লেখাটি ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’AhanLipi-Bangla14 ফন্টে
পড়লে লেখাটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে
কেন
অহনলিপি?
মনোজকুমার দ. গিরিশ
(Manojkumar D. Girish)
মণীশ
পার্ক, কোলকাতা, ভারত
এই নিবন্ধটি যে উদ্দেশ্যে লেখা তা
স্পষ্ট হবে এটি “অহনলিপি-বাংলা১৪” ফন্টে পড়লে
অন্য ফন্টে পড়লে উল্টে ভুল ধারণা হবে (This article should be read in
"AhanLipi-Bangla14" font, otherwise wrong information will be conveyed.)
অন্য ফন্টে পড়লে উল্টে ভুল ধারণা হবে (This article should be read in
"AhanLipi-Bangla14" font, otherwise wrong information will be conveyed.)
প্রথমে
AhanLipi-Bangla14.ttf-এর
উপরে ক্লিক করতে হবে এবার Install
ক্লিক করতে হবে এর ফলে কম্পিউটারে ফন্ট ইনস্টল হয়ে যাবে
এরপরে setup.exe
ক্লিক করলে এক মিনিটের মধ্যে কিবোর্ড
ইনস্টল হয়ে যাবে
নিচে ডান দিকে নতুন EN(English)
BN(Bengali)
টগল সুইচের BN
ক্লিক করলে বাংলা লেখা হবে
এবার টেক্সট লেখার ফাইলে উপরের
বাম দিকে ফন্টবক্স-এ AhanLipi-Bangla14
ক্লিক করে সিলেক্ট করে নিয়ে যা লেখা হবে তা বাংলায় লেখা হবে
কিবোর্ড (প্রমিত=স্ট্যান্ডার্ড,
বিতত=এক্সটেন্ডেড;একই কিবোর্ড সুবিধার জন্য দুটি অংশে দেখানো), এবং ‘বিবরণ’(AhanLipi-Bangla14 BIBARAN.doc)
ফাইলে সব কিছু বিস্তারিতভাবে লেখা আছে প্রথমে Read me First.txt পড়ে
কাজ শুরু করাই ভালো
অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট AhanLipi-Bangla14 font ডাউনলোড করে নিজেকে আধুনিক করে তুলুন
অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট AhanLipi-Bangla14 font ডাউনলোড করে নিজেকে আধুনিক করে তুলুন
অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট হল--
(১)সেকেন্ড জেনারেশন ফন্ট
(২)স্মার্ট ফন্ট
(৩)বর্ণসমবায় ফন্ট
(৪)আলটিমেন্ট ফন্ট
এবং
(৫)বাংলা ফন্ট টেকনোলজির ফলিত প্রয়োগ
(২)স্মার্ট ফন্ট
(৩)বর্ণসমবায় ফন্ট
(৪)আলটিমেন্ট ফন্ট
এবং
(৫)বাংলা ফন্ট টেকনোলজির ফলিত প্রয়োগ
AhanLipi-Bangla14 বাংলা ফন্ট “অহনলিপি-বাংলা১৪” ফন্ট ডাউনলোড করার লিংক Link to download
"AhanLipi-Bangla14" font --
অথবা
☼☼
অহনলিপি
একটি বাংলা ইউনিকোড ফন্ট বাংলায় ইউনিকোড ফন্ট একাধিক আছে, তবে কেন অহনলিপি ফন্ট
ব্যবহার করার কথা বলা হচ্ছে?
সে
ফন্টটি কিনা আবার আমার নিজেরই তৈরি করা নিজের দইকে সবাই ভালো বলে, সে দই খাবার
জন্য অন্যের কাছে সুপারিশ করে এটাই স্বাভাবিক আমিও তার কিছুমাত্র ব্যতিক্রম নই
তবে তার বাইরেও আর একটা কিছু আছে, সে কথা জানাতেই এই লেখা
তবে প্রথমে একটু প্রাসঙ্গিক কথা
বার্তা বলে নেওয়া দরকার, তাহলে সুবিধে হবে প্রথমে আলোচনা করব ফন্ট কাকে বলে, তারপরে
বলব ইউনিকোড ফন্ট কাকে বলে তারপরে বাংলা ইউনিকোড ফন্ট নিয়ে দুচার কথা এসব ব্যাপার
নিয়ে একটু আভাস দিয়ে নিলে পরের কথাবার্তায় সুবিধে হবে বুঝতে এবং বোঝাতেও সুবিধে
হবে
ফন্ট কী?
ফন্ট হল হরফসমূহ ছাপাখানায় কিছু একটা ছাপার
সময়ে বা কম্পিউটারে লিখবার সময়ে, হরফ যোজনা করতে হয়, সেটা হাতে করেই করা হোক বা আধুনিক
যুগে যান্ত্রিক উপায়ে কম্পিউটারের চাবি টিপেই করা হোক এই হরফের সবগুলিকে নিয়ে
একত্রে বলে ফন্ট(Font) বাংলা ফন্টে থাকবে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, স্বরচিহ্ন(কারচিহ্ন), ব্যঞ্জনচিহ্ন(ফলা), সংখ্যা, যতিচিহ্ন এবং গাণিতিক চিহ্ন, ও অন্যান্য বিবিধ চিহ্ন ছাপাখানায়
বাংলা ফন্টে থাকে প্রায় ৫৫০টির মতো টাইপ ইংরেজিতে এই সংখ্যা প্রায় ১৪০টির মতো
কম্পিউটারে এতগুলি চাবি(Key) নেই, থাকা সম্ভবও নয়, তাই নানা কৌশলে কম্পিউটারের কিবোর্ডের অল্প
চাবি টিপেই সব কাজ চালাতে হয় বাংলায় আছে প্রায় ৩৯৫টি বিশুদ্ধ যুক্তবর্ণ, বিশেষ প্রক্রিয়া ও কৌশলে কিবোর্ডের
অল্প সংখ্যক চাবি দিয়েই সেসব গঠন করতে হয়, কিবোর্ডে সেসব যুক্তবর্ণ সরাসরি থাকে না
ইংরেজি লেখায় বাংলার মতো এই ধরনের যুক্তবর্ণের ব্যাপার নেই বলে সেই সমস্যা ও
জটিলতা ইংরেজিতে প্রায় নেই ফলে স্বাভাবিকভাবে ইংরেজিতে বাংলার চেয়ে টাইপিং-এর গতি
অনেকটা বেশি বাংলায় টাইপ করতে হলে বার বার শিফট-কি(Shift-key) চাপতে হয়, ইংরেজিতে শিফট-কি খুব কম চেপেই সবটা লেখা যায় ইংরেজির
সুবিধা সেটাই
ইউনিকোড
ব্যাপারটা কী?
