বাংলা বানানের নিজস্বতা নেই
বাংলা বানানের নিজস্বতা নেই
মনোজকুমার দ. গিরিশ
ধারক বাক্য[প্যানগ্রাম](Pangram="every letter") বাংলা ইউনিকোড ওপেন টাইপ ইউ.আই. ফন্টে একটি বাক্য লিখে দেখানো যাক, যেখানে বাংলা সকল বর্ণ-- স্বরবর্ণ(১১), ব্যঞ্জনবর্ণ(৩৯), সকল স্বরচিহ্ন (১০), সকল ব্যঞ্জনচিহ্ন তথা ফলা(৮) ইত্যাদি আছে
আরও উন্নত সেকেন্ড জেনারেশন ফন্ট ‘নীরবিন্দু-বাংলা১৪’
ব্যবহার করে লেখা--
বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের
পরবর্তী পর্যায়ের ফন্ট হল থার্ড জেনারেশন বাংলা ফন্ট(Third Generation Bangla Font) এই ফন্টে সব কিছু সহজে লেখা যাবে তখন বাংলা বানান সহজ অনায়াস হবে তার কিছু উদাহরণ--
http://banglamagna.blogspot.in/2014/08/blog-post.html
বাংলা বানানের নিজস্বতা নেই
বাংলা বানানের নিজস্বতা নেই
লেখাটি ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’AhanLipi-Bangla14 ফন্টে
পড়লে লেখাটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে ফন্ট ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zipবাংলা বানানের নিজস্বতা নেই
মনোজকুমার দ. গিরিশ
মণীশ পার্ক, কোলকাতা, ভারত
জল যেমন যে
পাত্রে রাখা হয় তার আকৃতিও হয় তেমনি, বাংলা বানানও যেন ঠিক তাই বাংলা শব্দ
‘আত্তিয়’, সংস্কৃত করে লেখা হয় ‘আত্মীয়’, আর ইংরেজিতে ‘বাংলা’ শব্দটিকেই লেখা হয়,
বেংগলি Bengali, আর এখন শুরু হয়েছে হিন্দির অনুকরণে ‘গোয়ালিয়র’-কে গ্বালিয়র লেখা, কিংবা
ইংরেজি শব্দের বানান Quiz ক্যুইজ় লেখা
‘বাংলা’ একটি
বিশেষ্য পদ, অর্থাৎ নামশব্দ, তারও কি অনুবাদ হবে? তাহলে ‘কালীপদ রায়’ নামটি কি
লেখা হবে ‘ব্ল্যাকফুটেড জাজ্মেনট’ Blackfooted Judgement. অথবা কৃষ্ণধন মিত্র হবে ‘ব্ল্যাকমানি ফ্রেন্ড’ Blackmoney Friend.
‘বাংলা’
শব্দটি কেন ইংরেজিতেও “বাংলা” Bangla/BANGLA লেখা হবে না? এটাও ইংরেজি করে লিখতে হবে Bengali? এই
আশ্চর্য ব্যাপার বাংলায় ছিল, আছে, এবং হয়তো থাকবেও এজন্যই বাংলা ‘আত্তিয়’ সংস্কৃতে লেখা হয়
‘আত্মীয়’ কোনও বাঙালি কি এই শব্দটিকে “আত্মীয়” বলে উচ্চারণ করে? করে না কারণ তা
বাংলা নয় যে শব্দ যেমন করে বলা হয়, বা উচ্চারণ করা হয়, সে শব্দটি তো ঠিক তেমনটি
করেই লেখা হবে, নাকি তা অন্যরকম করে লেখা হবে? মুখে ‘বিড়াল’ বলে তা “মার্জার” লিখব
কি? নাকি তা ‘মেকুর’ লিখব? ‘মেকুর’ও তো বিড়ালের প্রতিশব্দ তাহলে মুখে ‘বিড়াল’ বলে
অন্য কিছু লিখতে নিশ্চয়ই অনুমোদন পাওয়া যাবে না, তাহলে “বাংলা” বলে ইংরেজিতে Bengali লেখা হবে কেন? তারা সায়েব বলে? আমাদের প্রভু বলে? হোক না তারা প্রাক্তন, তবুও
তো এককালে তারা প্রভু ছিল! এই প্রভুত্ব ব্যাপারটা বাঙলির মাথায় খুব জোরালো কাজ
করে অতীত ইতিহাসও সে কথা বলে, আধুনিক ইতিহাস কেন আর অন্য কথা বলবে?
