Tuesday, July 7, 2009

বাংলাচর্চা






সবটা ঠিক ঠিক পড়তে হলে সংগে দেওয়া লিংক থেকে ফন্ট ফ্রি ডাউনলোড করে ‎নিতে



বিনামূল্যে সর্বান্তিক বাংলা ইউনিকোড ফন্ট সরাসরি ডাউনলোড করুন নীচের এই লিংকে ক্লিক করে৤


উন্নত বাংলা ফন্ট সর্বান্তিক ’অহনলিপি-বাংলা‘ ফন্টে পড়তে হবে৤ বিনামূল্যে ফন্ট ডাউনলোড লিংক:--
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip


ইউনিকোড ফন্ট ডাউনলোড করার লিংক উপরে দেওয়া হল৤
লিংকে ক্লিক করুন ফন্ট ডাউনলোড হবে৤ ‎

যুক্তবর্ণ সরল গঠনের৤ ‎
বুঝতে লিখতে পড়তে সহজ৤ ‎



বাংলাচর্চা

-------অতি দূর পূর্বদেশের এই জল জঙ্গল জলৌকা(জোঁক) সমাকীর্ণ অঞ্চলে বহিরাগত আর্যরা এসেছে অনেক পরে৤ তাদের প্রভাব এতদ্ অঞ্চলে তাই কমই৤ বাঙালিরা মিশ্র জাতি৤ বহু জাতি গোষ্ঠীর রক্ত এসে মিশেছে বাঙালি জাতির মধ্যে৤ তাই বিশুদ্ধতার গর্ব, যা নিয়ে অন্য অঞ্চলের লোকেরা মাতামাতি করে তা বাঙালির নেই৤ এই না-থাকাটাই বাঙালির পক্ষে মঙ্গল৤ তাই বাঙালি বহু রক্তের মিশ্রণে মেধাসম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে উঠেছে৤ নৃ-তাত্ত্বিক দিক থেকে বিচার করলে এই মিশ্রণ মেধার বিকাশে সহায়ক৤ বাঙালিরা তাই সহজ মেধা-সম্পন্ন জাতি৤ বাঙালির তাই সংকীর্ণতা নেই, সে তাই উদার এবং সহজে বিশ্বভারতীয় হয়ে উঠতে পেরেছে৤
------প্রধান তিনটি জনশ্রেণি, সময়ের ক্রমানুসারে প্রথমে(১)অস্ট্রিক, তারপরে(২)দ্রাবিড়, শেষে(৩)মঙ্গোল সভ্যতা দ্বারা পুষ্ট হয়েছে বাঙালি, পরে তার উপরে সবার শেষে এসে পড়েছে (৪)আর্য প্রভাব৤ তাই বাঙালির মধ্যে সকল এই শ্রেণিরই প্রভাব দেখা যায়৤ লৌকিক সংস্কৃতি, আচার-আচরণ থেকে বিহিত পূজা-প্রকরণ সব কিছুর মধ্যেই তাই এসবের প্রভাব ফুটে উঠতে দেখা যায়৤ এসব বাঙালির অপার ঐতিহ্য৤ কোন একটি বিশেষ গোষ্ঠী বা নরশ্রেণি এবং একটি বিশেষ সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতায় বাঙালি তাই আটকে নেই৤ বিশ্ব-মানবপুষ্টি ভারতীয় অন্য আর কোন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে এতখানি নেই৤ লক্ষণীয় বিষয় হল, তবু বাঙালি নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি ও আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল৤
------ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতিতে বাঙালির শিকড় তাই অনেক ব্যাপ্ত এবং গভীর৤ অনেক বিবর্তনের জোয়ার বয়ে গেছে তার এই নরম পলির উপর দিয়ে৤ তাই সব ঐতিহ্যের শিকড় তার মূলে বিধৃত৤ বৈষ্ণব পদাবলির অমিয় কবিকূল থেকে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, নজরুল, জসিম উদ্দিন, লালন, চারুশিল্পী যামিনী রায়, জয়নাল আবেদিন প্রমুখ এবং তিনটি নোবেল পুরস্কার(রবীন্দ্রনাথ, অমর্ত্য সেন, মুহাম্মদ ইউনুস), চলচ্চিত্রে স্পেশাল অস্কার পুরস্কার(সত্যজিৎ রায়, এবং ফ্রান্স থেকে ’লিজিয়ন অব অনার‘), সাংবাদিকতায় ম্যাগসাইসাই পুরস্কার(অমিতাভ চৌধুরি) তাই বাঙালির গৌরবের মুকুটে শোভা পায়৤