কম্পিউটারে
যেসকল ফন্ট দিয়ে লেখা হয় তাকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়__ (১)এ্যাসকি (ASCII--American
National Standard Code for Information Interchange) অর্থাৎ নন-ইউনিকোড ফন্ট, এবং (২)ইউনিকোড ফন্ট বাংলায় ইউনিকোড
ফন্টের প্রচলন সবে শুরু হয়েছে বলা যায়, এখনও সর্বত্রই প্রায় সব কাজই নন-ইউনিকোড ফন্টে
চলে নন-ইউনিকোড ফন্টের সবচেয়ে অসুবিধা হল, যাঁদের সেই বিশেষ নির্দিষ্ট ফন্টটি থাকবে
তাঁরাই কেবলমাত্র পরস্পর টেক্সট বা লেখা বিনিময়/কপি করতে পারবেন, নয়তো তা কপি করলে দুর্বোধ্য কিছু
সংকেত বা চিহ্ন, বা ছোট ছোট চৌকো বাক্সের আকারের চিহ্ন দেখা দেবে দুজনের ঠিক একই
ফন্ট থাকলে,
তবেই তারা ই-মেলে যোগাযোগ করতে পারবেন কিন্তু ইউনিকোড ফন্টের বহুরকম ব্যবহারিক
প্রয়োগ ও সুবিধা আছে, যদি কারও কম্পিউটার ইউনিকোড
কম্প্যাটিবল তথা ইউনিকোড সমর্থিত হয়, তবে তারা অনায়াসে ইমেলে যোগাযোগ করতে পারবেন
উভয়ের কম্পিউটারে ইউনিকোড
পরিবারের যে-কোনও একটি ইউনিকোড
ফন্ট থাকলেই হল যদিও ইউনিকোড
ফন্টে দু-একটি সাধারণ শব্দ লিখতে আবার কিছু সমস্যাও
হয় সেটা ইউনিকোড ফন্টের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার কারণে ঘটে অবশ্য সেসব সমস্যা
দূর করা হয়েছে
ইউনিকোড
কাকে বলব?
ইউনিকোড ফন্ট, এবং নন-ইউনিকোড ফন্ট তথা এ্যাসকি
ফন্টের মূল তফাৎ তাদের কোড পয়েন্টে ইউনিকোড
হল, ইউনিক-কোড
/ইউনিফর্ম কোড/ইউনিভার্সাল কোড (Universal Character
Set) (Unicode - provides a
unique number for every character, no matter what the platform, no matter what
the program, no matter what the language. সরল অনুবাদে:__ ইউনিকোড প্রতিটি বর্ণের জন্য একটি পৃথক নম্বর বা
সংখ্যা দেয় কোন্ ভিত (প্ল্যাটফর্ম)[ভিত যেমন--Macintosh Roman,
Microsoft Unicode, Unicode 2.0 and onwards semantics ইত্যাদি], কোন্ প্রোগ্রাম, কোন্ ভাষা তা বিবেচ্য নয়)
বাংলা নন-ইউনিকোড ফন্টে কোড তথা সংখ্যা-সংকেত নির্বাচন করা প্রায় নিজের ইচ্ছার
উপরে নির্ভর করে বাংলায় নন-ইউনিকোড ফন্টের কোড-পয়েন্ট আসলে নেওয়া হয় ইংরেজি হরফকে
ভিত্তি করে ধরি বাংলা ’ক‘ লিখতে ইংরেজি k -হরফটির যে কোড সেটি বাংলা এই ’ক‘
হরফটির জন্য প্রয়োগ করা হল অন্য কোনও ফন্ট নির্মাতা ধরি j- হরফটির কোডটি বাংলা ক-এর জন্য প্রয়োগ করতে পারেন তাই দুটি ফন্টের লেখা
আলাদা হবে, একজন k চাপলে
পাবেন ’ক‘, অন্য জন j চাপলে পাবেন ’ক‘ ফলে একজনের সঙ্গে অন্য জনের
কোনও মিল থাকবে না এখানে k এবং j হরফদুটির কোড আলাদা আলাদা বলে এটা ঘটবে
কিন্তু
বাংলা ইউনিকোডের ক্ষেত্রে আগে থেকেই কোড সুনির্দিষ্ট করা আছে, সেটা কখনওই পালটানো যাবে না সকল
ক্ষেত্রেই ’ক‘-এর জন্য একটি নির্দিষ্ট কোডই হবে(হেক্সা ডেসিম্যাল $0995, তথা ডেসিম্যাল 2453),
অন্য কোনও কোড ব্যবহার করা যাবে না তবে বলে রাখা ভালো যে, কোড সুনির্দিষ্ট হলেও
কিবোর্ডের গঠন আলাদা হতেই পারে, অর্থাৎ
k কি-টপটি, অথবা j কি-টপটি ব্যবহার করলেও কোডের ক্ষেত্রে একটাই কোড হবে, অর্থাৎ কোড হবে $0995, এবং বাস্তবে হয়ও, তাই সুনির্দিষ্ট কোডের সোনার সন্ধান
পেলেও বাংলায় কিবোর্ডের সমস্যা রয়েই গেছে আবার এটাও ঠিক যে, কিবোর্ড যা-ই হোক, লেখা
পরস্পর বিনিময়/কপি করলে লেখা কিন্তু ঠিক একই থাকবে, পালটে গিয়ে অন্য রকম হয়ে যাবে