‘গোয়ালিয়র’-কে
গ্বালিয়র লেখার একটা জোরালো যুক্তি হল সেখানকার মানুষ এমনি ভাবেই তা বলে এটা
অকাট্য যুক্তি বেশ তো বাঙালিরা তো “আত্তিয়” বলে, সেটা কেন তবে “আত্তিয়” না লিখে “আত্মীয়”
লেখা হবে? হবে এই জন্য যে, তা সংস্কৃত শব্দ তাহলে সেই প্রভুত্বের ব্যাপারটা তো
এসেই গেল বাংলা ভাষাটা সংস্কৃত নয়, তা বাংলাই আর “বাংলাটা” বাংলা করেই লিখতে
হবে সংস্কৃত আমাদের মা হোক, আর না-ই হোক, বাংলাটা বাংলাই মায়ের লেজুড় হয়ে কি
সন্তান চিরকাল তার কোলে চড়ে চলবে? প্রাচীন সংস্কৃতভাষা কি বাংলা ভাষার ‘বাংলা’
হবার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে? যদিও সংস্কৃতভাষা বাংলা ভাষার জননী নয়, বাংলার এই জননী
ধারণাটা ভুল ঠাকুরমাকে জননী বলা চলে না, ঠাকুরমার ঠাকুরমাকেও নিশ্চয়ই জননী বলা
চলে না আমরা সেটাই করে চলেছি সংস্কৃত ভাষার মহাপণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ
শাস্ত্রী মহাশয় বলেছেন, “অনেকের সংস্কার বাংলাভাষা সংস্কৃতের কন্যা...আমি
কিন্তু সংস্কৃতকে বাংলার অতি-অতি-অতি-অতি-অতি-অতিবৃদ্ধ প্রপিতামহী বলি পাণিনির
সময় সংস্কৃতকে ভাষা বলিত অর্থাৎ পাণিনি যে সময় ব্যাকরণ লেখেন তখন তাঁহার দেশে লোকে
সংস্কৃতে কথাবার্তা কহিত তাঁহার সময় আর-এক ভাষা ছিল তাহার নাম 'ছন্দস্'__
অর্থাৎ বেদের ভাষা বেদের ভাষাটা তখন পুরানো, প্রায় উঠিয়া গিয়াছে সংস্কৃত ভাষা
চলিতেছে পাণিনি কত দিনের লোক তাহা জানি না, তবে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ, সপ্তম শতকের
বোধ হয় তাহার অল্প দিন পর হইতেই ভাষা ভাঙিতে আরম্ভ করে বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পরই
তাঁহার চুলার ছাই কুড়াইয়া এক পাথরের পাত্রে রাখা হয় তাহার গায়ে যে ভাষায় লেখা
আছে, সে ভাষা সংস্কৃত নহে;তাহার সকল শব্দই সংস্কৃত হইতে আসা, কিন্তু সে ভাষা
সংস্কৃত হইতে অনেক তফাত হইয়া পড়িয়াছে তাহার পরই অশোকের শিলালেখের ভাষা তাহার পর
মিশ্রভাষা, ইহার কতক সংস্কৃত ও কতক আর-একরকম একটি বাক্যে দুরকমই পাওয়া যায়
এভাষার বইও আছে, শিলালেখও আছে তাহার পর সুঙ্গ ও খারবেলদিগের শিলালেখের ভাষা
তাহার পর সাতকর্ণিদের শিলালেখের ভাষা তাহার পর পালিভাষা তাহার পর নাটকের
প্রাকৃত সকল প্রাকৃতের সহিত আমাদের সম্পর্ক নাই মাগধীর ও ওঢ্র মাগধীর সহিত
আমাদের কিছু সম্পর্ক আছে তাহার পর অনেক দিন কোনো খবর পাওয়া যায় না তাহার পর
অষ্টম শতকের বাংলা তাহার পর চণ্ডীদাসের বাংলা তাহার পর বৈষ্ণব কবিদের বাংলা সব
শেষে আমাদের বাংলা” (পৃঃ- ৩৬৭, অষ্টম
বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মেলনের সাহিত্য-শাখার সভাপতির সম্বোধন, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
রচনা-সংগ্রহ) নানা বিবর্তনের মাধ্যমে, নানা আঞ্চলিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বাংলা
ভাষার জন্ম এই মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ
শাস্ত্রী মহাশয়ই নেপালের রাজদরবার থেকে বাংলার আদি পুথি উদ্ধার করে প্রকাশ
করেন ও তার নাম দেন “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধগান ও দোহা” অর্থৎ
বাংলা ভাষার আদি উৎস তিনিই উদ্ধার করেছেন তাঁর কথাকে হেলা করার সাধ্য কারও নেই
হরপ্রসাদ
শাস্ত্রী(১৮৫১-১৯৩১, জীবনকাল ৮১ বছর) রচনা-সংগ্রহ, দ্বিতীয় খণ্ডের ভূমিকায় বলা