------সংস্কৃত একটি উন্নত ভাষা, বলা হয়েছে, ’Perfect language, for all time‘ এবং তার কাছে বাংলাভাষার ঋণ অপরিমেয়৤ কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমরা চিরকালই তার আঁচল ধরে চলব৤ বাংলাভাষীদের এবার একটু নিজের পায়ে, নিজের মেরুদণ্ডের উপর সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে৤ লতানে গাছ হয়ে আর কতকাল তার হামাগুড়ি দেওয়া চলবে? বাঙালিদের শৈশব যে আর কাটতেই চায় না৤
------ইংরেজি ভাষা ”ইংরেজি“ হয়েছে --অর্থাৎ উন্নত ও আন্তর্জাতিক হয়েছে ইংরেজদের প্রাচীন ল্যাটিন ঝোঁক ত্যাগ করার পরে৤ তার আগে ইংরেজি ছিল সাধারণ অনাদৃত গাঁইয়া ভাষা৤ ’দি নিউ ক্যাক্সটন এনসাইক্লোপিডিয়া‘তে বলা হয়েছে[বাংলায় সরল অনুবাদে] --অষ্টাদশ শতকে সরল সাধারণ ইংরেজিতে লেখার ব্যাপারটা ছিল আটপৌরে ঘরোয়া ব্যাপার৤ যেন পরচুলো না-পরে নিজস্ব চুলেই সাজগোজ করা[সে যুগে পরচুলা ছিল অভিজাতদের নিয়মিত পোষাকের অঙ্গ]৤ ঊনবিংশ শতকে দেশি-ইংরেজি শব্দ জনপ্রিয়তা ফিরে পেল, তবে তা সংগ্রাম না-করে হয়নি৤(সংস্করণ- ১৯৭৯, খণ্ড-৭, পৃঃ-২৬৪)৤ বাংলায় তো সেই সংগ্রামের যুগটাই চলছে৤ ইংরেজিতে সংগ্রাম হয়েছে ঊনবিংশ শতকে, বাংলায় হচ্ছে বিংশ শতকের শেষ ও একবিংশ শতকের শুরুতে৤ এ লড়াইয়ে জয়ী হতেই হবে, তবেই বাংলাভাষা সর্বত্র প্রতিষ্ঠা ও প্রচার পাবে৤ বাংলা হয়ে উঠবে জীবিকার ভাষা৤ বাংলা হয়ে উঠবে বাণিজ্যের ভাষা, বিনোদনের ভাষা, জীবনের ভাষা৤ বাংলা হয়ে উঠবে হৃদয়ের ভাষা, বুকের ভাষা৤ ভাষাই তো জীবন-জীবিকার মূল হাতিয়ার(অবশ্যই সেটা রাষ্ট্রনৈতিক পৃষ্ঠপোষণ সাপেক্ষ)৤


============================



সারা বছর একুশ কেন নয়?





সর্বান্তিক ’অহনলিপি-বাংলা‘ ফন্টে পড়তে হবে৤ বিনামূল্যে ফন্ট ডাউনলোড লিংক:--
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip



======================

সারা বছর একুশ কেন নয়?  