না বাংলায় একটা মান্য কিবোর্ড থাকা, তথা তৈরি করা তাই খুবই জরুরি সেটা বাংলাদেশ
এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা (এবং ঝাড়খণ্ড, আসামের শিলচর) সকলে মিলে সহমতের
ভিত্তিতে তৈরি করতে হবে ইংরেজিতে বিশ্বজুড়ে একটাই কিবোর্ড, কিন্তু বাংলায় পুরানো
সেই নন-ইউনিকোড
ফন্টের কায়দায় এখনও অনেকগুলি আলাদা আলাদা কিবোর্ড রয়ে গেছে, বা বলা যায় তৈরি করতে হয়েছে, যেহেতু কোনও মান্য কিবোর্ডই
বাংলায় নেই সেজন্যই বাংলায় যতগুলি ইউনিকোড ফন্ট আছে, কিবোর্ডও ঠিক
ততোগুলি! এ এক বিরাট এবং জটিল সমস্যাও বটে এব্যাপারে
আমি বাংলার জন্য একটি মান্য কিবোর্ড তৈরি করার প্রস্তাব অন্যত্র দিয়েছি(বিজ্ঞানী.com /বিজ্ঞানী.org, বাংলা ইউনিকোড
ফোরাম এবং কিবোর্ড-- ১৪ জানুয়ারি, ২০০৯) ইউনিকোড ফন্ট হয়ে
বাংলার যেসকল জটিল সমস্যা দূর হয়েছে, তা বস্তুত কিবোর্ডের ছদ্মবেশে আবার যথারীতি রয়েও গেছে এটা
হল পেয়েও না-পাওয়া এখুনি এই সমস্যার সমাধান করা দরকার, নইলে বাংলা ইউনিকোড
ফন্ট এক প্রকার জলেই যাবার উপক্রম বাংলা ফন্টের সমস্যা যেন আমরা সোনার জালে জড়িয়ে
রেখে দিয়েছি
টেক্সট
লেখার সময়ে ইউনিকোড বা নন-ইউনিকোড যেকোনও ফন্ট একই টেক্সটে ব্যবহার করা যাবে অন্য
ভাষার ফন্টও-- যেমন ইংরেজি ফন্টও ব্যবহার করা যাবে তাতে কোনও বাধা হবে না তবে নন-ইউনিকোডে
লেখার সময়ে এবং ইউনিকোডে লেখার সময়ে উভয় ক্ষেত্রে কিবোর্ড যে আলাদা হবে তাতে কোনও
সন্দেহ নেই নন-ইউনিকোড
ফন্টের ক্ষেত্রে কপি করা বা লেখা বিনিময় করার সময়ে উভয়ের একই ফন্ট থাকতে হবে
লেখালিখির
ক্ষেত্র নন-ইউনিকোড যুগ পার হয়ে এই আধুনিক যুগ ইউনিকোডে প্রবেশ করেছে, কারণ নন-ইউনিকোডের
চেয়ে ইউনিকোড ফন্ট অনেক অগ্রগত যেসকল কাজ আগে বাংলা ফন্টে করা যেত না, এখন সেসব
কাজ করা যায় বাংলা ভাষায় বাংলা হরফে ইমেল করা যায়, তার জবাবও একইভাবে বাংলা ভাষায়
বাংলা হরফে দেওয়া যায় বাংলায় টেক্সট সার্চ করা যায়, অর্থাৎ একটি বড় লেখার মধ্য
থেকে একটি বিশেষ শব্দ সহজে টেক্সট-সার্চ করে বার করা যায়, তেমনি বাংলা হরফে ওয়েব
সার্চ করাও যায়, বাংলায় ওয়েবসাইট এবং ব্লগ তৈরি করা যায়, বাংলায় সর্টিং করা যায় এধরনের
সকল কাজই এখন বাংলায় করা যায়, যা আগে করা যেত না ইউনিকোড হয়ে বাংলা সহ অন্যান্য সকল
কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্ট ব্যবহারকারী ভাষাই স্বাধীন এবং মুক্ত হয়েছে
আন্তর্জাতিক
’ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম‘ গঠিত হবার পরে তাঁরা পৃথিবীর সকল ভাষার প্রতিটি হরফের জন্য
একটি করে পৃথক কোড বা সংখ্যা-সংকেত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ফলে প্রতিটি ভাষা তার প্রতিটি
হরফের জন্য নিজস্ব কোড পেয়ে স্বাধীন ও মুক্ত হয়েছে বাংলা ভাষাও হয়েছে এই
স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে তাই সর্বত্র বাংলা ইউনিকোড ফন্ট ব্যবহার করতে
হবে
তবে
শুধু বাংলা ইউনিকোড ফন্ট ব্যবহার করলেই হবে না, সেটিকে আরও উন্নত ও অগ্রসর করে গড়ে
তুলতে হবে সেটাই করা হয়েছে বাংলা ”অহনলিপি“ ফন্টে সে ব্যাপারটিই আমাদের মুখ্য
আলোচ্য বিষয়
ইংরেজি
মাধ্যমে যারা লেখাপড়া করে তাদের হরফ পরিচয় হলেই যেকোনও ইংরেজি শব্দ অন্তত বানান
করে পড়তে পারে ইংরেজি মাধ্যমে পড়া সে-শিশুটি যদি বাংলাভাষী হয়, তবুও সে কিন্তু