হয়েছে-- “বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আজ আমরা যে পূর্ণতায় পাচ্ছি, তার তথ্যভিত্তিক
মূল্যবান উপাদান বেশিরভাগ তাঁরই আবিষ্কার” “...চর্যাগীতিতে প্রমাণ হল বাংলা
সাহিত্যের জন্ম বৌদ্ধ সহজিয়াকবিদের হাতে” “...তাঁর সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্ব এই যে,
যতটা কাজ এগিয়ে নিতে পেরেছিলেন তা থেকে সংগঠিত ধারণায় বাঙালি সংস্কৃতির এবং বাংলা
সাহিত্যের একটি কালানুক্রমিক পুরো ছবি চোখের সামনে দেখতে পেতেন” “... বাংলায়
“আর্যের মাত্রা বড়োই কম, দেশীয় মাত্রা অনেক বেশি” “বাঙালি মূলত বর্ণসংকর ব্রাহ্মণ্য
উপাদান, বৌদ্ধ উপাদান, ইসলামের উপাদান-- যা-কিছু এখানে এসেছে কিছুই মূলের শুদ্ধতা
বজায় রাখতে পারে নি বরং এখানকার আদি জনবৃত্তের ধ্যান-ধারণার আনুগত্য মেনে
নিয়েছেবাঙালির এই খাঁটিত্ব তাই শাস্ত্রীমশায়ের সব ভাবনার ভিত্তিতত্ত্ব ... বাংলা
ভাষা ও সাহিত্য যে এই বাইরে থেকে পাওয়া উপাদান আত্মস্থ করে সমৃদ্ধ হয়েছে, স্মার্ত
ব্রাহ্মণ ঘরের ছেলে হরপ্রসাদই অন্ধ বিরুদ্ধতার মুখে দাঁড়িয়ে একথা বার বার বলেন
কারণ তিনি মুক্তমনে এই সত্য মানেন যে, “গত ৭০০ সাত শত বৎসর ধরিয়া মুসলমান ছাড়িয়া
বাংলার কোনো কাজই হইতেছে না” ...এমন-কি সাহিত্য পরিষদে প্রশ্ন তোলেন, “বাঙালি
ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্য যে-সকল সংস্কৃত গ্রন্থ লিখিয়া গিয়াছেন, তাহার উপর
বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের অধিকার বিস্তার করিতে যাইতেছেন, তবে বাংলায় বসিয়া যাঁহারা
ফারসি, উর্দু ও মুসলমানি বাংলায় বহু-সংখ্যক পুস্তক লিখিয়াছেন, তাঁহাদিগকে বাদ দেন
কী করিয়া? সেও তো বঙ্গীয় সাহিত্য!”(ভূমিকা, পৃঃ ৩১-৩২)
বাংলাভাষায়
লৌকিক প্রভাব তাই বেশি মনে হয় বৌদ্ধ, মুসলিম প্রভাবও প্রবল বৌদ্ধ সাহিত্যই প্রথম
বাংলা ভাষার উপাদানের ধারক তাই তাকে জোর করে সংস্কৃতমুখী করলে তার সমস্যা বাড়বে
ছাড়া কমবে না এযেন এক গাছের ছাল অন্য গাছে লাগানোর চেষ্টা, কঠিন শুধু নয়, অসম্ভব বলাই ভালো তাই বাংলার
লৌকিক প্রভাবের দিকে নজর রেখে তাকে সেভাবে পুনর্গঠিত করতে হবে বাংলা ভাষার যা
স্বাভাবিক গতি তাকে সেভাবে চলতে দিতে হবে, তবেই তা সহজ, সুন্দর আনন্দদায়ক হবে
দু’একদিন আগে(২৩/০৮/২০১৪)
একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল টিভিতে বাংলায় মহাভারত প্রচার নিয়ে তার কথা বাংলায়
মহাভারত বুঝতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে, হিন্দিতে সহজে বুঝতে পারা যাচ্ছে কারণ বাংলাটা
খুব কঠিন ভাষা আমি তাকে বললাম, মহাভারতের যে বাংলা অনুবাদ হয়েছে সেটা ভালো হয়নি তাই
তা ভালো বুঝতে পারা যায় না বাংলাটা যে খুব কঠিন ভাষা এটা নানাজনের মুখে নানা সময়ে
শুনেছি, এক সময়ে শিক্ষকতা করার কালে স্কুল ছাত্রীদের মুখেও তা শুনেছি, অথচ বাংলা
তাদের মাতৃভাষা আসল কারণটা হল সরল লৌকিক বাংলাকে চাপা দিয়ে রেখেছে সংস্কৃতমুখীনতা,
বিশেষ করে বাংলা বানান বাংলা শব্দ বাঙালি যেভাবে উচ্চারণ করে শব্দের বানান প্রায়ই
তেমন করে লেখা হয় না ফলে তার বানান যে কী, তা মনে রাখা কঠিন, এবং শব্দ বুঝতে
সাধারণ মানুষের কষ্ট হয় আত্তিয়, পরিখ্খা মুখে বলে লিখতে হচ্ছে আত্মীয়, পরীক্ষা
বাংলাকে সংস্কৃতমুখী করার এই চেষ্টায় আসলে বাংলার মৌলিকতা হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা
