরবার তা নিয়ে যা বলবে, সেটাই ঠিক৤ এ যুগে তো ইন্টারনেটের এটাই মস্ত সুবিধে অথবা চূড়ান্ত অসুবিধে “বিশ্বজোড়া ফাঁদ পেতেছ, কেমনে দিই ফাঁকি ! ...”



পাঠকদের মন্তব্য স্বাগত৤

আমার মেল: manojkumardgirish@yahoo.com






সমাপ্ত৤





মনোজকুমার দ. গিরিশ 
মণীশ পার্ক, কোলকাতা 




সংশোধন, সম্পাদন, সংযোজন চলছে
সর্বশেষ পরিমার্জন ০৮/০৩/২০১৮ 



ফিরে যান প্রথম পর্বে--


(মোট ৬টি পর্ব)বামুনের চাঁদে হাত, পর্ব-১ :

http://banglamagna.blogspot.in/2015/02/blog-post.html