বাংলা হরফ পরিচয়ের পর পরেই যেকোনও বাংলা শব্দ বানান করেও পড়তে পারবে না শিশুটি
যদি বাংলা মাধ্যমে পড়া এবং বাংলাভাষী হয় তবুও সে কিন্তু বাংলা হরফ পরিচয়ের পর পরেই
যেকোনও বাংলা শব্দ বানান করেও পড়তে পারবে না উভয় ক্ষেত্রেই না-পারার কারণ কিন্তু
সে শিশুদের অযোগ্যতা নয় এই না-পারার কারণ, বস্তুত বাংলা লেখার ব্যবস্থা-জনিত
ত্রুটি বাংলায় শুধু হরফ পরিচয় হলেই চলে না, শিখতে হবে স্বরচিহ্ন-- আ-কার, ই-কার
ইত্যাদি, শিখতে হবে ফলা চিহ্ন-- য-ফলা, ব-ফলা, ম-ফলা ইত্যাদি তবে এখানেই বৈচিত্রের
শেষ নয়, আসল আছাড় খাওয়াটা তো এখান থেকেই শুরু হয় মাত্র! প্রায় চারশ(৩৯৫) যুক্তবর্ণ
শিখলে তবে সেই শিশু-- বাংলা যেকোনও শব্দ অন্তত বানান করে পড়তে পারবে (অবশ্য যদি
পারে! শিক্ষিত বয়স্ক মানুষও তো অনেকে অনায়াসে হড়কে পড়ে যান) এই শ-চারেক যুক্তবর্ণ
কি তাহলে বাদ দিতে হবে? তাহলে বাংলা লেখা অনেকটা সহজ হয়! কিন্তু এমন কথা কি সত্যিই
বলা যায়? না, যায় না এসব রেখেই সরল করার কথা চিন্তা করতে হবে, এবং যদি তা সত্যিই সরল
করা যায়, তবে তা না-কারার কোনও যুক্তিও বোধ হয় নেই
অহনলিপিতে লেখার ব্যবস্থাটি এমন যে, আশা
করা যায়, শিশুরা হরফ পরিচয়ের পরে অল্প কিছু চিহ্নাদি শিখে সকল বাংলা শব্দই অন্তত
বানান করে পড়তে পারবে মূল হরফের বাইরে তাকে শিখতে হবে-- স্বরচিহ্ন আ-কার, ই-কার
ইত্যাদি এই দশটি চিহ্ন, আর র-ফলা, রেফ, য-ফলা ইত্যাদি এই তিনটি চিহ্ন, এবং হস্ চিহ্ন--এই
মোট ১৪টি পৃথক চিহ্ন এই কয়টি চিহ্নকে এড়িয়ে অবশ্য চলা যাবে না ”বাংলা নতুন-বানান“
প্রকল্পে অবশ্য পাঁচটি স্বরচিহ্ন আর একটি ফলা চিহ্ন, এবং হস্ চিহ্ন শিখলেই চলবে, কিন্তু
সে প্রকল্প এখানে আলোচনা করা যাবে না, সে অন্য প্রসঙ্গ সেখানে ’প্রথম‘ কথাটি লেখা
হবে--
হবে--
প্রথম ’কার্য‘ লেখা হবে কারজ,
’আত্মীয়‘ লেখা হবে আত্তীয় যাক সে কথা
দেশের নানা রাজ্যে, এবং
পৃথিবীর নানা দেশে বাঙালি শিশুরা ছড়িয়ে আছে, বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিবেশের সঙ্গে
তাদের পরিচিতি কম থাকায় বাংলা ভাষায় তাদের দখল কম, কেউ হয়তো বাংলা পড়তে পারে, কেউ হয়তো
পড়তেও পারে না লিখতে গেলে সমস্যা হয় আরও কঠিন তারা সকলে এবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে
কারণ তাদের আর বলতে হবে না--”উফ্, বাংলাটা কী কঠিন“ হ্যাঁ, ইংরেজি-মাধ্যমে কোলকাতায়
স্কুলের উচ্চ শ্রেণিতে পড়া তুখোড় বাংলাভাষী ছাত্রের এটাই মন্তব্য একে তো,
১১স্বরবর্ণ, ৩৯ব্যঞ্জনবর্ণ, ১০স্বরচিহ্ন, ৮ফলা-- নিয়ে মোট ৬৮টি গঠন শিখতে হয়, তার
উপরে আরও ৩৯৫টি যুক্তবর্ণ শিখতে হলে(যেগুলির বেশ কিছু মণ্ড হরফ!) তা গোদের উপরে শত
বিষফোঁড়া না হয়ে আর কী হবে? সেখানে ইংরেজিতে কেবল ২৬৻ বড়হাত, ছোটহাত মিলিয়ে বড়জোর
৫২টি রূপ মাত্র হাতের লেখার দুটো রীতি ধরলে ৫২×২=১০৪ টি
অহনলিপিতে মূল গঠন (স্বরবর্ণ ১১,
ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯, স্বরচিহ্ন ১০, ফলার ব্যবহারিক প্রয়োগ ৩=) ৬৩ এগুলি মৌলিক হরফ এবং
চিহ্ন, এসব তো বাদ দেবার কোনও কথাই উঠতে পারে না কিন্তু তার উপজাত ৩৯৫ যুক্তবর্ণ,
অর্থাৎ অতিরিক্ত প্রায় ৬গুণ বেশি হরফের বোঝা অহনলিপিতে অকারণে বস্তুত বইতে হয় না
যুক্তবর্ণের শ-চারেক রূপ বাংলার পক্ষে একটু
বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল নাকি? সবাই নিশ্চয়ই বলবেন এছাড়া উপায়ই বা কী?