সংস্কৃতের চেয়ে খারাপ (নিম্নমানের) ভাষা হতে পারে, কিন্তু তাকে তারই মৌলিকতায় ফেরানো
দরকার আমার ফল টক বলে, অন্যের ফল মিশিয়ে তাকে টকমিষ্টি করা কেন? এতে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে “বাংলাটা খুব কঠিন
ভাষা” হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতো মহাপণ্ডিত দুএকজন মাত্র সাহস করে বাংলাকে ‘বাংলা’
করার কথা বলেছেন, কিন্তু শেষ অবধি তাতে ফল তেমন কিছু হয়নি দশচক্রে ভগবান ভূত
হয়েছে
এবার বোধহয় কিছুটা উদ্যোগ নিয়ে
বাংলাভাষাকে তার নিজস্ব স্থানে বসানো দরকার তাতে বাংলা লেখা পড়া কিছুটা সহজ হবে,
বাংলা বানান নিয়ে মানুষ স্বস্তি পাবেন সংস্কৃত খুবই উন্নতভাষা সন্দেহ নেই, কিন্তু
বাংলাভাষা তো বাংলাই সংস্কৃতের জুতোয় পা গলালে বাংলা হাঁটতে পারবে না আর বাস্তবে
হয়েছেও তাই বাংলাভাষা চর্চাকারী পণ্ডিত অরুণ সেন বলেছেন, “বাংলা ভাষায় লেখালেখি,
পড়া ও পড়ানো, বই বা পত্রপত্রিকার সম্পাদনা ও প্রকাশনার কিংবা প্রুফ-দেখার কাজ,
ইত্যাদিতে যাদের জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে, তাদের বহু মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার মধ্যে
একটি অন্তত এই: বাংলা বানান নিয়ে যথেচ্ছাচার কত রকমের এবং কত গভীর হতে পারে তা
চাক্ষুষ করা”(বানানের অভিধান, পৃঃ-১৭)
বাংলা বানান
নিয়ে যথেচ্ছাচার আগেও ছিল বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া বলেছেন,
“অনেকের বিশ্বাস:বাংলাভাষায় বানানসমস্যা বোধ হয় আধুনিক সৃষ্টি প্রাচীনকালে এমনটি
ছিল না; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয় বর্তমানের তুলনায় প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা
ভাষায় এই সমস্যা সকল প্রকারেই জটিল ছিল” ['বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা', বাংলা
একাডেমী:ঢাকা, প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি-১৯৮৪, পৃঃ৮৭]। বাংলা বানানের এই জটিল
সমস্যা বাংলাভাষাকে সামনে রেখে সমাধানের চেষ্টা করা হয়নি, বাংলা বানান সমস্যা
মেটাবার ধ্রুবতারা ছিল এবং এখনও আছে সংস্কৃত যদি লক্ষ্য ঠিক করা না হয়, যদি এমনিভাবে
ভুল লক্ষ্য অনুসরণ করে বাংলা ভাষা ও বানানের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয় তবে তা
কখনোই মিটবে না বাংলাভাষার গন্তব্য যদি হয় পুবে তো তাকে চালানো হচ্ছে উত্তরে
তাহলে তা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাবে কেমন করে?
অবশ্য সঠিক
লক্ষ্যে সঠিক দিকে তার গতি পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন, পূর্ববঙ্গ সরকারী ভাষা
কমিটি(১৯৪৯), এবং পরে ১৯৭৮
খ্রিস্টাব্দে
জগন্নাথ চক্রবর্তী [বাংলা বানান সংস্কার, দেশ, ১১মার্চ,
১৯৭৮] লক্ষ্য স্থির করলেও সংস্কারের সবকিছু একত্রে প্রয়োগ করার পরিমাণ
বা মাত্রা তথা ডোজ ছিল খুবই ভুল দুটি ক্ষেত্রেই তাই একই ব্যাপার ঘটেছে, তাই তা
শেষ অবধি বাস্তবে কার্যকর হয়নি
বাংলা বানানের
সবটা একত্রে সংস্কার করতে গিয়ে সংস্কার-করা বাংলা এমন হয়ে দাঁড়াবে যে প্রাথমিক
দৃষ্টিতে তা আর আমাদের চেনা বাংলা থাকবে না, প্রাথমিক দর্শনেই মানুষ ভয় পাবেন, তাই
একটু একটু করে তার বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে যদি কাউকে খেতে দিয়ে সমস্তটা খাবার