একুশ আমাদের কাছে যে তাৎপর্য বহন করে তাতে এ প্রশ্ন উঠে পড়ে, সারা বছর একুশ কেন নয়?একুশ কি কেবলই ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ? সে তো কবে ১৯৫২-তে ঘটে গেছে৤প্রতি বছর মহাসমারোহে আমরা তাকে স্মরণ করি শ্রদ্ধায় নত শিরে, তাই এ প্রশ্ন এসেই পড়ে সারা বছর একুশ কেন নয়? একদিন সেজেগুজে হবে কি একুশে? একুশ তো প্রাণের ধন, তাকে বছরে একদিন স্মরণ করলেই শেষ হবে?একুশ হোক আমাদের কাছে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ৤কাজ যা আছে যদি তা করতে পারি বাংলায় তবে কেন তা করবো অন্য ভাষায়? সে কি নিজেরে দেখাতে বড় যে, আমি বড়ই অনভ্যস্ত কাজ করতে বাংলাতে? এ তো মৃদু দাস হওয়া, তাকি এখনও মেনে নেব মনে প্রাণে? নামটা সবখানে সই করতে পারি বাংলাতে, ব্যাংক চেক হলেও মনে হয় কোনও বাধা নেই তাতে৤আমি আমার ব্যাংককে বলছি আমার টাকা দিতে বাংলায় লিখে, তাতে বাধা কি লিখতে বাংলাতে৤আমি সেটাই করতাম এককালে৤ পরে একজন শুভার্থী জানালেন, সকল জায়গাতে একই সই রাখা ভালো, তাই আবার ফিরে এলাম ইংরেজিতে, কারণ অফিসে বাংলা সই চলবে না, সেটা অফিসিয়ালি৤কিন্তু পরোপকার বেশি করতে হামলে পড়ে অ-বাংলা বলায় এত কেন উৎসাহ? আর সেটা যে ইংরেজি না হলে হবে কোন্ ভাষাতে, তা তো ”ওপেন সিক্রেট“! কী কাজ বলুন এত সুদাসত্বে? একটি বিরাট মাপের সংবাদপত্র একবার লিখলো তার সাধু গদ্যতে আমাদের খুবই দরকার ইংরেজিও বাংলার সাথে৤ আর সেটাই রীতি, যোগ্যতা বোঝাতে৤ যে ইংরেজিতে দক্ষ নয়, সে কলকে পায়না সভাতে৤কথাটা বেশ ঠিক, বাধা নেই কিছু মানতে৤তবে এটাই যে অনন্ত সত্য নয় সে কথাও পেরেছি জানতে৤চিনা বা জাপানি-- তারা জানে না ইংরেজি, তারা একটা ভাষাতেই দক্ষ কেবল, তাহলে কি তারা যোগ্যতা অর্জন করেনি জগৎসভাতে?আমরা কেন তা‘লে অযোগ্য হব?এটা অবশ্য এঁড়ে তর্কের ব্যাপার, কারণটা যে অন্য, সে কথা বললেই ল্যাঠা যেত মিটে৤বাংলাভাষার প্রসার প্রচার কিংবা জীবিকা যোগাবার ক্ষমতা কতটুকু আছে? আমরা নিজেরাই বাংলা বলিনা সব জায়গাতে৤নিজেদের ঘরোয়া কথাবার্তাতে অবধি ইংরেজি না বলে মনের ভাব প্রকাশ করায় তেমন যুৎ হয় না, ’একচুয়ালি‘ সব কথা পারি না বোঝাতে! এটা আমাদের ভাষার অক্ষমতা, নাকি আমাদের মৃদুদাস ভাব, অথবা সঠিক শিক্ষার অভাব, তা বিচার করে দেখতে হবে৤দেখেছি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক উপাচার্য কেমন বাংলা বলেন, ইংরেজিটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে চলেন৤তাঁরা একটু কম শিক্ষিত এমন তো মনে হয়নি কখনো! আসলে বাংলা না বলাটা আমাদের মনের ভয়ের প্রকাশ, যদি কেউ ভুলে মনে করে বসে, হেঁ হেঁ লোকটা কেমন কাঁচা ইংরেজিতে, অথবা তাকায় টেরচা চোখে লেখাপড়া কদ্দুর কে জানে, নইলে কেন সে ইংরেজি না বলে কেবলই বাংলা বলে? আরে ছোঃ, দেখে ছিলাম অধ্যাপক সে একজন...৤