সেই উপায়টা বের করাই হবে বাংলা লেখার
অগ্রগতির পথ সে পথ কঠিন ঠিকই কিন্তু অভেদ্য নয় বোধ হয়
আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে আলোচনা শুরু করি
আমি একবার প্রায় মাসখানেকের জন্য পুরী বেড়াতে গিয়েছিলাম সেখানে থাকাকালীন মনে হল,
এই সুযোগে ওডিয়াটা(এখন ওড়িয়ার নাম হয়েছে ওডিয়া) একটু শিখে ফেলি শুরু করলাম এবং
বেশ ভালোই এগোচ্ছিলাম শব্দ বেশ পড়তে পারছিলাম, সাইনবোর্ডে ওডিয়া হরফ দেখে চিনতে
পারছিলাম কিন্তু গোল বাঁধল যখন যুক্তবর্ণ শুরু হল ক+ত মিলে যেন অন্য আর একটা
কিছু ভিন্ন হরফ হয়ে যাচ্ছে দু-একটা শেখার চেষ্টা করলাম, কিন্তু যুক্তবর্ণের
সংখ্যা তো অল্প নয়, তাই ক্ষান্ত হলাম প্রতিটি যুক্তবর্ণ যেন আলাদা আলাদা হরফই
এতগুলো ভিন্ন হরফ শেখার শ্রম পোষাল না মনে রাখাই তো খুব কঠিন অনুভব করলাম কেউ
যদি বাংলা শিখতে চায় তাকেও তো ঠিক একইভাবে শতেক বর্ণজালে বিভ্রান্ত হয়ে থামতে হবে
মৌলিক বর্ণ তো শিখতেই হচ্ছে, কয়েকশ‘ মিশ্র দলা পাকানো ”হরফও“ শিখতে হচ্ছে আর তার
সংখ্যা মৌলিক বর্ণকে বহুগুণে ছাপিয়ে যাচ্ছে ইংরেজিতে কি একটাও মণ্ড যুক্তবর্ণ
শেখার দরকার? অথচ ইংরেজিতে যুক্তধ্বনি যে নেই তা তো নয় ইংরেজিতে যুক্তধ্বনি আছে
প্রায় প্রতিটি শব্দেই ইংরেজিতে যদি দলা পাকানো যুক্তবর্ণ না লিখে/না শিখেই সব কাজ
চলে, তবে বাংলায় কেন চলবে না? অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে বাংলায় লিখন পদ্ধতিতে কিছু
অসরল ব্যবস্থা আছে(ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাপারও আছে সেটা এখানে আলোচ্য নয়) সেটাকে সরল
করতে পারলে বাংলাও সহজভাবে লেখা যাবে সেটা সহজ করা হয় না, সহজভাবে লেখা হয়না
প্রধানত আমাদের কুঁড়েমির কারণে
এ প্রসঙ্গে
কয়েকটি কথা বলে ব্যাপারটা আলোচনা করা যাক আজকাল বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়ে
ইংরেজি-মাধ্যমে পড়ে(অনেক নিম্ন বিত্তরাও ইংরেজি-মাধ্যমে পড়ে, উচ্চ বিত্তরা তো
পড়েই) সেসব স্কুলের মান কীরকম, বা কেন তাদের ইংরেজি-মাধ্যমে পড়ানো হয়, সেসব অন্য
প্রসঙ্গ, শুধু ঘটনাটা উল্লেখ করলাম আর যারা বাংলা-মাধ্যমে পড়ে তাদের পাঠমান
সন্তোষজনক নয় বলে অনেকের অভিমত পঞ্চমশ্রেণিতে পাঠরতরা অবধি নিজের নামটা নাকি ঠিক
করে লিখতে পারে না কেন পারেনা সেটা এখানে আলোচ্য নয় আর একটি বিষয় সামনে এসেছে তা
হল স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে পরের উচ্চ শ্রেণিতে তোলা হবে-- এই ব্যবস্থার অবসান
হতে চলেছে ফলে কেউ কেউ মনে করছেন লেখা পড়ায় নাকি তেমন আর চাড় থাকবে না সেটাও
এখানে আলোচ্য নয় এছাড়া আরও একটি ব্যাপার আছে, বিদেশি অনেকে বাংলা শিখছেন, কারণ
বাংলা বিশ্বের চতুর্থ (বিভিন্ন অভিমতে তা ৪র্থ থেকে ৭ম-এর মধ্যে) জনগরিষ্ঠ ভাষা,
আর রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং বাংলা ভাষার লেখক তাঁকে জানার জন্য, বা তাঁর লেখা তাঁর
ভাষাতেই পড়ার জন্য লোকের আগ্রহ আছে কিন্তু বাংলা লেখার জটিল জালে তারা বিভ্রান্ত
হবেন ফরাসিভাষী ফাদার দ্যতিয়েনের মতো লোক কেমন করে যে এমন চমৎকার বাংলা শিখলেন,
এবং বাংলা লিখে বাংলাভাষীদেরই যিনি টপকে যান, তাঁর দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে ভাবতে হয়
বিদেশি কারও পক্ষে এমন বাংলা শেখা কি সম্ভব? আর সে অসম্ভবকে সম্ভব করতে গিয়ে তাঁকে
যে দুরূহ সাগর পাড়ি দিতে হয়েছে, সে কথা আমরা কেমন যেন বেমালুম ভুলে যাই আছেন অন্য
অনেক ভাষার দক্ষ বাংলা লিখিয়ে বলিয়েরা আছেন আবু সয়ীদ আইয়ুব, কাজুও আজুমা, কিওকা নিয়োয়া, হানা টম্পসন, দং ইউ চেন, জে.ডি. এন্ডারসন, রাইসা ভালুয়েভা,
বাই কাইউয়ান প্রমুখ চিনা, জাপানি, ইংরেজ, রুশ, ফরাসিভাষী মানুষেরা
ছোট ভ ,
বড় ল
ভারতীয়
এবং বিশ্বের অন্যত্র যে লিপিগুলি কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্ট,
সেগুলি এই স্বচ্ছরীতি মেনে লেখা হলে তাদের লিখনের বোধ্যতা বাড়বে, এবং তা সাদরে সংশ্লিষ্ট