একত্রে মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তবে সেটা খাওয়া থাকে না, সেটা অত্যাচার হয়ে দাঁড়ায় দুটি
ক্ষেত্রেই বাংলা বানান সংস্কার নিয়ে সেই একই কাণ্ড ঘটেছে সব খাবারটা একত্রে মুখে
ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টায় তা ব্যর্থ হয়েছে প্রথমে উচ্ছে ভাজা দিয়ে ভাত মেখে খাবে, তার
পরে ডাল বা তরকারি, তারপরে মাছ, শেষে মিষ্টান্ন বা পায়েস ইত্যাদি যা থাকবে তা খেতে
হবে সেটা না করে সব খাবারটা একত্রে মুখে ঢোকালে তার আর খাওয়া থাকে না, শাস্তি হয়ে
দাঁড়ায় সেভাবে বাংলা ভাষা বা বানান সংস্কার করা যাবে না মানুষ তা কখনোই গ্রহণ
করবেন না
দেখতে হবে
সবচেয়ে বেশি ভুল কোথায় হয়, সবচেয়ে সহজ ভুল কোন্টা হয়? সেই সর্বাধিক ভুলের একটি
মাত্র বিষয় নিয়ে বানান সংস্কারের কাজটি শুরু করতে হবে সবটা একত্রে নিয়ে
ল্যাজেগোবরে হবার দরকার নেই তাড়াহুড়ো করলে একাজ করা মুশকিল হবে ধীরে ধৈর্য ধরে
একটু একটু করে এগোতে হবে হোক না ধীরে, অসুবিধে কীসের? কতকালই তো গেছে বয়ে, আরও
কিছু কাল যাবে, কিন্তু ধীরে ধীরে আরোগ্য হবে লাফাঝাঁপি করলে তাতে সোরগোলই হবে,
কাজ কিছু হবে না
দেখা যায়
বাংলা বানানে মোট ভুলের আশংকা প্রায় ৩১.৭৬%শতাংশ এর মধ্যে সবচেয় বেশি ভুলদায়ী
ব্যাপারটি ই/ঈ, ি/ী-এর দখলে এদুটির গোড়া তুলে ফেলতে পারলে মোট ভুলের প্রায়
২৫%শতাংশ ভুল ঘুচে যাবে তাহলেই মানুষ বিরাট স্বস্তি পাবেন তখন মানুষের মনে হবে
আরও একটু এগোনো যাক এর পরে দেখতে হবে কোন্ ভুলটি এর পরে সর্বাধিক, সেটিকে উচ্ছেদ
করতে হবে এভাবে একটি একটি করে বিষবৃক্ষ ছেদন করলে, প্রকল্প শেষে বাংলা বানানে আর
ভুল হবে না ভুলের সুলুক খুলে রেখে আমরা ভুল ঠেকাতে চাইছি এভাবে ভুল ঘুচবে না
বাড়ী, গাড়ী,
শাড়ী বানান এখন শুধরে করা হয়েছে বাড়ি, গাড়ি, শাড়ি এমনি করে শব্দ ধরে ধরে বানান
সংশোধন করলে তা ভুলের গোলে আটকে থাকবে, কোনও দিনই তা নিরঙ্কুশ হবে না বানান
সংস্কার করতে হবে মূল এবং মৌলিক বর্ণ ধরে তা হলেই বিষবৃক্ষ ছেদন করা যাবে,
অন্যথায় তা কিছুতেই সম্ভব হবে না এ ব্যাপারে আমার একটি লেখা দেখা যাবে, 'পুঁথি ও পত্র' ষাণ্মাসিক ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, ২৫বৈশাখ ১৪২১ সংখ্যায়(বাংলা বানান বিভ্রাট-- বিভ্রাট
বানানে?)
বাংলায় আছে প্রায়
দেড় লক্ষ শব্দ, তার কটা সংশোধন করা হবে? আর তার কটাই-বা সংস্কারের পরে সঠিকভাবে
মনে রাখা যাবে বৃক্ষের শাখা ছেদন করে বাংলা বানানের রোদন রোধ করা যাবে না, ভুলের
গোড়া উচ্ছেদ করতে হবে
সঠিক
পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে মনে হয় ২৫ বছর পরে বাংলায় বানান ভুল আর একদম থাকবে না সেই
লক্ষ্যে পণ্ডিতেরা একত্র হয়ে কাজ করলে বাংলায় বানান ভুল সত্যিই ঘুচবে মানুষের বানান-দুঃখ
ঘুচবে বাংলা ভাষার প্রসার প্রচার উন্নয়ন ঘটবে, অন্য ভাষার মানুষও বাংলা ভাষার
প্রতি বেশি আগ্রহী হবেন
ধরি বাংলা
থেকে ঈ/ী বাতিল করা হল, রইল কেবল ই/ি বর্ণ এবং চিহ্ন আর ব্যবহারিক সুবিধার জন্য ি-চিহ্নের বদলে ী-চিহ্ন
কাজে লাগানো হল, অর্থাৎ ‘ই’ বর্ণ এবং ‘ী’ চিহ্ন বজায় রইল তখন নীতি, রীতি, গীতি
ইত্যাদির বানান আর ভুল করা যাবে না, কারণ তখন তা লেখা হবে-- নীতী, রীতী, গীতী ভুল
করবে কে, ভুল করবে কেমন করে? ভুল হবে কোথায়? “নীতি/রীতি/গীতি” লেখাই তো যাবে না
তখন ভুল করতে হলে অনেক ভেবে চিন্তে চেষ্টা করে ভুল করতে হবে, কারণ ভুলের সুলুকই তো