ধীরে ধীরে, বন্ধু ধীরে, দিন পালটে গেছে, বাংলা ভাষাটাও আছে খুব চাপে(আপনি যেন জানেন না সে কথা!), বাংলাটা আজ তাই বলা খুবই চাই, নইলে রইলে পিছিয়ে জীবিকায়৤বিশ্বেস হল না বুঝি?তবে বলি সোজাসুজি, ভাষা হল জীবন-জীবিকার মূল হাতিয়ার, যদি তাকে হেলা করি, তবে আমরাও ধুলোচাপা পড়ি৤ তার সাথে একটা কথা রাখতে হবে মনে, প্রশাসনের শিরে যদি না বসানো হয় তাকে, তবে কেমন করে সে হাতিয়ার হবে? ভাষার হাতি হলেও, বাংলাভাষা পারবে না হাতিয়ার হতে৤বাংলার চাই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষণ সকল দলের(সব সব দলের),যেমন হয় হিন্দি বলয়ে৤ সেখানে দুই দল যতই চলুক বিপরীত দিকে, যত শত্রু হোক পরস্পরে,হিন্দি ভাষার প্রশ্নে দিক একটাই, এতে কোন কোনও ভুল নেই, আমাদের চাই তেমনি ঐক্য ভাষা নিয়ে৤ এখানেও যদি বাস করি বিপরীত মেরুতে তবে নোবেলে রবিতে কোনও কাজ হবেনা৤যখন মাতৃভাষার প্রশ্নেও ঐক্য না রবে, তখন সে জাতি ধীরে ধীরে ধ্বংস হবে৤আমরা চাই না নিজেদের বিলোপ, আমরা চাই না ভবিষ্যতে করতে বিলাপ, তাই সকলে আসুন ভাই, ভাষার ঐক্য গড়ি তাই, যতক্ষণ পারি সব কাজ বাংলাতে করি৤ কথাবার্তা,লেখালিখি, দেখাদেখি (সিনেমা, ভিডিয়ো, টিভি),শোনা, এসএমএস, কিংবা ই-মেল, নেটে সার্চ,নেট-সাইট কিংবা ব্লগ লেখা সবই হোক না বাংলাতে৤ এখন এসব মোটেও কঠিন কাজ নয়, কেবল একটু ইচ্ছে চাই৤মধুসূদন পারেন নি স্বপ্ন দেখতে ইংরেজিতে সেই খোদ ইংরেজির যুগে তাঁকে ফিরে আসতেই হল মায়ের কাছে(বড় শিশু ছিলেন!), তুমিও যতই সাজো ভিলেন,একদিন ফিরতে হবে, তবে তা হবে না উৎসবে, ফিরতে হবে কেঁদেকেটে৤ ইংরেজির অধ্যাপক যিনি, অথবা লেখেন ইংরেজিতে তাঁরা বাংলাতে অপোক্ত নন৤ যাঁদের অর্থনীতি দুর্বল, যাঁরা নির্ভরশীল পরের উপর, তাঁদেরই বেশি কপচাতে হয় ইংরেজি লাঙুল তুলে৤সারা বিশ্বে ইংরেজিভাষীরা যায় নানা কাজে, তারা দাপটে চালায় ইংরেজি সব খানে, এটা তাদের প্রবল ভিত্তির অর্থের দাপট, আর তারা ইংরেজি ছাড়া আর কিছুই যে শেখে না, দরকার হয়না বলে৤যদি আমরা সকলে গড়ে তুলি নিজেদের দুর্গ, তবে এককালে আমরাও সফল হবো৤সত্যি কথাটা শুনুন ইংরেজিও ছিল গেঁয়ো ভাষা এক কালে, আজ তারা কেন যে সবার উপরে, আমার অপরাধ না নিলে, সেটা একটু ভাবুন সকলে৤
------ফরাসি ভাষা এককালে দীর্ঘ দিন(৬০০ বছর) ইংলন্ডে রাজভাষা তথা সরকারি ভাষা ছিল৤ তারাই তো এখন বিশ্বের শিরে বসে৤ আমরা চূড়ায় উঠতে পারব না কেন? যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, তারা উঠে গেল আকাশে, আমরা তো সূর্যসেবিত আশীর্বাদপুষ্ট৤ আমরা অবশ্যই আকাশের সূর্যের কাছে পৌঁছাব৤

------১৯শে(উনিশে)-ও তো সারা বছর হওয়া উচিত৤ নিশ্চয়ই৤ একুশে কথাটির অন্তরেই তা ধরা আছে৤ ঊনিশ-একুশ মিলিয়েই তো আমাদের বাংলা জীবন চর্যা৤

=============================