পাঠকদের কাছে গৃহীত হবে জড়িয়ে দলা পাকিয়ে লেখার দিন অপগত, এখনকার দিন-- সহজ সরল
করে লেখার দিন, তাই এই রীতিই গ্রহণীয় এব্যাপারে বাংলা যুক্তবর্ণের জন্য যে দুটি
সূত্র তৈরি করা হয়েছে, তা বীজাকারে এখানে উল্লেখ করা যাক, তা নিয়ে আলোচনা এখানে
করা হবে না, তা অন্যত্র করা হয়েছে
(১)c1c2=বঙ্গ, রুদ্ধ, শক্ত
(২)c1 c1c2=তদ্দ্বারা,সত্ত্বা, স্প্লিট
(২)c1 c1c2=তদ্দ্বারা,সত্ত্বা, স্প্লিট
এখানকার সবচেয়ে বড় সুবিধে হল হরফ পরিচয়ের
কিছু পরেই সকল যুক্তবর্ণ অন্তত বানান করে পড়া যাবে এতে বাংলা শিক্ষার্থীর সময়
বাঁচবে দুই বছর কারণ আমরা যদি ধরে নিই যে, দ্বিতীয় শ্রেণি পাশ করে এলে সে সকল
যুক্তবর্ণ পড়তে পারবে, তবে তার মোট সময় লাগে তিন বছর-- প্রাক প্রথম শ্রেণি, প্রথম
শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি আর এখানে প্রাক প্রথম শ্রেণিতেই শিক্ষার্থী সকল হরফ
পরিচয়ের পরে স্বরচিহ্ন তথা আ-কার, ই-কার শিখে নেবে এর পরে তিনটি ফলা চিহ্ন তথা র-ফলা,
রেফ, এবং য-ফলা আলাদা করে শিখে নেবার পরে মনে হয় সকল শব্দ অন্তত বানান করে পড়তে
পারবে কারণ দলা পাকানো মণ্ড হরফ তথা ”নতুন বর্ণ“ তো তাকে আর শিখতে হচ্ছে না যা
শিখেছে সেই হরফই পাশাপাশি বসিয়ে সকল যুক্তবর্ণ তৈরি হচ্ছে এই রীতিতে যুক্তবর্ণের
প্রথম বর্ণটির/প্রথম বর্ণ দুটির আকৃতি ছোট হবে এই যা শিক্ষার্থী সেটা পড়তে পারবে
বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে
শোনা যায় চিনা ভাষায় নাকি ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার হরফ আছে৻ জাপানিতে আছে ১৮ হাজার হরফ
কম্বোডিয়া
বা কাম্পুচিয়ার বর্ণমালায় ৭৪টি, আর হাওয়াইয়ান দ্বীপের বর্ণমালায়
মাত্রই
১২টি হরফ চিনা জাপানি হরফ সংখ্যার তুলনায়
আমাদের হরফ সংখ্যা নগণ্য হতে পারে কিন্তু অকারণ যুক্ত-হরফ বা হরফের মণ্ড রাখা কোনও
কাজের কথা নয়
পশ্চিমবঙ্গ
বাংলা আকাদেমি লেখালিখির ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন বাংলা লিখন-ব্যবস্থায়
স্বচ্ছলিপি ব্যবহার করে মানুষকে পথ দেখাচ্ছেন কিন্তু সম্প্রতি তাঁরা স্বচ্ছলিপি
বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে খবর(ইয়ারবুক বার্তা, অক্টোবর, ২০১১) এখবর বাংলা
ভাষা ও লিপি-ব্যবস্থার পক্ষে মঙ্গলজনক নয়
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি যে ফন্ট ব্যবহার
করেন, তা অনেকটা সরল করে তৈরি করা অনেকটাই তা স্বচ্ছ এই স্বচ্ছতা ভবিষ্যতে আরও
বৃদ্ধি পাবে, এবং তা ব্যবহারে সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং অন্যদের খুবই সুবিধে হবে
লেখার তথা লিপির স্বচ্ছতা যদি বাড়ে তবে তাতে পড়া, বোঝা, লেখা অনেক সহজ হয় এই
স্বচ্ছতা বা সারল্য-- ভাষার ব্যবহার, গতি এবং বোধ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে, সে
ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই তাই লিপির স্বচ্ছতা আরও বাড়ানো দরকার বিশ্বব্যাপী
রোমান হরফের এত যে জনপ্রিয়তা তার মূল কারণ এর আমূল স্বচ্ছতা
বক্ষ এবং লিখলে ক্ষ এবং
বাংলা লিপি ইংরেজির রোমানলিপির মতো পুরো
এ্যালফাবেটিক নয়, এর চরিত্র অনেকখানিই সিলাবিক স্বচ্ছ লিপি ব্যবহারের সূত্রে তা
কালক্রমে পুরো এ্যালফাবেটিক হয়ে উঠবে এ আশা করা যায় শক্ত--শক্ত--শকতপারক--
পার্ক-- পারক, ইত্যাদি
বাংলা লিপির এবং বর্ণমালার কিছু যুগোপযোগী
সংস্কার করা দরকার
প্রায় শ-দুয়েক বছর আগে বিদ্যাসাগর মহাশয় একবার বাংলা লিপির সংস্কার করেছিলেন যা থেকেও যেমন পরে ঌ(লি) আপনিই কোনও এক সময়ে অলক্ষ্যে খসে গেছে বাংলা লিপি সংস্কারে এক সময়ে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি মহাশয় জোরালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যদিও তা ফলপ্রসূ হয়নি এছাড়া, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আমলে স্কুলের পাঠ্য বই প্রকাশনার সঙ্গে দীর্ঘকাল জড়িত ইংরেজ পাদ্রি জন মারডক(John Murdoch) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা লিখন পদ্ধতিকে সরল করার এক প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যদিও তা এতাবৎ কার্যকর হয়নি