বন্ধ হয়ে গেছে যে হরফ নেই, যে চিহ্ন নেই তা কেমন করে লেখা হবে? এখন কি আমরা ঌচু(লিচু)
লিখতে পারি লি(ঌ) তো বাংলায় নেইই, তা আর কেমন করে লেখা যাবে? বাংলায় ঈ বর্ণ, এবং ‘ি’
চিহ্ন না থাকলে তেমনি তখন তা আর লেখা যাবে না তখন নীতী, রীতী, গীতী ছাড়া লেখাই তো
যাবে না, কোনও প্রকার ব্যতিক্রম থাকবে না, অর্থাৎ লেখা আর বানান সহজ হবে, বানান সম্পূর্ণ
নিশ্চিত হবে
বাংলায় এতদিন
হাতে লেখা, এবং প্রেসে ছাপা হয়েছে যে গঠনের হরফে, পরে যখন কম্পিউটার ফন্ট(কম্পিউটারে
লেখার জন্য হরফসমূহ) তৈরি হল কম্পিউটারে বাংলা লেখার জন্য, সেখানেও বাংলা লেখার
হরফের মূল গঠনের কোনও পরিবর্তন হয়নি প্রথম দিকের সে কম্পিউটার ফন্টগুলি হল
কারিগরিভাবে নন-ইউনিকোড ফন্ট পরে এলো কারিগরিভাবে অনেক উন্নত ইউনিকোড ফন্ট ইউনিকোড
ফন্ট হল আন্তর্জাতিক মানের ফন্ট কিন্তু এবারেও বাংলা হরফের মূল গঠনের কোনও মৌলিক
পরিবর্তন হয়নি হরফের বাইরের গঠন দেখে এটি কোন্ ধরনের ফন্ট তা বোঝার উপায় নেই বোঝাবার
দরকারও অবশ্য তেমন নেই কিন্তু বাংলা ফন্ট কারিগরিভাবে এগোলেও গঠনগত দিক দিয়ে
এগোয়নি যেমন একটি শব্দ ‘উষ ’ বাংলা ইউনিকোড ফন্টেও লেখায় একইরকম রইল, লেখা হল
‘উষ ’ অর্থাৎ সেই পুরানো কায়দায় দলাপাকানো মণ্ডহরফ বা যুক্তবর্ণ অগ্রগত
পদ্ধতিতে “উষ্ণ” লেখা হল না এই যুক্তবর্ণ/যুক্তলিপি/লিপ্তলিপি/মণ্ডহরফ
বাংলা লিখনের পক্ষে অগ্রগমনের সহায়ক নয় এজন্য গঠন করা হয়েছে সেকেন্ড
জেনারেশন বাংলা ফন্ট(Second Generation Bangla
Font), যেখানে যুক্তবর্ণ আর দলা পাকানো হবে না যুক্তবর্ণের সম্পর্কিত
অক্ষর/লিপি/হরফ/বর্ণগুলি পাশাপাশি বসবে প্রথম হরফটি হবে ছোটো মাপের আর পরের হরফটি
হবে যথাযথ যেমন-- “শক্ত” লিখতে হলে, শ এবং ছোটো ক+ত=শ ক ত=শক্ত এই একই নিয়মে সব সময়েই লেখা চলবে, ছাপা হবে তবে এই মুহূর্তে হাতের
লেখায় হঠাৎ করে এই পরিবর্তন আনা না গেলেও ধীরে ধীরে তা আসবে
বাংলায় আছে
প্রায় ৩৯৫টি যুক্তবর্ণ, এর অনেকগুলিই যুক্তবর্ণ/ যুক্তলিপি/ লিপ্তলিপি/ মণ্ডহরফ
কিন্তু সেরকম যুক্তবর্ণ/যুক্তলিপি/লিপ্তলিপি/মণ্ডহরফ করে আর তা লেখা তথা ছাপা হবে
না প্রচলিত কায়দা বর্জন করা হবে, অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে, যুক্তিকে প্রাধান্য
দিতে হবে
সেকেন্ড
জেনারেশন ফন্ট আরও উন্নত করে গঠন করা হয়েছে, নতুন একটি রূপ সেটি ব্যবহার করে কিছু লিখন দেখা যাক--
ধারক বাক্য[প্যানগ্রাম](Pangram="every letter") বাংলা ইউনিকোড ওপেন টাইপ ইউ.আই. ফন্টে একটি বাক্য লিখে দেখানো যাক, যেখানে বাংলা সকল বর্ণ-- স্বরবর্ণ(১১), ব্যঞ্জনবর্ণ(৩৯), সকল স্বরচিহ্ন (১০), সকল ব্যঞ্জনচিহ্ন তথা ফলা(৮) ইত্যাদি আছে
বিষণ্ণ
ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের নিখুঁত গল্পটির ডালপালা অর্ধেক ছড়াতেই
ঋতু ভুঁইঞা আর ঐন্দ্রিলা ধড়ফড়িয়ে দারুণ হৈ-হৈ করে উঠল__ ওঃ, ব্যাস্ এবার থামো তো, বুঝেছি বড্ডো পুরানো ঢঙের কেমন
এক গল্প যার নীতিবাক্য হল,“মূঢ় আড়ম্বর ও আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ
ক্ষতি”-- তাই না, এ্যাঁ? ০১২৩৪৫৬৭৮৯ ৳৫৬/-
৫৬/-
ইংরেজির মতো একই কায়দা অনুসরণ করে যদি
বাংলায় নতুন প্রবর্তিত ‘যুক্তবর্ণ ব্যবস্থায়’ লেখা হয়, তবে কিন্তু ইংরেজি
হরফ-ব্যবস্থার চেয়ে তা আরও ভালোভাবে লেখা যাবে যেমন, যদি ইংরেজিতে stop, school,
club