প্রায় শ-দুয়েক বছর আগে বিদ্যাসাগর মহাশয় একবার বাংলা লিপির সংস্কার করেছিলেন যা থেকেও যেমন পরে ঌ(লি) আপনিই কোনও এক সময়ে অলক্ষ্যে খসে গেছে বাংলা লিপি সংস্কারে এক সময়ে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি মহাশয় জোরালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যদিও তা ফলপ্রসূ হয়নি এছাড়া, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আমলে স্কুলের পাঠ্য বই প্রকাশনার সঙ্গে দীর্ঘকাল জড়িত ইংরেজ পাদ্রি জন মারডক(John Murdoch) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা লিখন পদ্ধতিকে সরল করার এক প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যদিও তা এতাবৎ কার্যকর হয়নি
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে যখন আনন্দবাজার পত্রিকায়
লাইনো টাইপে ছাপা শুরু হয়, তখন তা হরফ সংগঠনের দিক থেকে অনেকটাই সরল করা হয়েছিল
ফলে পড়া, বোঝা সহজ হয়েছিল যদিও হাতে লেখাটা সহজ হয়নি কারণ হাতে করে লেখা এবং
ছাপার লেখায় তফাৎ থাকে, সেটা ইংরেজিতে প্রচুর পরিমাণে আছে, বাংলাতেও আছে তাই সহজ
করে হাতে লেখা গেল কিনা সে প্রশ্ন তুলে অগ্রগমনের উদ্যোগকে আটকাবার চেষ্টা করা ঠিক
নয় লাইনো টাইপে সরল করে ছাপার ফলে লোকের আরাম হয়েছে কারণ তা বোঝার পক্ষে, পড়ার
পক্ষে সহজ হয়েছিল তাই পরে লাইনোমেশিন টাইপের অনুসরণে হাতে ছাপার ফন্টও অনেক
ক্ষেত্রে লাইনোর আদলে তৈরি করা হত লাইনো টাইপে সেই সহজ করাটা যদি এখন আর একটু
বেশি সহজ করা যায়, তবে সেটা ভালোই হবে
ভালো, সহজ, সুবোধ্য ইত্যাদি গুণ থাকা
সত্ত্বেও সেখান থেকে সরে আসার কারণ কী ছিল?
কারণ ছিল বাণিজ্যিক ক+ত যদি মিশিয়ে দলা
করে ’‘ লেখা যায়, তবে জায়গা কম লাগে, আর ’ক‘
এবং ’ত‘ আলাদা করে লিখলে জায়গা বেশি লাগে-- (ক্ত) মুদ্রণে জায়গা বেশি লাগায় কাগজ
খরচ বেশি, একই জিনিসের জন্য আয় কমে যাবে, বাণিজ্য কমে যাবে সুতরাং বাণিজ্যের
স্বার্থে ক+ত দলা পাকানো হল কিন্তু এতে যে বাংলাভাষার ক্ষতি হল, অগ্রগতি কমে গেল,
তার মূল্য তো এই ব্যক্তি-বাণিজ্যের চেয়ে অনেক বেশি, সেটা ভাবা হল না ’রূপে তোমায় ভোলাব
না‘ গুণেই তোমায় ভোলাব কিন্তু তেমন হল কই?
একচক্ষু হরিণের মতো একটা দিক দেখেই পথ চলা
শুরু হল কুমির যে অন্য দিকে ওঁত পেতে আছে, সেদিকে দেখা হল না ভাষার অগ্রগতিকে সে
খেয়ে নিচ্ছে অন্যান্য ভাষা কিন্তু লিখন-ব্যবস্থাকে
সহজ করার দিকে এগোচ্ছে, বাংলাভাষা কি সে দিকটা দেখবে না? বিশেষ করে ইন্টারনেটের
যুগে আজ আর্জেনটিনা এবং আমতলা একই টেবিলে হাজির সেখানে যত সহজে লোকের সঙ্গে সংযোগ
স্থাপন করা যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে সেটা ভাষার বিস্তৃতি ও প্রভাবের দিকে নজর
রেখেই করা দরকার মাঝে মাঝে আমরা দেখি ফরাসি শব্দটার বানানটা কেমন, অথবা চিনা ভাষা
কেমন করে লেখা হয় নিদেন ওডিয়া, তামিল, হিন্দি, তেলুগু, অহমিয়া ইত্যাদি ভারতীয়
আঞ্চলিক ভাষাগুলিতে লেখার কায়দা কানুন কেমন তা দেখা যেতে পারে সবটা যে বুঝে ফেলব
তা নয়, তবে কৌতূহল তো কিছুটা মেটানো যায় এক ভাষার শব্দ অন্য ভাষায় কীভাবে লেখা
হবে, বা তার উচ্চারণ কী, তা এখন নেটে দেখা বেশ সহজ হয়ে এসেছে এসব ক্রমে নেটে
পাওয়া যাচ্ছে সেখানে বাংলায় দলা পাকানো ব্যবস্থা থাকলে, যাঁরা এসব উদ্যোগ নিচ্ছেন,
তাঁরা ভাষাটির লিখনে এত বিকট জটিলতা দেখে ভাষাটিকে এড়িয়ে যাবেন ফলে অন্যদের থেকে
আমরা পিছিয়ে এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকব সেটা তো কখনও কাম্য নয় প্রকৃত স্বচ্ছ লিপি
ব্যবহার করে বাংলা লেখার ব্যবস্থা সহজ সরল করতে তো হবেই, আমাদের বরং স্পেল চেকার
সফ্টওয়্যার তৈরি করার দিকে নজর দেওয়া দরকার
সহজভাবে লেখার ব্যবস্থা যেটিতে আছে এমন
ফন্ট ডাউনলোড করে নিজের কাজে লাগান নিজেরই তাতে লাভ, অন্যে আর কী বলবে? আমি একটা
ধরতাই দিতে পারি, তাতে অবশ্য নিজের ঢাক খুব দমা দম পেটানো হবে তা হোক, কাজে লাগলে
সেটি ব্যবহার করে দেখতে পারবেন আমার তৈরি করা ইউনিকোড ফন্টটিতে কেবল ক্ষ, জ্ঞ এই
দুটি মাত্র দলা পাকানো মণ্ড হরফ আছে, অন্য সব ক্ষেত্রেই তা স্বচ্ছ করা হয়েছে
প্রথম দিকে একটু বাধো বাধো অবশ্যই ঠেকবে, পরে আর ভাবতে হবে না, বরং এই ব্যবস্থাই
শ্রেয় মনে হবে তখন জ+ঞ=(জ্ঞ) কি হয়? এবং ঞ+জ=(ঞ্জ) কি হয়? তা নিয়ে আর
ভাবতে হবে না লেখার ব্যবস্থার মাধ্যমে আপনিই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, গুলিয়ে
যাবে না এই দুটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞ লোকেরাও মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলেন, টিউটোরিয়ালে ”বিঞ্জান“
শেখানো হয়, বিজ্ঞান থাকে দূরে! এখন কম্পিউটারই এর সমাধান করে দেবে, আপনার ভাববার
দরকার নেই
এ ধরনের ব্যাপার স্যাপার নিয়ে এত যে
মতান্তর হয় তার মূল কারণটি রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট করেই বলেছেন--”একবার যেটা অভ্যাস হইয়া
যায় সেটাতে আর নাড়া দিতে ইচ্ছা হয় না কেননা স্বভাবের চেয়ে অভ্যাসের জোর
বেশি...অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে একটা অহংকারের যোগ আছে যেটা বরাবর করিয়া আসিয়াছি
সেটার যে অন্যথা হইতে পারে এমন কথা শুনিলে রাগ হয় মতের অনৈক্যে রাগারাগি হইবার
প্রধান কারণই এই অহংকার“ যেটা চিরকালীন অভ্যাস, সেটাই ঠিক, তার আর অন্যথা হতে
পারে না, এই ভাবনাই রক্তচক্ষুর কারণ
আপনার কম্পিউটারে এই ফন্ট প্যাকেজটি
ডাউনলোড করে নিয়ে প্রথমে ফন্ট ফোল্ডার খুলে Read me First ফাইলটি পড়ে কাজ শুরু করুন আর আশা করি বেশ সহজে
লেখালিখি করতে পারবেন এটি দিয়েই নাহয় আপনার ”লেখাপড়ার“ সূচনা হোক (স্বচ্ছ
লিপিতে৻) ভবিষ্যতে আরও এমন অনেক ফন্ট তৈরি হবে এবং তা নেটে পাওয়া যাবে, এখন এটি
দিয়েই আপাতত কাজ শুরু করা যাক এটি কাজ করবে উইন্ডোজ৭(Windows7) পরিবেশে(Environment)
যুক্তিশীল
আধুনিক মন স্বচ্ছলিপি গ্রহণে কোনও অনীহা প্রকাশ করবে না, বরং সাদরে গ্রহণ করবে
সংযোজন ১:--
নতুন
প্রকাশিত একটি ছোটদের পত্রিকা ”ছেলেবেলা“ সেখানে একটি বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত
হয়েছে বইটি হল, কানাইলাল চক্রবর্তীর ’চলো দেখে আসি‘ বইটি জাতীয় পুরস্কার
প্রাপ্ত বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে--”বইটি শিশুসাহিত্যে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে এটি
লেখা হয়েছে শিশুদের জন্যে যত্ন করে ও যুক্তাক্ষর বর্জিত করে-- আনন্দমেলা,
১৬/০৩/১৯৮৮“
যুক্তাক্ষর বা যুক্তবর্ণ বাংলাভাষায় এমন একটি
কঠিন সমস্যা যে তা কেবল শিশুদের কাছে কঠিন এবং দুর্বোধ্য নয়, তা বয়স্কদেরও শৈশব
পার হতে দিতে চায় না
সংযোজন ২:--
আগে হাতে করে ‘রু’ লেখায় অসুবিধে হত
গরু/ -এর
কোন্টা হাতে করে লেখায় সুবোধ্য? অবশ্যই “” কিন্তু তা
ভাষার লেখা ও ছাপাকে জটিল করে দেয় তাই এযুগে জটিলতা এড়িয়ে লেখা চলছে ‘গরু’
বিদ্যাসাগরের হাতে ‘ড়’ ব্যঞ্জনবর্ণে স্থান পায় লেখার মধ্যে ‘ড়’ চালু ছিল আগে থেকেই যদিও বাংলা বর্ণমালায় তার জায়গা ছিল না
বিদ্যাসাগরের হাতে ‘ড়’ ব্যঞ্জনবর্ণে স্থান পায় লেখার মধ্যে ‘ড়’ চালু ছিল আগে থেকেই যদিও বাংলা বর্ণমালায় তার জায়গা ছিল না
আর প্রচলিত বর্ণ ‘র’ পাই অতি
প্রাচীনকাল থেকে, তাই সেখানে হাতে করে
তখন লেখা হত() যেমন--
এই সমস্যার সমাধান আনন্দবাজার পত্রিকা ভেবেছে অন্য রকম পথে তারা ঝাড়ু লিখেছে অর্থাৎ ঝ পূর্ণ মাপের হরফ, ধরি এক সেমি. হলে ড় হবে তার অর্ধেক তথা আধ সেমি. এতে এই সমস্যার একটা জোড়াতালি সমাধান হচ্ছে, কিন্তু হাতের লেখায় সেটা করা কঠিন ‘বাংলা নতুন-বানান’ ব্যবস্থায় এটি লেখা হবে
এখানে সব হরফেই
উ-কার পাশে দেওয়া হয়, ফলে রীতির কোনও ব্যত্যয় করতে হয় না অবশ্য হাতে করে এভাবে
লেখা সুবিধাজনক নয়, কারণ এটা মূলত ছাপার হরফ-রীতি, হাতে লেখার রীতি নয়
৽
No comments:
Post a Comment