লিখি তবে বাংলাতে সেটাই অনেক বেশি ভালোভাবে লেখা যাবে-- স্টপ, স্কুল, ক্লাব এতে
ভালোটা কী হল? স্টপ লিখতে ‘স্ট’-এর ছোটো স-এর
উচ্চারণ হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায় লেখার হরফে সেটা প্রতিফলিত (ছোটো হরফ তাই
উচ্চারণও লঘু বা অল্পমাত্রার) আবার স্কুল-এ ‘স্ক’-এ স-এর
উচ্চারণ এবারও হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়, লেখার হরফে এবারও সেটা প্রতিফলিত, ক্লাব
লেখায় তেমনি ‘ক্ল’-তে ক-এর উচ্চারণ
হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়,
লেখার হরফে সেটাও প্রতিফলিত ইংরেজিতে কিন্তু সেটা হয় না ইংরেজিতে
সকল হরফ সকল সময়েই পূর্ণ অবয়বে লেখা হয় তাই ইংরেজিতে যুক্তবর্ণ তথা যুক্তধ্বনির
উচ্চারণের সঙ্গে লিখনের সাযুজ্য কম থাকে ইংরেজিতে কোনও বর্ণের উচ্চারণ লঘু হলেও
হরফ কিন্তু সেই পূর্ণ অবয়বেরই থাকে বাংলায় সেটা না হয়ে, লঘু উচ্চারিত ধ্বনির
বর্ণ/হরফ-- লঘু তথা ছোটো হয়, তাই বাংলা যুক্তবর্ণের নতুন লিখন পদ্ধতি ইংরেজির চেয়ে
যুক্তধ্বনি লেখার ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য হয়েছে
বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ সহজ, কারণ
প্রতিটি ব্যঞ্জনের সঙ্গে ‘অ’ ধ্বনির বর্ণটি অদৃশ্যভাবে লিপ্ত থাকে (inherent), নয়তো
ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ কঠিন বাংলায় এই লিপ্তি অপসারিত হয় যখন তা যুক্তবর্ণে একীভূত
হয়, যেমন-- স্ট, স্ক, ক্ল অর্থাৎ বাংলা বর্ণমালা সেমি এ্যালফাবেটিক চরিত্রের হয়েও তা নতুন উপায়ে যুক্তবর্ণ গঠনে-- লিপ্ত ‘অ’
বিয়োজন ব্যাপারটি স্পষ্ট করে তোলে কিন্তু ইংরেজিতে তা ঘটে না ইংরেজি হরফ সেখানেও
যথাযথ পূর্ণ অবয়বের থাকে, কারণ ইংরেজি হল পূর্ণ এ্যালফাবেটিক চরিত্রের বর্ণমালা,
তাই ইংরেজিতে বর্ণের সঙ্গে ‘অ’ ধ্বনি যোজনা তথা ‘অ’-লিপ্তি (inherence) ব্যাপারটি নেই
ইংরেজির মতো পূর্ণ এ্যালফাবেটিক চরিত্রের বর্ণমালাই কিন্তু উন্নত বর্ণমালা
বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের
নিখুঁত গল্পটির ডালপালা অর্ধেক ছড়াতেই ঋতু ভুঁইঞা
আর ঐন্দ্রিলা ধড়ফড়িয়ে দারুণ হৈ-হৈ করে উঠল
__ ওঃ, ব্যাস্ এবার থামো তো, বুঝেছি
বড্ডো পুরানো ঢঙের
কেমন এক গল্প যার নীতিবাক্য হল, “মূঢ় আড়ম্বর ও
আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ ক্ষতি”--
তাই না, এ্যাঁ? ০১২৩৪৫৬৭৮৯ ৳৫৬/-
৫৬/-
পরবর্তী পর্যায়ের ফন্ট হল থার্ড জেনারেশন বাংলা ফন্ট(Third Generation Bangla Font) এই ফন্টে সব কিছু সহজে লেখা যাবে তখন বাংলা বানান সহজ অনায়াস হবে তার কিছু উদাহরণ--
থার্ড জেনারেশন ফন্টগুলি ব্যবহার করে লিখতে হলে আগে ‘বাংলা
নতুন-বানান’ প্রকল্পটি পড়ে নিতে হবে তখন থার্ড জেনারেশন ফন্টগুলি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট
হবে, এবং তা বোঝা সহজ হবে, আর লেখায় তা অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে
সেদিন
নিঃসন্দেহে বাংলা লেখার সত্যিকারের মুক্তি ঘটবে আজ অবশ্য এমনি করে লেখা আমাদের অবাক
করে দেবে, কিন্তু ভবিষ্যতের মানুষ সেই ধরনের লেখায় লিখেই পড়াশুনা, লেখাপড়া করবে,
তাদের কাছে এটা কোনও অবাক কাণ্ড তো হবেই না, বরং তা অতি স্বাভাবিক বলে বিবেচিত
হবে তেমন সুখের দিন কবে আসবে, যেদিন দলা পাকনো, জোড়া লাগানো, একের ঘাড়ে অন্য হরফ
চাপানো হরফমণ্ড দিয়ে আর বাংলা লিখতে হবে না? সেই সুখের বাংলা লেখার দিনের অপেক্ষায়
আছি
তিনটি অংশে ভাগ করে দেখানো “বাংলা
নতুন-বানান” প্রকল্পটি দেখা যাবে নিচের লিংকে:
১)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-প্রথম অংশ
২)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-দ্বিতীয় অংশ
৩)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-তৃতীয় অংশ
৪)বাংলা নতুন-বানান Bangla Natun-Banan-চতুর্থ অংশ
http://banglamagna.blogspot.in/2014/08/blog-post.html
সেকেন্ড জেনারেশন
ফন্ট অহনলিপি-বাংলা১৪ ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:--
সেকেন্ড জেনারেশন
ফন্টের উন্নত সংস্করণ নীরবিন্দু-বাংলা১৪ ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:-
থার্ড জেনারেশন বাংলা ফন্টসমূহ আলয়-ফন্টগ্রুপ২০১৪
ফ্রি ডাউনলোড করার লিংক:--
ফোর্থ
জেনারেশন ফন্ট কথাটির অর্থ হবে, রোমান হরফের মতো বাংলা হরফ পরপর বসিয়ে লেখা
সেখানে কোনও যুক্তবর্ণ থাকবে না, কোনও স্বরচিহ্ন থাকবে না, ফলা থাকার তো কোনও ব্যাপারই
নেই রোমান লিপি ব্যবহার করে যখন আমরা লিখি তখন তো হরফ পরপর বসিয়ে গেলেই হল, বাংলা
লেখাও একদিন তেমন হবে
যেমন, আমরা
যদি লিখি-- “বসন, ভবন, তপন, সকল” ইত্যাদি এখানে সরল হরফ বসিয়ে লেখা গেছে, কিন্তু
সকল ক্ষেত্রে তো তা করা যাবে না, ‘বাসন’ লিখতে হলে একটা আ-কার চাই “বা”-এর সঙ্গে
তেমনি ‘ভুবন’ লিখতে একটা উ-কার চাই “ভু”-এর সঙ্গে কিন্তু ভবিষ্যতে বাংলা লেখার
ব্যবস্থা এমন হবে যে তাতে আর এসব চিহ্ন ইত্যাদি লাগবে না যদি লেখা হয়--
“আমআদএর দএশএ হবএ শএই ছএলএ কবএ,
সেদিন বাংলা লেখার সত্যিকারের মুক্তি ঘটবে
এখনও
এব্যাপারে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আছে তাছাড়া, নেটে যদি পিএনজি ফাইল করে
দেখাতে হয় তবে তা সেই সফ্টওয়্যারে সাপোর্ট দেয় না ফলে তা টেক্সটে লেখা গেলেও
নেটে দেখানো যাচ্ছে না চতুর্থ প্রজন্মের সেই ফন্ট তো কোন্ সুদূরে তাই তা কব্জা
করতে সময় লাগবে তখন মূল ফন্টের গঠনই আলাদা হবে, কিবোর্ড আলাদা হবে আর একটা কথা
হল, টেক্সটে এবং নেটে ফন্ট সাপোর্ট একইরকম নয়, কিছুটা আলাদা হয় তবে এখানে ব্যাপারটার
কিছুটা ধারণাটা দেওয়া গেল
এখানকার সকল ফন্টই সর্বান্তিক ইউনিকোড ফন্ট, আর তা ব্যবহার
করতে হবে অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট প্যাকেজভুক্ত কিবোর্ড দিয়ে অহনলিপি-বাংলা১৪ ফন্ট এবং
নীরবিন্দু-বাংলা১৪ ফন্ট দিয়ে চালু এবং নতুন-বানান সবই লেখা যাবে আলয় ফন্টগ্রুপ২০১৪
দিয়ে কেবল নতুন-বানান লেখা যাবে বিস্তারিত ব্যবহারবিধি দেখা যাবে “বিবরণ” BIBARAN ফাইল ও অন্যান্য নানা সহায়ক ফাইলে কোনও অসুবিধা দেখা দিলে
লেখকের সঙ্গে ইমেলে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানাই
এবিষয়ে পাঠকদের
সুচিন্তিত পরামর্শ আহ্বান করি অন্য কোনও কিছু বলার থাকলে তাও জানাতে আহ্বান
জানাই সকলের সহযোগে বাংলা ভাষা ও বানান প্রসারিত, প্রচারিত, বিকশিত হোক
মনোজকুমার দ. গিরিশ
manojkumardgirish@yahoo.com
২৭/০৮/২০১৪ বুধবার মণীশ পার্ক, কোলকাতা
------
ঋণ:
বিভিন্ন আকর গ্রন্থ, সাধারণ গ্রন্থ,
পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট ও ব্লগ থেকে নানাভাবে প্রভূত সহায়তা গ্রহণ করা
হয়েছে তাঁদের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই
No comments:
Post a Comment